স্মরণঃ চি ত্র শি ল্পী অঁ রি মা তি স
“মাতিস এবং আমি যা করেছি তার সবকিছুই তুমি পাশাপাশি রেখে দেখতে পারো… আমার মতো করে কেউ আর এতোটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মাতিসের ছবি দেখে নি; আমার ছবিগুলিও তার মতো করে আর কেউ দেখে নি।”
[ পাবলো পিকাসো ]
বাবলু ভট্টাচার্য : মাতিস এর সাথে পিকাসোর যখন প্রথম দেখা হয়, প্যারিসে তখন মাতিসের বয়স ৩৭ আর পিকাসোর ২৫। সেটা ১৯০৬ বা ১৯০৭ সালের কথা। মাতিস প্যারিসের সেরা আর্টিস্ট আর পিকাসো নতুন শিল্পী। তারা একসাথে ষ্টুডিও শেয়ার করতে শুরু করেন।
মাতিস-এর জন্ম ১৮৬৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ফ্রান্সে। তিনি আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং আইন প্রশাসক হিসাবে চাকরি শুরু করেন। যখন তাঁর বয়স ২১ বছর তখন ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ছবি আঁকতে শুরু করেন। সেটা ১৮৯১ সালের কথা। এর পরের বছর তিনি চাকরি ছাড়েন এবং আঁকাআঁকির শিক্ষা নিতে শুরু করেন। ১৯০৬ সালের দিকে তিনি তাঁর নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে আঁকতে শুরু করেন।
তাঁর তুলির আঁচড় শিল্পের জগতে নব উদ্যম তৈরিতে সহায়তা করে। শিল্পকে ভিন্ন চোখে দেখতে উদ্ভূত করে। কম্পোজিশন, পরিপ্রেক্ষিত রঙ প্রলেপন থেকে শুরু করে শিল্পের সকল বাক্যের শব্দে সংযুক্তি ও ভিন্নতা আনয়ন করেন এই শিল্পী। যে জিনিসটা মাতিসের শিল্পকর্মকে বিশেষভাবে মূল্যবান করেছে সেটা হচ্ছে অনুভূতির সততা। রঙের কোন বুদ্ধি-বৃত্তিজাত যান্ত্রিক ব্যবহারে তিনি বিশ্বাসী নন। অনুভূতি পরিবর্তনশীল, তার উপর ভিত্তি করে রঙের বিন্যাসও পাল্টে যায়।
শিল্পী মাতিস আজীবন ফব ধারায় কাজ করেছেন। যার ফলে ফবিস্ট শিল্পী হিসেবে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি আনুপাতিক মাপের তোয়াক্কা না করে মনমতো গড়ন তৈরি করতেন। সরলতা পবিত্রতা এবং পরিচ্ছন্নতা নিয়েই মাতিসের শিল্প। সারল্য ভাব আনয়নে শিশুসুলভ দৃষ্টিভঙ্গির সংযোজন লক্ষণীয়।
শিল্পী মাতিস তাঁর শিল্পে কতগুলো ভারি রঙের ফর্ম দ্বারা উপস্থাপনে নক্সধর্মী পরিবেশ তৈরি করে দ্বিমাত্রিক রঙ প্রলেপনে কন্ট্যুর লাইনে ত্রিমাত্রিকভাব ফুটিয়ে তুলেছেন। কাছের বস্তু থেকে দূরের বস্তুতে হালকা রঙের আমেজকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন। ব্যাক গ্রাউন্ড এবং সামনের বস্তুতে একই রঙ ব্যবহারের চরম সাহসিকতা দেখা যায় তাঁর কাজে।
শিল্পের অঙ্ককে গদবাঁধা সূত্র থেকে মুক্ত করে স্বেচ্ছাচারী মুক্ত ভাবনাকে ইচ্ছামতো রঙের পাত্রে ঢেলে শিল্পকে নতুনভাবে ভাবতে ও উপস্থাপন করতে শেখালেন ফবিস্ট শিল্পীরা। আর মাতিসের হাত ধরেই এই ভাবনার জগতে চলতে থাকে ফবিজম ধারা বহু আলোচনা-সমালোচনাকে সঙ্গী করে।
হেনরি মাতিস তাঁর দীর্ঘ শিল্পী জীবনে বিভিন্ন সময়ে চিত্রকলা থেকে ড্রইং, ভাস্কর্য আর অন্যান্য শিল্প-মাধ্যমে বিচরণ করেছেন। এক পর্যায়ে তুলির বদলে হাতে তুলে নিয়েছেন কাঁচি। পরিণত বয়সে অসংখ্য পেপার কাটিং করেছেন। বেশিরভাগ কাজ করেছেন বড় আকারে। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে মাতিসের এ রকম বহু শিল্পকর্ম।
অঁরি মাতিস ১৯৫৪ সালের আজকের দিনে (৩ নভেম্বর) ফ্রান্সের নিস শহরে মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment