Press "Enter" to skip to content

কিংবদন্তির মতো জনপ্রিয় সব গল্পের স্রষ্টা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। বাংলা শিশুসাহিত্যের অগ্রপথিক…..।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

রাজার ঘরে যে ধন আছে
টুনির ঘরেও সে ধন আছে!

বড় মজা বড় মজা
রাজা খেলেন ব্যাঙ ভাজা!

এক টুনিতে টুনটুনাল
সাত রানির নাক কাটাল!

নাক-কাটা রাজা রে
দেখ তো কেমন সাজা রে!

বাবলু ভট্টাচার্য : এ সেই ‘টুনটুনি আর রাজার কথা’ বইয়ের ছড়া। যে টুনটুনি রাজার ভাণ্ডার থেকে একটা টাকা নিয়েছিল। আর সেই টাকা উদ্ধার করতে গিয়ে রাজা যে কী জব্দটাই না হয়েছিল!

কিংবদন্তির মতো জনপ্রিয় সব গল্পের স্রষ্টা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। বাংলা শিশুসাহিত্যের অগ্রপথিক। তাঁর ‘টুনটুনির গল্প’, ‘বাঘের গল্প’, ‘চড়ুইয়ের গল্প’- এখনো সমান জনপ্রিয়।

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর বাবা শ্যামসুন্দর রায়চৌধুরী। মা জয়তারা রায়চৌধুরী। মানে, তাঁদের পারিবারিক পদবী ছিলো ‘রায়চৌধুরী’।

তবে উপেন্দ্রকিশোরের বিখ্যাত পুত্র আর পৌত্র, মানে সুকুমার আর নাতি সত্যজিৎ কিন্তু পুরো পদবী ব্যবহার করেননি। তাঁরা কেবল ‘রায়’ পদবী ব্যবহার করতেন। অন্য ক্ষেত্র বাদ দিলেও, কেবল শিশুসাহিত্যের ক্ষেত্রেও তাঁরা কোনো অংশেই উপেন্দ্রকিশোরের চেয়ে কম যাননি।

উপেন্দ্রকিশোরের ছোটবেলায় নাম ছিল কামদারঞ্জন রায়। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আরম্ভ হয় ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে। স্কুলে তিনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। বিশেষত চিত্রকর মানে ছবি আর বাঁশি-বাজিয়ে বেহালা-বাজিয়ে হিসেবে। সবার ধারণা ছিল, এই ছেলে এন্ট্রান্স পাসই করতে পারবে না। কিন্তু তিনি ঠিকই এন্ট্রান্স পাস করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিলেন।

তখন হরিকিশোর আর শ্যামসুন্দর পরামর্শ করে উপেন্দ্রকিশোরকে কলকাতায় পাঠিয়ে দিলেন। ভর্তি করিয়ে দিলেন মেট্রোপলিটন কলেজে। পরে এই কলেজেরই নাম বদলে হয়েছে বিদ্যাসাগর কলেজ। এখান থেকেই তিনি বিএ পাস করেন ১৮৮৪ সালে।

পরের বছর, ১৮৮৫ সালে, বিয়ে করলেন উপেন্দ্রকিশোর। কনের নাম বিধুমুখী। বিয়ের পরে উঠলেন ১৩ নম্বর কর্নওয়ালিস স্ট্রিটের বাড়িতে। তখন তিনি ছবি এঁকে আর ফটোগ্রাফি করে আয়-রোজগার করতেন। উপেন্দ্রকিশোর-বিধুমুখীর ছিল দুই ছেলে আর তিন মেয়ে- সুখলতা, সুকুমার, পূণ্যলতা, সুবিনয় ও শান্তিলতা।

এই সুকুমারই আরেক কিংবদন্তি শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায়। আর তাঁরই ছেলে সত্যজিত রায়- ‘ফেলুদা’ আর ‘শঙ্কু’র স্রষ্টা। এই সত্যজিতই পরে ঠাকুরদাদা উপেন্দ্রকিশোরের গল্প ‘গুপী গাইন ও বাঘা বাইন’-এর কাহিনি অবলম্বনে তৈরি করেন সিনেমা ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’।

মাঝে অনেকবার ঠিকানা বদলে উপেন্দ্রকিশোর শেষমেশ ওঠেন ২২ নম্বর সুকিয়া স্ট্রিটের বাড়িতে। এই বাড়িটি কিন্তু বেশ বিখ্যাত। কারণ, এই বাড়ি থেকেই ১৯১৩ সালে বিখ্যাত ‘সন্দেশ’ পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয় উপেন্দ্রকিশোরের সম্পাদনায়।

১৯১৪ সালে আবার বাড়ি বদলালেন উপেন্দ্রকিশোর, এবার উঠলেন ১০০ নম্বর গড়পার রোডের বাড়িতে। এই বাড়িটা শুধু যে তাঁর নিজস্ব বাড়ি ছিল তাই না, এই বাড়ির নকশাও তিনি নিজেই করেছিলেন। নিজের নকশা করা এই বাড়িটিতে উঠতে না-উঠতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। কলকাতার বাঘা-বাঘা সব ডাক্তারদের দেখানো হলো, লাভ হলো না কিছুই।

উপেন্দ্রকিশোর কিন্তু তাঁর লেখক- জীবনের শুরুতে ঠিক ছোটদের জন্য লিখতেন না। প্রথম দিকে তিনি লিখেছিলেন অনেক কিছুই, কিন্তু ঠিক যেন নিজের মনের মতো লিখতে পারছিলেন না। জীব-জন্তু কীট-পতঙ্গ নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন, ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন, এমনকি ‘সখা’ নামের পত্রিকায় একটা উপন্যাসও লিখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু ওই যাকে বলে, নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

শেষ পর্যন্ত নিজেকে খুঁজে পেলেন, যখন ছোটদের জন্য লিখতে শুরু করলেন। তখন যত শিশু-কিশোর পত্রিকা বের হতো, সবগুলোতেই লিখেছিলেন তিনি; লিখেছিলেন সখা, মুকুল, সন্দেশ-এ। লিখেছেন গল্প, নাটক, রূপকথা, উপকথা, বিজ্ঞান- প্রবন্ধ, ছড়া- স-অ-ব।

শুধু যে লিখতেন, তাই নয়, আঁকতেনও। স্কুলে থাকতেই তিনি আঁকিয়ে হিসেবে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। পরে ছোটদের জন্য লেখার পাশাপাশি, সে সব লেখার জন্য ছবিও নিজেই আঁকতে শুরু করেন তিনি। তাঁর প্রায় সব বইয়ের প্রচ্ছদ তো বটেই, ভেতরের ছবিগুলোও তিনি নিজেই এঁকেছিলেন।

তাঁর বইগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত ‘ছেলেদের রামায়ণ’ আর ‘টুনটুনির বই’। এই বই দুটি জীবদ্দশাতেই তাঁকে ভীষণ জনপ্রিয় করে তোলে। জীবদ্দশাতে ছোটদের জন্য তিনি ৬টি বই বের করেন। মৃত্যুর পরে তাঁর অগ্রন্থিত রচনা নিয়ে আরও দুটি বই প্রকাশিত হয়। পরে তো তাঁর লেখা নিয়ে আরও অসংখ্য বই প্রকাশিত হয়েছে।

১৯১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর সকাল ৮টায় মাত্র তিপ্পান্ন বছর বয়সে মারা গেলেন বাংলা শিশুসাহিত্যের অবিস্মরণীয় অগ্রপথিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী।

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ১৮৬৩ সালের আজকের দিনে (১২ মে) বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার মশুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

More from BooksMore posts in Books »
More from InternationalMore posts in International »
More from Writer/ LiteratureMore posts in Writer/ Literature »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.