সুজিৎ চট্টরাজ: কলকাতা, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২। বাঙালির খাদ্যপ্রীতির এক দীর্ঘ ইতিহাস বাঙালিকে গর্বিত করে। ১৪০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চন্ডীমঙ্গল, মনসামঙ্গল বা পদ্মপুরাণে বাঙালির খাদ্য সংস্কৃতির বহু তথ্য জমা হয়ে আছে। বিদেশি পরিব্রাজক ইবন বতুতা, হিউয়েন সাঙ মানুচি এঁরাও বাঙালির খাদ্য সংস্কৃতির সুদীর্ঘ বর্ণনা দিয়ে গেছেন বাঙালির প্রিয় খাদ্য ছিল হরিণ।
জানা গেছে কুমিরের মাংসও ছিল বাঙালির অতি প্রিয় খাদ্য। লেখক ধৃতিকান্ত লাহিড়ি বাদুড়ের মাংস যে কত উপাদেয় সেকথাও লিখে গেছেন। বাদুড় শুধু ফল খায় ,সুতরাং ঘেন্নার কিছুই নেই, সেকথাও লেখক বলেছেন। তেল বা বনস্পতি ( তখনও আবিষ্কার হয়নি) বাঙালি ব্যবহার করতো না রান্নায়। ঘি ছিল একমাত্র রান্নার বস্তু। পরে তিল থেকে তেল তৈরির পদ্ধতি শিখেছিল বাঙালি। তেল শব্দের উৎপত্তিও কিন্তু এই তিল থেকেই।
পুজো এলে বাঙালির ভোজন ভজনা যেন দশগুণ বেড়ে যায়। সেকথা খেয়াল রেখেই বেশ কিছু বছর ধরে বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁ ভুরিভোজের আয়োজন করে। পিছিয়ে নেই সল্টলেক সিটি সেন্টার সংলগ্ন গোল্ডেন টিউলিপ হোটেল। গোল্ডেন টিউলিপ হোটেলের জেনেরাল ম্যানেজার সুমন্ত মাইতি জানালেন, দুবছর করোনায় গৃহবন্দী থেকে মানুষ এখন মুক্তির স্বাদ পেয়েছে। মনের সঙ্গে দেহের যেমন সম্পর্ক আছে, তেমন মনের সঙ্গে খাদ্যেরও এক বিশেষ সম্পর্ক আছে। চোব্য চোষ্য লেহ্য পেয় এই চার রসের আরকে মন ভিজলেই তো চরম প্রাপ্তি। শারদীয় উৎসবে সামিল হয়ে গোল্ডেন টিউলিপ ২ অক্টোবর থেকে ৪ অক্টোবর আয়োজন করেছে এক ব্যাপক ভুরিভোজের আসর। হোটেলের তিন তিনটি রেস্তোরাঁয় থাকছে বিশেষ আয়োজন। তিনতলায় অ্যান্টিপাস্তিতে থাকছে সাবেকি বাঙালি খাদ্যের সঙ্গে কিছু ভারতীয় খাবারের যুগলবন্দী। মাল্টি ক্যুইজিন রেস্তোরাঁ নোয়ার এও থাকছে এলাহি আয়োজন।
জালাপেনো চিজ ফ্রিটার্স, ক্রিসপি চিজি চিকেন ফিলে, পিজা পাস্তা, বেকডডিশ তো থাকছেই সঙ্গে তন্দুরি কাবাবের মেলা আয়োজন। হোটেলের ৮ তলায় খোলা আকাশের নিচে স্কাই লাউঞ্জে পাবেন নিজের পছন্দের খাবার, মকটেল ও হুক্কা বিভিন্ন ফ্লেবারের।
জন প্রতি মাত্র ৯৯৯/- টাকায় ব্যুফেতে থাকছে দুপুর ও রাতের খাবারের দীর্ঘ তালিকা। বেলা ১২ টা থেকে সাড়ে ৩ টে ও রাতে ৭ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত আপনাদের আপ্যায়নে হাজির। বাঙালি খানায় সাবেকি আলু পোস্ত থেকে পোলাও রাজনন্দিনী, কড়াইশুঁড়ির কচুরি থেকে নারকেল ছোলার ডাল থাকছে। থাকছে পুজোর চারদিনে ভিন্ন ভিন্ন মেনু। কমলা লেবুর সরবত, তরমুজের শরবত তো আছেই। আছে আম পান্না। কাঁচা আমের চপ, মাছের কাটলেট, হাঁসের ডিমের ডেভিল, চিংড়ি পুরের কাঁকরোল, মৌরলা মাছের পেঁয়াজি।
বিভিন্ন শাক ভাজা, আলু মুরগির কষা, সর্ষে পাবদা, দই মুরগি, শিলে বাটা চিংড়ি ভাপা, চিকেন ডাকবাংলো, চিতল মুইঠঠা তো থাকছেই। এবার বিশেষ ভাবে থাকছে ইলিশ ও চিংড়ি মাছের বিভিন্ন পদ । গোটা চিকেন রোস্ট ও মার্টন রাঙ্। থাকছে মিক্সড ফ্রুট চাটনি, ডিসকো পাঁপড়। যা আপনার মেজাজকে বানিয়ে তুলবে মোঘল রাজাদের মত। সঙ্গে কিছু দেশি বিদেশি ফিউশন খাবারও থাকবে আজকের প্রজন্মের চাহিদা মেটাতে ।
শেষ পাতে মধুরেন সমাপয়েত। তালিকায় আছে বেকড রসগোল্লা, গুলাব জামুন, ভাপা সন্দেশ, মিষ্টি দই, ম্যাংগো সন্দেশ, আমৃতি, ছানার বড়া, আমসত্ত্ব সন্দেশ, বেকড বোঁদে, কাঁচাগোল্লা ও আইসক্রিম উইথ চকলেট সস। যাঁরা খাদ্য সংস্কৃতিতে আন্তর্জাতিকতাবাদে বিশ্বাসী তাঁদের জন্যও আছে বিশাল আয়োজন।
পার্সলে ফিস, ব্রুন্ট গার্লিক নুডলস, সিঙ্গাপুর নুডলস, প্যান ফ্রায়েড চিলি চিকেন, চিলি গার্লিক নুডলস ও চিকেন ইন চিলি সস। আর যা আছে, সমজদারো কে লিয়ে ইশারাই কাফি। রসেবশে উৎসব উপভোগেরও বিপুল আয়োজন। এবারের পুজোয় প্যান্ডেল হপিং এর সঙ্গে গোল্ডেন টিউলিপকে যদি পেট পুজোর সাথী না করেন পস্তাতে যে হবে হলফ করে বলা যেতে পারে।
Be First to Comment