Press "Enter" to skip to content

শিল্পজগতের প্রবাদপুরুষ স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর আজ শুভ জন্মদিন……..

Spread the love

বাবলু ভট্টাচার্য, ঢাকাঃ দীর্ঘ জীবনে যিনি ছবির মাধ্যমে শিল্পরসিক বাঙালিকে বাংলার রূপ, রস, গন্ধ দেখিয়েছেন তিনি শিল্পজগতের প্রবাদপুরুষ স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী– যিনি আমাদের দৃষ্টি রুচিটাই ব্যাপকভাবে বদলে দিয়েছেন তাঁর সুক্ষ্ম তুলির আঁচড়ে।

তেলরং, জলরং, রেশম ছাপ, কালি-কলম, মোমরং ইত্যাদি মাধ্যমে তিনি কাজ করেছেন। তাঁর ছবিতে রয়েছে জ্যামিতিক প্রবণতা। আসলে নকশা। এর কারণ এই বাংলায় মানুষ ছবি আঁকতে শিখেছে নারীর কাছে। নারী যখন কাঁথা সেলাই করতেন, নানা নকশার পিঠা বানাতেন, মাটি গুলিয়ে উঠোন আর ভিটে লেপতেন- সেই হাতের টান মানবিকী মূর্ছনায় পুরুষের মনে ছবি আঁকার প্রেরণা জুগিয়েছে। গতি দিয়েছে তুলির রেখায়।ক্যানভাসের পটভূমিতে কাইয়ুম চৌধুরীর মোটাদাগের নকশা সে কথাই বলে।

তাঁর বর্ণোজ্জ্বল রঙ মনে করিয়ে দেয় বাংলাদেশের ষড়ঋতুর কথা। লাল, সবুজ আর নীল এই তিনটি রঙের প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার আমাদের জাতীয়তাবাদী করে তোলে, প্রেমিক হতে শেখায়। এই বর্ণভঙ্গী মাতৃভূমির প্রতি তাঁর অঙ্গীকার। তিনি যেন ছবি আঁকেননি, আজন্ম বাংলাদেশকে এঁকেছেন। তাঁর চিত্ররীতিতে এ দেশের লোকশিল্পসুলভ পুতুল, পাখা, শীতলপাটি, কাঁথা, হাঁড়ি ইত্যাদির পৌনঃপুনিক ব্যবহার আমাদের শৈশব মনে করিয়ে দেয়। প্রত্যেকটা শিল্পের প্রয়োজন কিছু অস্পষ্টতা, কিছুটা আড়াল। স্পষ্ট আর নগদ বোধগম্যতা শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই বলে একজন কবিকে তার বিমূর্ত কবিতার অর্থ কী এই প্রশ্ন করাই যায়, কেন নয়! একজন চিত্রশিল্পীকে জিজ্ঞেস করা যায় তাঁর শিল্পের অর্থ কী। কিন্তু এটা শিল্পের উদ্দেশ্যকে আহত করে। শিল্পের অর্থ কেবল আত্ম-সন্ধানের মাধ্যমেই সম্ভব। কিন্তু মানুষ নিজের কাছে কখনও যেতে চায় না। এই ঘরে ওই ঘরে অন্য মানুষের কাছে অর্থ খুঁজে বেড়ায়। কাইয়ুম চৌধুরীর ছবি দেখে দর্শকের যেন নিজের সঙ্গেই দেখা হতো, যে মানুষটাকে সে বহুদিন থেকে খুঁজেছে! কবিতা পড়বো এই ভেবে কবিতা পাওয়া যায় না। একটা ছবিও তাই, আমরা যা চোখের সামনে দেখি ততটুকুই।

পুরো জিনিসটাই যখন আমার চোখের সামনে, তখন এর বাইরে তা আর কিছু নয়। কাইয়ুম চৌধুরীর ছবিতে গোটা বাংলাদেশকে পাওয়া যায়, শৈশব আর ভুলে যাওয়া স্মৃতিকে পাওয়া যায়। এমন নির্ভুল বাংলাদেশ খুব কম মানুষই ভাবতে পেরেছেন। প্রত্যেকটা শিল্পই মূলত শিল্পী নিজে। আমরা যে এতো প্রশংসা করি, কোন শিল্পই নিজে থেকে সুন্দর নয়।আসলে জীবন সুন্দর, বাংলাদেশ সুন্দর, এমন করে ভাবতে পারা মানুষ সুন্দর। কাইয়ুম চৌধুরীর আঙুলের রঙ ও রেখা এভাবে মুহুর্মুহু জীবনের চাষ করে। টানে, ডোবায়। কাইয়ুম চৌধুরীর ছবির মূল উপকরণ হচ্ছে তার কল্পনা। আর সে কল্পনাকে তিনি রেখা ও রঙ দিয়ে মূর্ত করেন।

তার ছবি দেখে মনে হয় এটা আমারই গ্রাম, আমার গ্রামের পাশে বয়ে চলা নদী। মাঠের ঘাস, ওইতো! ওইতো! দৌড়ে যাওয়া মেঘ, নীল আকাশ। মেয়েটি ঠিক আমার গ্রামের কারও মেয়ে হবে। দর্শককে এমনটা ভাবতে দেওয়া মেধাবী মানুষের কাজ। এখনও মনে হয়, এইতো কাইয়ুম চৌধুরীর পাঁচটি আঙ্গুল পাঁচটি বলবান ঘোড়ার মতো ক্যানভাসে দৌঁড়ে বেড়াচ্ছে! ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর কাইয়ুম চৌধুরী মারা যান। কাইয়ুম চৌধুরী ১৯৩২ সালের আজকের দিনে (৯ মার্চ) ফেনীতে জন্মগ্রহণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *