Press "Enter" to skip to content

এবারের পুজোর ফ্যাশন কি খোলামেলা পোশাক ?…..

Spread the love

**বিশেষজ্ঞদের মতে এবার পুজোর ট্রেন্ড হলো স্ট্রেট বক্সি শেপ পোশাক**

সঙ্গীতা চৌধুরী: কলকাতা, ১২ অক্টোবর ২০২১। দেখতে দেখতে পুজো চলে এলো, আজ মহা সপ্তমী । সেই কবে থেকেই মেয়েরা পুজোর এই ক’টা দিন কি ভাবে নিজেদের সাজাবে তারজন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত থাকেন। তাই অনেক আগে থেকেই পুজোর সময় নিজেকে অনন্যা করে তোলার প্রয়াস চালিয়ে যান। কিন্তু গোল বাঁধে এই পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে। অনেকেই ঠিক করে উঠতে পারেন না যে কি ধরনের পোশাক পরিধান করবেন ।

তাই কেউ কেউ নিজেদের খুব আধুনিকা দেখাবার জন্য হয়তো পুজোর সময়ই খোলামেলা পোশাক  বেছে নেন। আবার কেউ হয়তো তাকে বেমানান লাগছে এমন একটা পোশাক পরে ফেলেন। শুধু পুজোর ক্ষেত্রেই নয়, যে কোন ক্ষেত্রেই আমাদের পোশাক নির্বাচন একটু সচেতন ভাবে করতে হবে ।

এ ব্যাপারে ফ্যাশন ডিজাইনার এবং বিভিন্ন ফ্যাশন ইনস্টিটিউটের শিক্ষক প্রবাল মন্ডল তাঁর মূল্যবান মতামত প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, “এক জন ডিজাইনার হিসেবে প্রথমেই বলবো যে, আমি যে ধরনের কাজ করি তাতে আমার ডিজাইনে পাশ্চাত্যের প্রভাব থাকে। তবে আমি ভারতের আবহাওয়া ও এখানকার মহিলাদের শরীরের আকৃতির কথা চিন্তা করে , তাদের কি ভালো লাগতে পারে বা তারা কি পছন্দ করেন তার ওপরই পোশাক তৈরি করি। তাই আমার তৈরি পোশাকে যেমন আধুনিক পাশ্চাত্যের ছোঁয়া থাকে তেমনি অন্যদিকে ট্রাডিশনাল ছাপও থাকে ।

ট্রাডিশনাল ছাপ বলতে আমাদের আবহাওয়ায় যে সব কাপড় উপযোগী যেমন – গরমে সুতির ও শীতে হালকা সিল্ক ,গরমে খাদিরও ব্যবহার করি । তাছাড়া ঢাকাই জামদানি, কাঁথা স্টিচ, বাংলার ট্রাডিশনাল ফ্যাব্রিক ,ওড়িশার  ট্রাডিশনাল ফ্যাব্রিক ও অন্যান্য সব রাজ্যের ট্রাডিশনাল ফ্যাব্রিক ব্যবহার হয় আমার “নকশাকারী” ব্যান্ড এ । তবে সব কিছুর মধ্যেই একটা পাশ্চাত্যের এবং সমসাময়িক ছোঁয়া থাকে ।

আমাদের এখানকার ফ্যাশানের মূল উৎস হলো বলিউড। মহিলা- পুরুষ নির্বিশেষে বলিউডকে অনুসরণ করার চেষ্টা করে । বলিউডে করিনা কাপুর বা দীপিকা পাড়ুকোন বা অন্যান্য প্রথম সারির অভিনেত্রীরা কি ধরনের পোশাক পড়ছে, সে ধরনের পোশাকের চাহিদাই বেড়ে যায় । সবাই তখন অন্ধ অনুসরণ করতে থাকে।  বিদেশি ফ্যাশন শোগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে ওয়েস্টার্ন ড্রেস মানেই কিন্তু ছোটখাটো এবং খোলামেলা পোশাক নয়।

২০২০ -২০২১ – এর ওয়েস্টার্ন ফ্যাশনের ট্রেন্ড বুঝতে হলে আন্তর্জাতিক ফ্যাশন উইকগুলো ফলো করলে দেখা যায় যে, হাল ফ্যাশন হলো স্ট্রেট বক্সি শেপ পোশাক । আর তার সঙ্গে এক্সটেনডেট সোল্ডার । আসলে এতে কাঁধ চওড়া দেখায়। তাতে স্ট্রং উওম্যান লুক প্রকাশ পায়। সারা বিশ্বেই স্ট্রং উওম্যান লুক এখন মহিলাদের বিশেষ পছন্দ ।

একটা সময় মহিলাদের ফিগার বোঝানোর জন্য সে ভাবে পোশাকের ডিজাইন হতো। কিন্তু বর্তমান ট্রেন্ড হলো শেপ ছাড়া স্ট্রেট পোশাক । ফ্যাশন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তিত হয় । এই পরিবর্তনের ঢেউয়ে কখনো মহিলারা খুব টাইট পোশাক পছন্দ করেন আবার কখনো ঢিলেঢালা । ওয়েস্টার্ন ফ্যাশন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই এখানে সব ডিজাইনাররা কাজ করেন। আমিও করি, তবে ওয়েস্টার্ন ফ্যাশনের সঙ্গে ভারতীয় ট্রাডিশনের একটা মেলবন্ধন ঘটানোর চেষ্টা করি , আর এই কাজটা করতে গিয়ে কখনোই আমাকে ছোটখাটো বা খোলামেলা পোশাক বানাতে হয় নি। আমার অনেক ক্লায়েন্ট আছেন যারা খোলামেলা পোশাক পরেন, তারাও কিন্তু আমার পোশাক খুব পছন্দ করেন ।

তবে এই খোলামেলা পোশাক যে সবাই খুব ভালোবেসে পড়ে তা নয়, অনেকেই আছেন যারা বন্ধু -বান্ধব বা সহকর্মীদের চোখে নিজেকে আধুনিকা দেখানোর জন্য পড়তে বাধ্য হন। আমাদের এই ফাস্ট লাইফে মানুষের সময় বড়ই কম, কাউকে ফোন করারও সময় নেই । তাই আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় কে কি করছে সেই ছবি পোস্ট করে বন্ধুদের জানায়। এই ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট চলতে থাকে, আর এটা করতে গিয়ে বন্ধুদের বা কলিগদের খোলামেলা পোশাকের ছবি দেখে তার মনে হয় সবাই যেটা করছে সেটা তাকেও করতে হবে ।

ট্রেন্ড ফলো করতে গিয়ে দেখা যায় অনেকেই নিজেকে কি মানাচ্ছে তা চিন্তা না করেই পোশাক পরে ফেলেন । আবার অনেকে স্থান বা অনুষ্ঠান বিচার না করেই পোশাক পরিধান করেন । বলিউডের নায়িকারা যে পোশাক পরে ক্যামেরার সামনে থাকেন, সে পোশাকে নিশ্চয়ই কোন জনসমাগমে আসেন না । মহিলাদের মধ্যে কখন, কোথায় এবং কেন – কোন পোশাক   পরছেন এই বোধ হওয়াটা খুবই জরুরি । আমি আমার ক্লায়েন্টদেরও সেভাবেই গাইড করার চেষ্টা করি। শেষে আমি সমস্ত নারীর ইচ্ছেকে সম্মান করে একথাই বলবো যে, পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সব দিক মাথায় রেখে একটু সচেতন থাকার চেষ্টা করবেন।”

আজকাল মেয়েদের এই খোলামেলা পোশাক পরার প্রবণতার কারন অনুসন্ধানে মনোবিদ ও শিক্ষিকা সোমদত্তা ব্যানার্জির শরণাপন্ন হলে তিনি জানালেন, ” মেয়েদের  খোলামেলা পোশাকে আজকাল খুবই দেখা যাচ্ছে , এখন এটাই একটা ট্রেন্ড হয়ে গেছে । একজন মনোবিদ হিসেবে এ ব্যাপারে আমার মনে হয়, যে বাচ্চারা কিন্তু সবসময় সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার চেষ্টা করে ।

শুধু বাচ্চারা কেন যে কোন মানুষই অন্যের মনোযোগ চায় যেমন – সবাই আমাকে দেখবে, ভালো বলবে, প্রশংসা করবে। এই প্রশংসাটা কিন্তু সবাই চায়। একটা বিশেষ বয়সে এই প্রশংসা পাবার ইচ্ছেটা প্রবল হয়ে ওঠে। কিশোরী বা সদ্য তরুণীরা অতিরিক্ত বেশি মনোযোগ চায় অন্যদের থেকে । এটার কারন হলো যদি আমি মনোযোগ পাই তাহলে আমি খুশি হবো এবং আমার তাতে ভালো লাগবে ।

যেমন, সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে প্রচুর বন্ধু লাইক দিলো বা কমেন্ট করলো সেটা আমরা প্রত্যেকেই পছন্দ করি । আরো একটা ব্যাপার হলো রিজেক্টসনের ভয়। আমি যদি এই ট্রেন্ডের সঙ্গে না যাই তাহলে  রিজেক্টড হয়ে যাবো। আমি কিন্তু গ্রুপের থেকে বাইরে চলে যাবো এবং আমাকে তারা পছন্দ করবে না। এটাকে বলা হয় সামাজিক শাস্তি । এই দুটো কারনেই মেয়েরা অনেক সময় ঐ ধরনের পোশাক পরে নিজেদের জায়গাকে ধরে রাখার চেষ্টা করে । “

 

 

 

 

 

More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from InternationalMore posts in International »
More from LifestyleMore posts in Lifestyle »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *