Press "Enter" to skip to content

৪৬৫ বছর আগে অশুভ ২০২০সালে করোনা ভাইরাসের আগাম ভবিষ্যতবাণী করে গেছেন নস্ত্রাদামুস?……..

Spread the love

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: কলকাতা, ২৯ মার্চ ২০২০ ফ্রান্সের সেন্ট রিমি ডে প্রভেন্সে ১৪ ডিসেম্বর তাঁর জন্ম। চার ভাইএর মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। ছোটবেলায় বাবা মারা যান। দারিদ্রতার কারণে মামারবাড়িতে মানুষ। ডাক্তারি পড়তেন। কিন্তু আগ্রহ জ্যোতিষচর্চায়। ডাক্তারি পড়া ছেড়ে সময় কাটাতেন ডাইনি বিদ্যা চর্চা আর জ্যোতিষ চর্চায়। যাদুবিদ্যার ওপর বই ডে মিস্টেরিস ইজিপট্রম তাকে জ্যোতিষচর্চায় উৎসাহিত করে তোলে। অদ্ভুত খেয়াল। বই পড়ার পর সব বই পুড়িয়ে দিতেন। নাম তাঁর নস্ত্রাদামুস । আসল নাম মিশেল ডে নস্ট্রেদেম। তিনি তাঁর ভবিষৎবাণীর বই লেখা শুরু করেন। প্রথম বই প্রকাশ ১৫৫৫ সালে। একশো বছরের ভবিষ্যতবাণী নিয়ে এক একটি বই । নাম সেঞ্চুরি। প্রতিটি ভবিষ্যতবাণী চার লাইনের। নস্ত্রাদামুসের দাবি ছিল ,পৃথিবীর ধংস পর্যন্ত তিনি ভবিষ্যতবাণী লিখে যাবেন। সেই বইতে নাকি তিনি লিখে গেছেন ২০২০তে পৃথিবীতে নেমে আসবে
ভয়াবহ মহামারী। এমনই দাবি, কিছু ব্লগারদের । মার্কো নামে এক ব্লগার দাবি করেছেন, নস্ট্রাদামুস বলে গেছেন পৃথিবীর সমুদ্রের ধারে একদেশে মাছ মাংসের বাজার থেকে মারণ ভাইরাস ছড়াবে বিশ্বে। মারা যাবে প্রচুর মানুষ। তাঁর ভবিষ্যতবাণী মিলেছে ১৬৬৬ সালে লন্ডনের অগ্নিকাণ্ডের।১৯৩৩সালে বিশ্বের ত্রাস হিটলারের কথাও নাকি তিনি আগাম বলে গেছেন। প্রথম কেন্দ্রীয় সরকারের বিজেপি সাংসদ ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, বর্তমান যুবকল্যাণ, ক্রীড়া ও সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ্যামেজিং ফ্যাক্টর শীর্ষক এক তথ্যে জানিয়েছিলেন, নস্ত্রাদামুস নাকি বলে গেছেন ২০১৪ থেকে ২০২৬ পর্যন্ত ভারতে এমন একজন শাসন করবেন যিনি সব মানুষের প্রিয় হবেন না তবে তাঁর চিন্তাধারায় ভারত বিশ্বে শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করবে। মন্ত্রীমশাই পোস্টটি করা মাত্র হাজার হাজার লাইক পড়তে থাকে। সঙ্গে তিনি পোস্ট করেছিলেন একটি ছবি । সেই ছবিতে দেখা গেছে ২০১৫তে প্রধানমন্ত্রী মোদি, কিরেন রিজিজু ও ভারত সফরে আসা জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলকে। অতি উৎসাহে রিজিজু বলেছিলেন, নস্ত্রাদামুস নাকি এও বলে গেছেন ভারতে ২০১৪তে শাসকদলের জন্য লাকি সংখ্যা হবে ২,৩ ও ৮। বিরোধীদের জন্য অশুভ। নির্বাচনী ফলাফল নাকি তাই হয়। ২+৩+৮=১৩। এন ডি এ সেবার পায় ৩৩৭টি আসন। অর্থাৎ ৩+৩+৭=১৩। যা বিজেপির জন্য শুভ। কংগ্রেস পরিচালিত ইউ পি এ পায় ৫৮ টি আসন। ৫+৮=১৩। অন্য বিরোধীরা পায় ১৪৮টি আসন। ১+৪+৮=১৩।বিরোধীদের জন্য অশুভ।অবশ্য বিরোধীরা রিজিজুর দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, এন ডি এ র আসন ছিল ৩৩৬।৩+৩+৬=১২। বিজেপি র আসন ছিল ২৮২ ।২+৮+২=১২। ১৩সংখ্যা এলো কি করে ? এই প্রশ্নের জবাব তখন কিন্তু দেননি রিজিজু ।
যাঁকে নিয়ে বিতর্ক তাঁর পরিচয়টা একটু ঝালিয়ে নেওয়া যাক। ফ্রান্সে ভবিষ্যত বক্তা হিসেবে নস্ত্রাদামুস যখন বহুল চর্চিত হয়ে উঠছেন,রাজ পরিবার থেকে ডাক এলো। নস্ত্রাদামুসকে ডেকে রানী ক্যাথরিন তাঁর সাত সন্তানের কুষ্ঠি বানাতে দেন। তিনি ভবিষ্যতবাণী করে বলেছিলেন,রানীর সাত সন্তানই রাজা হবেন। কিন্তু তা হয় নি। একজন তো মারা যায় শৈশবেই। নস্ত্রাদামুস নিজের মৃত্যু সম্পর্কেও ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন।বলেছিলেন,মৃত্যুর শেষদিনে তিনি নীল আলখাল্লা পড়ে বেঞ্চিতে শুয়ে থাকবেন। দেরিতে পাদ্রী আসবে। বৃষ্টি হবে প্রচণ্ড। বাস্তবে জীবনের শেষদিনগুলিতে তিনি নীল আলখাল্লা পড়ে বেঞ্চিতে রোজ শুয়ে থাকেন দিনের সবসময়। মারাও যান একদিন। ১৫৬৬ সালের ২জুলাই। তবে সেদিন কিন্তু বৃষ্টি হয়নি। করোনা ভাইরাসের মহামারী নিয়ে সত্যি কি নস্ট্রাদামুস কোনও ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন? নিয়তিবাদে বিশ্বাসী ব্লগারদের অন্যতম মার্কো নস্ত্রাদামুসের করোনা প্রসঙ্গে ভবিষ্যতবাণীকে প্রতিষ্ঠিত করতে নস্ট্রাদামুসে র অন্যতম ব্যাখ্যাকার এরিকা চিট হ্যামের তথ্য ধার নিয়েছেন। এরিকা হলেন এমন একজন ব্যাখ্যাকার যিনি সবচেয়ে বেশি যশ অর্থ কামিয়েছেন নস্ত্রাদামুসের সাংকেতিক ভবিষ্যতবাণী ব্যাখ্যা করে। নস্ট্রাদামুস
ভবিষ্যতবাণী লিখেছিলেন তাঁর দশটি সেঞ্চুরি বইতে। এরিকা সেই সব ভবিষৎবাণীর ৫৫শতাংশ অর্থাৎ ৫২০টির ব্যাখ্যা করতে পেরেছিলেন। অবশ্য যুক্তিবাদীদের বক্তব্য, নস্ট্রাদামুসের ভবিষৎবাণীর নামে পাগলামির হেঁয়ালি কবিতাকে বাস্তবযোগ্য করে তোলাও ছিল বেশ কষ্টযোগ্য । এমনই কষ্টযোগ্য মহামারী নিয়ে ভবিষ্যতবাণীর ব্যাখ্যা করেন এরিকা। আর সেই ভবিষ্যতবাণীকে জ্যোতিষ বিশ্বাসী ব্লগাররা করোনা ভাইরাসের ভবিষ্যতবাণী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে গেছেন।

এমনটাই মনে করেন যুক্তিবাদী মানুষেরা। কি আছে সেই ভবিষ্যতবাণীতে?
সেঞ্চুরি ৬ এ ২১নম্বর হেঁয়ালি ভবিষ্যতবাণীতে নস্ত্রাদামুস যা লিখে যান, তার বাংলা তর্জমা করলে বলা যায় তিনি লিখেছেন, উত্তর মেরুর মানুষ জোট গড়বে, ভীতি আর আতঙ্ক ছড়াবে পূবে। ব্যাখ্যাকার এরিকার দাবি, এই ভবিষ্যতবাণীর সঙ্গে পড়তে হবে সেঞ্চুরির ৬ এর ৫নম্বর ভবিষ্যতবাণী। যেখানে বলা হয়েছে মস্ত দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়বে উত্তরমেরুতে প্লেগ রোগের পর। ব্যাখ্যাকার এরিকা বলেন, প্লেগ রোগটিকে এযুগে এইডস হিসেবে দেখা উচিত। এখন মার্কো সাহেবের মত ব্যাখ্যাকাররা প্লেগ থেকে এইডস আর এইডস থেকে করোনা তে বদলে নিয়েছেন।যুক্তিবাদীদের ধারণা, করোনা অতিমারীকে জ্যোতিষ বিশ্বাসের মোড়কে মুড়ে পরিবেশনের একটা চেষ্টা ছাড়া কিছু নয়। যুক্তিবাদীদের আরও প্রশ্ন, নস্ত্রাদামুসের ভবিষ্যতবাণী যদি সত্যি হয়ে থাকে , ফ্রান্স তাহলে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে উদ্যোগী হয়নি কেন? মানুষের উচিত, বিজ্ঞানে ভরসা রেখে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।অন্ধবিশ্বাস নয়,বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞানে আস্থা রেখে মানব সভ্যতার বিবর্তনে আস্থা রাখাই হবে আধুনিক যুগের মানুষের কর্তব্য।আমরা করবো জয় নিশ্চয় ,,,,,,।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.