স্মরণ : শ্যা ম ল মি ত্র
বাবলু ভট্টাচার্য : পিতা ডাঃ সাধন কুমার মিত্র চেয়েছিলেন তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে পুত্র একজন ডাক্তার হবে। কিন্তু পুত্র ছিল সঙ্গীত সম্পর্কে ক্ষুরধার এবং তাঁর মা এবং স্থানীয় গায়ক মৃণাল কান্তি ঘোষ সঙ্গীতের ব্যাপারে তাঁকে অনুপ্রাণিত করতো ফলশ্রুতিতে গান তাঁকে বেধে রাখে আষ্টেপৃষ্ঠে।
১৯২৯ সালের ১৪ জানুয়ারি উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটিতে জন্মগ্রহণ করেন শ্যামল মিত্র ।
শ্যামল মিত্র ছিলেন পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের বাঙালি সঙ্গীত শিল্পের সুবর্ণ যুগের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রযোজক, সুরকার এবং গায়ক। এক সময় হেমন্তের মতো শ্যামল মিত্র ছাড়া বাংলা ছবির গান ভাবাই যেতোনা। তাঁর শ্রুতিমধুর কন্ঠস্বরের আবেগ প্রতিফলিত হয় তাঁর গাওয়া প্রতিটি গানে।
জনপ্রিয় অনেক মৌলিক বাংলা গান বিপুল সংখ্যা রেকর্ড ছাড়াও, তিনি নেপথ্য গায়ক হিসাবে শতাধিক বাংলা গান ও অর্ধশতাধিক বাংলা ছায়াছবির সঙ্গীত পরিচালনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন।
১৯৬৬ সালে শ্যামল মিত্রের প্রযোজিত ও সুরারোপিত ছবি ‘দেওয়া নেওয়া’-য় ‘গানে ভুবন ভরিয়ে দেব’ সঙ্গীত জগতের অনন্য উপহার। এ ছাড়াও তাঁর সুর করা আরো দু’টি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হল ‘অমানুষ’ এবং ‘আনন্দ আশ্রম’।
অভিনেতা হিসেবে, শ্যামল মিত্র বাংলা সিনেমা ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ এবং ‘শাপ মোচন’ ছবিতে কাজ করেন। তিনি বাংলা ভাষা ছাড়াও ভারতীয় হিন্দি, তামিল, তেলেগু, পাঞ্জাবী, মারাঠি, ওড়িয়া এবং অসমিয়া ভাষায় গান গেয়েছেন।
আধুনিক বাংলা গান এবং ফিল্ম গান ছাড়াও, শ্যামল মিত্র রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল গীতি, ছোটদের গান, এবং অতুল প্রসাদী সহ বিভিন্ন গান গেয়েছেন। তিনি ভারতীয় রেডিওর সঙ্গে দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন।
সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে শ্যামল মিত্র, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য্য, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, ইলা বসু, সুপ্রীতি ঘোষ, গায়ত্রী বসু, তালাত মাহমুদসহ প্রায় সকল প্রখ্যাত ও প্রধান শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অর্থাৎ ১৯৭৫ সালে তিনি ঢাকায় গিয়ে একটি ছবিতে কণ্ঠ দেন। আলমগীর কবির পরিচালিত এবং সত্য সাহা’র সুরে ‘সূর্যকন্যা’ ছবিতে ‘চেনা চেনা লাগে তবু অচেনা/ভালোবাসো যদি কাছে এসো না’ গানে কন্ঠ দেন শ্যামল মিত্র।
শ্যামল মিত্র ১৯৮৭ সালের আজকের দিনে (১৫ নভেম্বর) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment