—-–-জন্মদিনে স্মরণঃ দাদাসাহেব ফালকে——-
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, জাদুকর কেলফা নামে রাস্তায় রাস্তায় ম্যাজিক দেখিয়ে বেড়াতেন মানুষটা। সবাই বলত এর দ্বারা কিচ্ছু হবে না। যে ব্যবসাতেই হাত লাগান, বেশিদিন চলে না। বাজারে ধারদেনা। সংসার চলে কি চলে না। গরীবের ঘোড়া রোগের মতো তাঁর ছিল সিনেমা দেখার রোগ। ফার্দিনান্দ জেকার The Life of Christ দেখে ঠিক করলেন তিনিও সিনেমা বানাবেন। আরে এও তো এক রকমের ম্যাজিক! দারুণ একগুঁয়ে তিনি। সব বিক্রি করে দিয়ে মুভি ক্যামেরা কিনলেন। ঘরেই তুলে ফেললেন মটর গাছের বেড়ে ওঠার দারুণ এক ছবি। তবে এতেই খুশি নন তিনি। হিন্দু দেবদেবীদের দেখাতে হবে পর্দায়। তবে না মজা!মারাঠী নাটকের মধ্যে সব থেকে জনপ্রিয় ছিল সত্যবাদী রাজা হরিশ্চন্দ্রর কাহিনি। ঠিক হল সে কাহিনি নিয়েই ছবি হবে। বাড়ির সবাই মিলে দিনরাত পরিশ্রম শুরু। মহিলার ভূমিকায় কোন নারী অভিনয় করতে রাজি নন। অগত্যা সালুঙ্কে নামে এক পুরুষকেই সেই কাজ করতে হল।
১৯১৩ সালের ৩ মে বোম্বের করোনেশন হলে মুক্তি পেল ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’। পরিচালক, প্রযোজক ধুন্ডীরাজ গোবিন্দ ফালকে— তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের জনক। শুধু নির্বাক ছবিই নয়, তথ্যচিত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে ছবি তৈরিতে তাঁর পারদর্শিতা ও বহুমুখী প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ ১৯ বছরের কর্মজীবনে তিনি ৯৫টি ছবি তৈরি করেন। তাঁর সৃষ্ট সেরা ছবিগুলি— ‘মোহিনী ভাসমাসুর’, ‘সত্যবান সাবিত্রী’, ‘লঙ্কা দহন’, ‘শ্রীকৃষ্ণ জন্ম’, ‘কালিয়া মর্দন’ ইত্যাদি।
১৫ বছর বয়সে জে. জে. স্কুল অফ আর্টস থেকে পাশ করেন তিনি। পরে বরদা ইউনিভার্সিটিতে ভাস্কর্য, চিত্রকলা, ফটোগ্রাফি, ইঞ্জিনিয়ারিং শেখেন। ছোটো শহরে ফটোগ্রাফির কাজ দিয়ে কর্ম জীবনের শুরু। কিন্তু তাঁর জীবনের লক্ষ্য ছিল অনেক বড়। ফটোগ্রাফির কাজ ছেড়ে তিনি জার্মানি যান এবং জার্মান ম্যাজিশিয়ান কার্ল হার্জের সাথে সাক্ষাৎ করেন। ১৯৬৯ সাল থেকে ভারত সরকার তাঁর স্মৃতিতে ভারতীয় সিনেমার বহু মূল্যবান ও সম্মাননীয় ‘দাদসাহেব ফালকে’ পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে।
দাদা সাহেব ফালকে ১৮৭০ সালের আজকের দিনে (৩০ এপ্রিল) মহারাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment