Press "Enter" to skip to content

১৫১বছর পর বৃহত্তম পূর্ণিমা… কিন্তু ভারত থেকে দৃশ্যমান নয়…. ও চাঁদ,সামলে রাখো জোছনাকে…

Spread the love

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: কলকাতা,৭এপ্রিল ২০২০।আজ সকাল ৮ টা ৫০মিনিট থেকে আকাশে সুপার মুন। অর্থাৎ চলতি বছরের বসন্তের মরশুমে দেখা মিলছে সবচেয়ে উজ্জ্বল চাঁদের। বৃহত্তম পূর্ণিমা। কিন্তু ভারত থেকে দৃশ্যমান নয়। চাঁদ যখন অনেক বড় ও উজ্জ্বল হয় এবং কক্ষপথ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকে তখন সুপারমুন হয়। এপ্রিলের এই চাঁদকে বলে গোলাপী চাঁদ বা পিঙ্ক মুন। উত্তর আমেরিকার পূর্বে বসন্ত কালে ফোলকস সুবুলতা নামে এক গোলাপী ফুলের নামে নামকরণ। এর আগে ২০১৮ সালে একই রাতে আকাশে দেখা যায় তিন রকমের চাঁদ। ব্লু মুন,সুপারমুন, ব্লাড মুন। এই এক রাতে তিন রকমের চাঁদ দেখা গিয়েছিল ১৫১বছর আগে। এই সুপার মুনের আবার দেখা মিলবে ২০৩৪ সালের ২৫ নভেম্বর। তবে গোলাপী চাঁদ মানে এই নয় যে চাঁদকে আজ গোলাপী দেখাবে। যেটা হচ্ছে তা সুপারমুন। মানে উজ্জ্বলতম। ব্লু মুন, ব্লাড মুন ও পিঙ্ক মুন।
মহাজাগতিক এই ঘটনাকে বিজ্ঞান কিন্তু সুপার মুন বলে না। ইংরেজিতে বলে ওয়ানস ইন এ ব্লু মুন। অর্থাৎ দুর্লভ সময়। বিজ্ঞান বলে, বছরে ১২ টি পূর্ণিমা হয়। যে মাসে দুটি পূর্ণিমা হয় সেই দ্বিতীয় পূর্ণিমাকে বলে ব্লু মুন। দুটি পূর্ণিমার তফাৎ হয় ২৯.৫দিনের। সঠিক হিসেব ২৯.৬৩০দিন বা ২৯দিন১২ ঘণ্টা ৪৪ মিনিট। এই কারণে এমনও হতে পারে কোনো বছরে ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ণিমা হলোই না। এই ব্লু মুন দুটি হিসেবে হয়। প্রথম হিসেবে পরবর্তী ব্লু মুনের দেখা মিলবে ২০২৪সালে।

নতুন হিসেবে ২০৪৮ সালে। তবে মাঝে চলতি বছরে ৩১অক্টোবর দেখা মিলবে। এবার বলি ব্লাড মুনের কথা। পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের সময় সূর্যের আলো বাধা পায় পৃথিবীতে। ফলে তা চাঁদ পর্যন্ত পৌঁছয় না। পৃথিবী চাঁদের তুলনায় বড় হওয়ায় গোটা চাঁদ পৃথিবীর ছায়ায় ঢেকে যায়।কিন্তু বায়ুমণ্ডলের ও জলভাগের কিছু স্বচ্ছ অংশ আছে। যেখানে আলো পড়ে এবং রামধনুর লাল অংশ চাঁদে গিয়ে পড়ে চাঁদকে লালচে দেখায়। তাই ব্লাড মুন বলে। মানব সভ্যতায় চাঁদের এক ভূমিকা আছে। বলা হয় মুন ডায়েট। অর্থাৎ পৃথিবীর নদী বা সমুদ্রে যেমন চাঁদের প্রভাব আছে তেমন মানুষের দেহেও প্রভাব আছে। তাই পূর্ণিমায় অনেকে ফল ও ফলের রস খান শুধু। তাকে বলে মুন ডায়েট। পৃথিবীর সর্বত্র সোমবারকে চন্দ্রের বার বলে। ল্যাটিন ভাষায় সোমবারকে বলে লুনে দিয়েস। প্রাচীন ইংরেজিতে জোনালদয়েগা। ইতালিতে লুনেদি। শিবের মাথায় অর্ধচন্দ্র। তাই হিন্দু ধর্মে সোমবারকে শিবের বার বলেন। এই অর্ধ চন্দ্র বিষয়টি কিন্তু মুসলিম ধর্মেও আছে। হজরত মুহাম্মদ যখন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করলেন তখন ইসলামে কোন প্রতীক ছিল না। মূলত অটোমান সাম্রাজ্যের যুগে ইসলামের প্রতীক হয় একফালি চাঁদ। ১৪৫৩সালে তুর্কিরা কনস্তানতিপোগোল দখল করে। তারা যে প্রতীক ব্যবহার করত তুর্কিরাও তা ব্যবহার করতে থাকে। অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ওসমানের ইচ্ছে ছিল পৃথিবীর দুই প্রান্তে ব্যাপ্তি হবে এক ফালি চাঁদ। প্রাচীন প্যাগনদের আইকন চাঁদ ইসলামে বিশ্বাসীরা গ্রহণ করেছেন। গ্রীক দেবী ডায়ানা চাঁদের দেবী। ইস্তাম্বুলের জাতীয় প্রতীক চাঁদ। গোথদের হারিয়ে রোমানরা চন্দ্র মাসের প্রথমদিন জয় পায়। তাই খ্রিস্ট জন্মানোর আগেই রোমানদের পতাকায় ছিল খণ্ড চন্দ্র। ইউরোপের চাষীরা ২৩ সেপ্টেম্বর হারভেস্ট মুন উৎসব করেন। রাতে এদিন চাঁদ সবচেয়ে বেশি উজ্বল হয়। পরিযায়ী পাখিরা এদিন অজানা পথে যাত্রা শুরু করে। ইউরোপের চাষীরা এদিন রাতেও চাষ করেন। গানবাজনা খাওয়াদাওয়া করেন। হিন্দু দেবতা চন্দ্রদেবের আবার একটু ইয়ে বাতিক ছিল। ২৭জন স্ত্রী থাকা সত্বেও নজর যায় গুরু পত্নী তারার দিকে। তারাকে নিয়ে পালিয়ে যান। পরে গুরুকে পত্নী ফেরত দিলেও একটি সন্তান উৎপাদন করে নেন। সন্তানটি হলো বুধ। আমেরিকা মহাকাশযান ১৪ তে মহাকাশচারী ছিলেন স্টুয়ার্ড রুসা। পৃথিবী থেকে তিনি কিছু গাছের বীজ নিয়ে চাঁদে যান। ফিরে এসে সেই গাছের চারা পৃথিবীর মাটিতে রোপণ করেন। কিছু বীজ থেকে গাছ হয়। যার নাম হয় মুন ট্রি। চাঁদ আসলে কি? মাত্র ৪৫০কোটি বছর আগে পৃথিবী থেকেই চাঁদ উপগ্রহ সৃষ্টি। যা সৃষ্টি হয় চারটি পর্যায়ে। প্রথমে মঙ্গলের মত আকৃতির এক গ্রহাণু সেকেন্ডে ২০কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়ে পৃথিবীতে শত খণ্ড হয়ে। পৃথিবীর পাথুরে জমি থেকে বেরোয় ধুলোবালি, নানা বস্তুকণা। যা লক্ষ লক্ষ বছর ঘুরতে থাকে পুঞ্জাকৃতি আকারে পৃথিবীকে ঘিরে। তারপর জমাট বেঁধে আকারে হয় পৃথিবীর চার ভাগের এক ভাগ। শেষে নিজের কক্ষপথে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞানী জন হেইভ বলেন, চাঁদ গ্রিন চিজ দিয়ে তৈরি। ১৬০৯ সালে ইংল্যান্ডের টমাস হ্যারিয়ট প্রথম টেলিস্কোপে চাঁদ দেখেন। তার কিছু মাস পরে গ্যালিলিও। পৃথিবী থেকে আমরা চাঁদের একটি পিঠ দেখি। চাঁদের বড় বড় গর্তগুলিকে বলে কলংক। যা উল্কা পিণ্ডের আঘাতে হয়েছে। এই গর্তগুলির নামকরণ হয়েছে বিখ্যাতদের নামে। তালিকায় আছেন, উইলিয়াম হার্ভে, মেঘনাদ সাহা, জগদীশ বোস,এডুইন অলড্রিন প্রমুখ। চাঁদে আছে ১০টি জলাশয়। চাঁদে মিলেছে এক ধরনের খনিজ। তিন চন্দ্র বিজয়ী মহাকাশচারীর নামে সেই খনিজের নামকরণ হয়েছে আর্মালকলাইট। আর্মস্ট্রং,অলড্রিন আর কলিন্স। এক সময় মনে করা হয়েছিল চাঁদের ভূমি স্থির।

কিন্তু মহাকাশচারীরা সিসমোমিটার দিয়ে মেপে জেনেছেন সেখানে আছে হালকা ভূমিকম্পের কম্পন। যার নাম মুন কোয়েক।
বাংলায় একটি শব্দ আছে চন্দ্রাহত। অর্থ পাগল। মানসিক রোগী। আসলে চাঁদের জোছনার মাধুর্য মানুষকে কল্পনা আর ভালোলাগার এক চরম তৃপ্তি দেয়। তাই বোধহয় মান্না দে গেয়েছেন চাঁদ দেখতে গিয়ে আমি তোমায় দেখে ফেলেছি। ও চাঁদ ,সামলে রাখো জোছনাকে।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.