মধুমিতা শাস্ত্রী: ২০ এপ্রিল, ২০২০ঃ
তপ্ত দুপুরে ঘর্মাক্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে শুয়েছি এমন সময় জানলা থেকে ঠান্ডা বাতাস ঢুকে শরীরটাকে শীতল করল। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম, আকাশের মুখ ভার আর ক্রমাগত গর্জন করে চলেছে। অবস্থা দেখে বুঝলাম, এ শুধু গর্জেই থামবে না বর্ষাবেও বটে। আবহাওয়া দপ্তরের রিপোর্টেও বলা ছিল রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বজ্র-বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা, কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টিও হতে পারে। সঙ্গে পঞ্চাশ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। গোটা চৈত্র মাস জুড়ে সূর্যের লম্ব কিরণের ফলে গ্রামের পুকুর ডোবার জল তলানিতে চলে গিয়েছে। নলকূপগুলিতে হ্যাঁচকা টানেও সামান্য জল পড়ে। এমন সময় বৃষ্টির খুবই প্রয়োজন। যদিও কয়েক বছর ধরে কালবৈশাখীর আগমন খুবই কম। ছোটবেলায় দেখেছি চৈত্রের দাবদাহে যখন মানুষের নাভিশ্বাস, ছোট বড় সবার শরীরে ঘামাচি আলপনা আঁকছে, আর চুলকে চুলকে নখের খোঁচায় শরীর ক্ষতবিক্ষত। ধরিত্রী ও ধরিত্রীবাসীর এই দহনজ্বালাকে ছত্রছায়া দিতে চলে আসে কালবৈশাখী। চৈত্রের তপ্ত দহনজ্বালায় কালবৈশাখীর উন্মাদ প্রলয় স্নেহর স্পর্শ দিয়ে যায়। গাছ জরাজীর্ণ দশা থেকে মুক্তি পেয়ে নবপল্লবে সজ্জিত হয়ে উঠে। পুকুরের কানায় কানায় জল টলমল করে। ধরিত্রীবাসীর এ এক পরম প্রাপ্তি। গৃষ্মের দৈত্যকে সপাটে আছাড় মারতে কালবৈশাখী তার দানবমূর্তি ধারন করে। আর ধরিত্রীর রুগ্ন মরুদশা দূরীভূত করে পাতা, ফুল ও ফলে সজ্জিত করে তোলে।
আমাদের চারিদিকে যত্রতত্র বৃক্ষচ্ছেদ এবং সমপরিমাণ বৃক্ষ রোপণ না হওয়ার ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশ কমছে। পৃথিবী উত্তরোত্তর উষ্ণ হয়ে উঠছে। নানা কারণে এখন আর পূর্বের মতো বর্ষাকালকে পাওয়া যায় না। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত প্রকৃতি এমন খামখেয়ালী ছিল না। নিয়ম মেনে চৈত্রের শেষ থেকে বৈশাখের শুরুতেই কালবৈশাখী হৈ হৈ করে ঢাক ঢোল বাজিয়ে রাজ্যে প্রবেশ করত। এই কালবৈশাখী চাষিদের খুব উপকারী বটে। ধান চাষিদের জলের তৃষ্ণা মেটায়। এছাড়া চা এবং পাটচাষেও জলের অভাব পূরণ করে। চাষিদের কাছে কালবৈশাখীর বৃষ্টি আশীর্বাদ স্বরূপ। বর্তমানকালে অনেক স্থানে বৃষ্টি আগমনের জন্য পুজো দেওয়া হয়।
কিন্তু আদতে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে গোটা পৃথিবীতেই আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটতে দেখা যাচ্ছে। যে দেশগুলোতে তাপমাত্রা সাধারণত তাপমাত্রা কম থাকে সেখানে তাপমাত্রা বাড়ছে। হিমবাহের বরফ গলছে। বাড়ছে সমুদ্রের জলস্তর। আর সেই সঙ্গেই আমরা দেখতে পাচ্ছি আশ্চর্যজনকভাবে ইদানীং আমাদের এই বাংলায় আর আগের মতো কালবৈশাখী দেখা যায় না। তবে একটি ক্ষীণ আশার আলো দেখা যাচ্ছে। করোনার ভয়ে বিশ্বব্যাপী যে লকডাউন চলছে তাতে প্রকৃতি সামান্য হলেও পূর্বের ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে। হয়তো আবহাওয়াও আবার আগের মতো হবে।
Be First to Comment