………….হাঁটি হাঁটি পা পা সুস্থতা র ভরসা……….
মৃদুলা ঘোষ: কলকাতা, ৩১মে, ২০২০।
বেঁচে থাকার জন্য হাঁটা শ্রেষ্ঠ ব্যয়াম বলেই বিবেচিত বিশ্ব জুড়ে। হাঁটি হাঁটি পা পা। শিশু ধরে ধরে হাঁটতে শুরু করে ১২-১৩মাস বয়সে, এর মাস দুয়েক বাদে একা একা, সেই যে আমাদের হাঁটা শুরু হয়, বড়ো অসুখ বা দুর্ঘটনা না ঘটলে আমৃত্যু ই সেটা চলতে থাকে। যদিও গতি কমে আসে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমান সময়ে সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারের মতো মারন রোগে আক্রান্ত।
চল্লিশোর্ধ মানুষের জীবন প্রবাহে অসংযত ও বিশৃঙ্খলই মূল মন্ত্র। ফলে অসুখ বিসুখ আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছে। অথচ বিভিন্ন অভ্যাসের সাথে যদি হাঁটা র মতো বিষয় কে দৈনন্দিন জীবনে রাখতে পারে, তাহলে সহজেই ভালো থাকা যায়। এই না হাঁটা র অভ্যাস শুরু হয় শৈশব থেকেই। ছকে বাঁধা জীবনে হাঁটা হাঁটি র বিশেষ প্রয়োজন থাকে না। সুযোগ ও নেই। বাড়ি র সামনেই স্কুল বাস, পাড়ার মোড়ে মিলছে রিকশা, অটো বাস, স্বচ্ছল পরিবারের শিশু হলে গাড়ি। শিশুদের ক্ষণিক অবসর কাটে এখন টি ভি কমপিউটার এর সামনে বসে। খেলার মাঠে দৌড়ে ঝাঁপিয়ে নয়। প্রতিরোধ ক্ষমতায় ঘাটতি ও ভবিষ্যতে নানা অসুখ নিয়ে বেড়ে ওঠা একজন নাগরিক। এই অবস্থার পরিবর্তন চাইলে মা বাবা রা নিজেরা হাঁটুন এবং বাচ্চাকেও হাঁটানোর অভ্যাস করান। কিভাবে হাঁটি- আমাদের পা দিয়ে আমরা হাঁটি। পায়ের পাতা, গোড়ালি, হাঁটু ছাড়াও মেরুদণ্ড হাঁটতে সাহায্য করে। হাড়, মাংসপেশী, তন্তু, তরুণাস্থি, নার্ভ, রক্তনালী, সবারই কমবেশি ভূমিকা আছে হাঁটার পিছনে। মস্তিষ্কের সেরিবেলাম অংশ হাঁটা নিয়ন্ত্রণ করে। সেখান থেকেই নার্ভ বাহিত হয়ে পায়ের মাংসপেশী তে আদেশ আসে।
এই পেশীগুলি র সংকোচন প্রসারনের ফলে আমরা হাঁটতে পারি। আমাদের অন্ত:কর্ণে থাকে শোনার জন্য কটি অঙ্গ এবং ভারসাম্য রক্ষা র জন্য প্রায় বৃত্তাকার নালি বা সেমি সারকুলার ক্যানাল, একটি ইউট্রিকল, একটি ন্যাকিয়ুল। পেরিলিম্ফ এবং এ্যান্ডোলিম্ফ নামক তরল পদার্থ থাকে অন্ত:কর্ণে যা আমাদের হাঁটতে ভারসাম্য রক্ষা করে, টাল খেয়ে পরে যাই না। কেউ যখন হাঁটে, তখন তার সামনের পায়ের গোড়ালি আগে মাটি ছোঁয়, তারপর পায়ের পাতা, হাঁটু থাকে সোজা। হাঁটার সময় সব থেকে বেশী সচলতা থাকে হাঁটু তে। যা নিতম্বের সচলতার চার গুন। সবচেয়ে কম চাপ পরে গোড়ালি তে। এক থেকে পাঁচ মিনিট হাঁটলে… কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার পর দেহস্থ কোষে শক্তি উৎপাদন কারী রসায়নিক পদার্থের নি:সরন শুরু হয়, হাঁটা র জন্য শক্তি যোগায়। শরীরের জড়তা কেটে প্রতি মিনিটে পাঁচ ক্যলোরি ঝরতে থাকে। ৬ থেকে ১০ মিনিট হাঁটলে হৃদস্পন্দন বাড়তে থাকে, শিরা-উপশিরা কে প্রসারিত করে যার ফলে কাজে ব্যবহৃত পেশিগুলোয় রক্ত ও অক্সিজেন এর সরবরাহ বেড়ে যাবে।
১১থেকে ২০মিনিট হাঁটলে, ক্রমে দেহের উত্তাপ বাড়তে থাকবে। রক্তবাহী নালী গুলো প্রসারিত হওয়ার জন্য এক মিনিটে সাত ক্যালরি ঝরে যাবে। পেশীকে কর্মক্ষম করার জন্য ইপ্রিনেফ্রাইন এবং গ্লুকাগন নামে দুটি হরমোন নিঃসৃত হয়। ২১ থেকে ৪৫ মিনিট হাঁটলে শরীরে তরতাজা ভাব অনুভূত হয়। দেহের চর্বি অনেকটা ই ঝরে যায়, এবার ইনসুলিনের পরিমাণ কমতে শুরু করে। যারা ওবেসিটি তে আক্রান্ত, দীর্ঘদিন সুগার সমস্যায় জর্জরিত, তাদের জন্য এই সময় পর্যন্ত হাঁটা দরকার। ৪৬মিনিট থেকে ৬০মিনিট হাঁটলে দেহের পেশি কিছু টা অবসন্ন হবে। হাঁটা র শেষে শরীরে ক্লান্তি আসবে, প্রায় এক ঘণ্টা ধরে কমবেশি ক্যালরি ঝরতে থাকবে। সুস্থ ব্যক্তিরা দিনে ৩-৪ কিলোমিটার হাঁটবেন ১ ঘন্টায়, এতে ৩০০থেকে ৫৩০ক্যালরি শক্তি ক্ষয় হবে। একদিনে সম্ভব হবে না, ধীরে ধীরে অভ্যাস করুন। তবে হাঁটতে গিয়ে ক্লান্তি বোধ হলে, অস্বস্তি হলে, বেশি ঘাম হলে, পায়ে খিঁচুনি হলে সঙ্গে সঙ্গে হাঁটা বন্ধ করে দিন।
এরকম চলতে থাকলে চিকিৎসক এর সাথে কথা বলুন। একেবারে খালি পেটে হাঁটা উচিত নয়। আবার ফিরে এসে খিদে পায় বলে একসাথে অনেকটা খাবেন না। হাঁটা ছাড়া সুস্থ থাকার কোনও শর্টকাট রাস্তা নেই। তাই দিনের শুরু তে বা সন্ধ্যা বেলা, নিরিবিলি জায়গায় হাঁটতে বেরিয়ে পড়ুন। খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য অর্থাৎ স্বাভাবিক জীবন যাত্রা নির্বাহ করার জন্য আমাদের প্রত্যেককেই ইচ্ছায় অনিচ্ছায় কিছুটা হাঁটতে হয়। সেই বাধ্যতামূলক হাঁটা র কথা বলা হচ্ছে না। এখানে হাঁটা বলতে এক্সারসাইজ, একটু ঘাম ঝরিয়ে হাঁটা। এক কথায় বলতে গেলে শরীর ফিট রাখার জন্য এটা দরকার।
ফিট বলতে, দেহের নানা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ -হার্ট, লিভার, কিডনি, হাড় মাংসপেশী, চর্বি, সবকিছুর ফিটনেস। হাঁটা এমন ই একটা ব্যয়াম। হাঁটা র কোনো বিকল্প নেই।
Be First to Comment