সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়:কলকাতা, ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০২০ তিহার জেলে ফাঁসির অপেক্ষায় প্রহর গুনছে চার ধর্ষক। রাজ্যে রাজ্যে প্রবল দাবি,ধর্ষকদের ফাঁসি চাই। যদিও কিছু মানবতাবাদীরা প্রশ্ন তুলেছেন, খুনের বদলে খুন বা ধর্ষণের শাস্তি ধর্ষণ মধ্য যুগীয় বর্বর প্রথাকে সমর্থন করে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আওয়াজে সেই যুক্তি হারিয়ে যাচ্ছে। তাই ফাঁসির দড়ি চর্বি আর পাকা কলা মাখিয়ে তৈরি হচ্ছে, অপরাধীদের গলায় ফাঁসির দড়ি যেন মসৃণ ভাবে ফাঁস বসাতে পারে। কিন্তু ধর্মীয় বাবাজীরা যখন ধর্ষণ করে কিম্বা খুন করে ,কোনো রাজনৈতিক নেতা তো ছার, কোনো সচেতন নাগরিকদের দেখি না এই সব বাবাজীর ফাঁসির দাবি করছেন।
আশারাম বাপু থেকে রহিম, রাম রহিম থেকে স্বামী নিত্যানন্দ সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ ধর্ষণ ও খুনের। এই মুহূর্তে খবর, উত্তর প্রদেশের শাহজনপুরের এক আইনের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীজির মন্ত্রিসভার সদস্য স্বামী চিন্ময়ানন্দ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন এলাহাবাদ উচ্চ আদালতের নির্দেশে। আর এক বাবাজী হরিয়ানার ফতেহবাদ জেলার তহনার আশ্রম থেকে গ্রেপ্তার হন স্বঘোষিত গুরু বাবা অমরপুরি। ধর্ষিতা তরুণীর অভিযোগে গ্রেপ্তার এই বাবাজীর আশ্রম থেকে আপত্তিকর যৌন সামগ্রী মিলেছে। তদন্তে এও উঠে এসেছে, বাবাজী এখন পর্যন্ত ১২০জন মহিলাকে ধর্ষণ করেছেন। কিন্তু ধর্মগুরুদের প্রভাবে কেউ অভিযোগ জানতে সাহস পাননি। এখন কেউ গারদের আড়ালে, কেউ দেশ ছেড়ে উধাও। এদের ফাঁসির দাবি তুলছেন না।সুতরাং সাধারণ ধর্ষক বা খুনিরা যদি প্রশ্ন করেন তুমি করলে লীলা, আমি করলে……। জবাব কে দেবে? এই ধর্ষক বা খুনি বাবাজী কি আজ নতুন?সূত্র কিন্তু তা বলছে না। আদিম সমাজে যখন বাহুবল ছিল একমাত্র বিষয়, তখনও গায়ের জোরে নারী দেহের প্রতি অধিকার ছিল খুল্লাম খুল্লা। নারীত্বের অবমাননা যখন সমাজের প্রণম্যরা করেন তখন সাধারণ পুরুষ বীর পুঙ্গবরা নারী ধর্ষণ বা হত্যাতে উৎসাহিত হবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। প্রথমে হিন্দু শাস্ত্রে সাধু সম্পর্কে কি বলা হয় দেখা যাক। সেখানে বলা হয়েছে, মানুষের ২৪ গুরু। পঞ্চভূত, ক্ষিতি বা পৃথিবী, বায়ু, জল, অগ্নি, আকাশ। এছাড়াও চন্দ্র, সূর্য্, কপোত কপোতী, অজগর, সমুদ্র, পতঙ্গ, মৌমাছি, স্ত্রী হাতি, হরিণ, ভ্রমর, মাছ, চিল, বালক, কুমারী, শবর, সাপ, মাকড়শা, কাঁচ পোকা ইত্যাদি। প্রাণহীন বস্তুও গুরু হতে পারে।
ভগবৎ গীতায় শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন শ্রেষ্ঠ সাধুর লক্ষণ। এমন এক মানুষ যিনি নিজের সমস্ত কামনা বিসর্জন দিয়েছেন, চরম দুঃখেও যিনি উদ্বিঘ্ন হননা, পরম সুখে ও যিনি স্পৃহাহীন, জয় পরাজয়, মান অপমান ,শত্রু মিত্র, এই সমস্ত বৈপরীত্যের মধ্যে যার সমান ভাব এমন মানুষই সাধু নামের যোগ্য। অথচ হিন্দু ধর্মে গুরু বা মুনি ঋষিদের নারী ভোগের ঘটনা ভুরি ভুরি। সে যুগে গুরুদেবরা শুধু পরনারীর ধর্ষণ করেছেন, তাই নয়, দেব কূলের গুরুদেব বৃহস্পতি নিজের ভাতৃ বধূকেও ধর্ষণ করেছেন। পুরাণ বলছে, দেবগুরু বৃহস্পতির ভাই উতথ্য ঋষি। তাঁর স্ত্রী মমতা। ভাই/এর অনুপস্থিতিতে সন্তানসম্ভবা মমতাকে বিছানায় নিয়ে যেতে বলপ্রয়োগ করেন বৃহস্পতি। মমতা বলেন,আমি আপনার ভাই এর সন্তান ধারণ করেছি। এই মুহূর্তে আমাকে ক্ষমা করুন বৃহস্পতি সে কথায় কর্ণপাত করেননি। বৃহস্পতির ছাত্র চন্দ্র গুরুর স্ত্রী তারাকে ধর্ষণ শুধু করেননি তাকে অপহরণ করেন। ব্রহ্ম বৈবর্ত পুরাণ এর ব্রহ্ম খণ্ডের ১০ খন্ডে বলা হয়েছে, এক ব্রাহ্মণী তীর্থ যাত্রার শেষে ক্লান্ত হয়ে পথের ধারে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, তাকে দেখে দুই চিকিৎসক দেবতা অশ্বিনীকুমার ধর্ষণ করেন। আবার চন্দ্রের কন্যা ভদ্রাকে ধর্ষণ করেন বরুণদেব। মহাভারতের অনুশাসন পর্বে ১৫৪খন্ডে এই ঘটনার উল্লেখ আছে। দেবী ভাগবতের ২/৬ এ আছে ভোজ কন্যা কুমারীর অতিথি সেবায় সন্তুষ্ট দুর্বাসা মুনির কুন্তী কে এক মন্ত্রী উপহার দেন। যে মন্ত্রে কুন্তী যাকে খুশি সেই দেবতাকে আবাহন করে যৌন আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। একদিন মন্ত্রে শক্তি পরীক্ষা করতে খেলার ছলে মন্ত্র পড়ে বিপত্তি। সশরীরে হাজির সূর্য দেব। কুন্তী ভয় পেয়ে সূর্যদেব কে চলে যেতে বলেন। কিন্তু সূর্যদেব রাজি নন।শেষপর্যন্ত কুন্তীর অনিচ্ছা স্বত্বেও উপগত হলেন। তার ফলেই নাকি কর্নের জন্ম। স্ব্য়ং বিষ্ণু পর্যন্ত ধর্ষণ করেছেন। ব্রহ্ম পুরাণের ১৩৬নম্বর পৃষ্ঠায় (অনুবাদ:সুবোধ চন্দ্র সরকার)
বলা হয়েছে বিষ্ণু রাজা শঙ্খচূড় এর পত্নী তুলসী এবং আর এক রাজা জলন্ধরের স্ত্রী বৃন্দাকে ও ধর্ষণ করেন। বৃহদারণ্যক উপনিষদ(৬/৪/৭) এ বলা হয়েছে সঙ্গমে আগ্রহ না দেখালে নারীকে লাঠি দিয়ে প্রহার করতে হবে। বৈদিক সূত্রে ব্রহ্মা কন্যা সরস্বতী কে শয্যা সঙ্গিনী করেন। প্রজাপতি কন্যা শতরূপা কে ভোগ করেন। জনহু মুনি শয্যা সঙ্গিনী করেন কন্যা জাননভি কে। অতুল সুরের দেবলোকে র যৌন জীবন গ্রন্থে লিখেছেন
ধর্মানুষ্ঠানের নামে বিবাহিত নারীর সতীত্ব সর্বপ্রথম নাশ করার অধিকার ছিল কুলগুরুদের।বাংলাদেশেও প্রচলিত ছিল। বলা হত গুরুপ্রসাদি।এই প্রথা ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে ও ছিল। এই প্রথাকে বলা হতো just prima noetics.
অতুল সুর তাঁর বইতে শুধু গুরুদেব ধর্ষণের প্রামাণ্য তথ্য দিয়েছেন তাই নয়,পুরোহিতদের বিকৃত যৌনতার যে বর্ণনা দিয়েছেন তা জানলে তাজ্জব বনতে হয়। সে যুগে অশ্বমেধ যজ্ঞের কথা শোনা যায়। সব রাজ্য বিনা বাধায় ঘোড়া ফিরে এলে ঘোড়াটিকে পুজো করে বধ করা হয়। তারপর মৃত ঘোড়ার পাশে শুতে বলা হত রাজার বড় রাণীকে। তাকে মৃত ঘোড়ার সঙ্গে যৌন সঙ্গম করতে হত। পুরনারীরা এবং পুরোহিতরা অশ্লীল শব্দ প্রয়োগ করে রাণীকে উত্তেজিত করতেন। আর এক ধর্মীয় শাস্ত্র বাজসনেয়ী সংহিতায় (২২/২৩) বর্ণনাতে ঘোড়ার পরিবর্তে প্রধান কুল পুরোহিত রাণীকে ভোগ করতেন। ইচ্ছেমত নারী দেহ ভোগ করার বিধান নাকি তন্ত্র মতেও আছে। তন্ত্র সমূহতে বলা আছে, মৈথুন ছাড়া কুলপুজা হয় না। গুপ্ত সংহিতায় রতি ক্রিয়ায় নিজের স্ত্রী বৈধ নয়। নারীকে হতে হবে ষোড়শী, সুন্দরী ও বিপরীত রমণে দক্ষ হওয়া চাই।
কুমারী তন্ত্রে বলা হয়েছে, নটী,কাপালিকা,বেশ্যা,ব্রাহ্মণী,শুদ্রকন্যা ,মালাকার কন্যা, নাপিত স্ত্রী রজকি কন্যা ও গোয়ালিনি কন্যাকে রমণ করে পুজো করবে। মারাত্বক কথা আরও বলা হয়েছে, এই নব কন্যা পাওয়া না গেলে নিজের কন্যা,নিজের কনিষ্ঠ বা জ্যেষ্ঠা ভগ্নী মাতুলানি, বিমাতা এবং মাতাকেও নিয়ে পূজা করা যায়। আমরা প্রায়ই শুনি, মৃত নারীদেহের সঙ্গে বিকৃতমনা দের যৌন সম্পর্ক করার। সেযুগে মৃত ঘোড়ার সঙ্গে রাণীকে বাধ্য করা হতো যৌন সঙ্গমে সে কথা আগেই বলেছি। পুরাণে রাজা ব্যুশী তাস্বের স্ত্রী ভদ্র। স্বামীর মৃত্যু হয় যক্ষা রোগে। দেব বাণী হয়, অষ্টমী বা চতুর্দশী তে স্বামীর মৃতদেহের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করলে স্বামী জীবন ফিরে পাবেন ।
(বাকি অংশ আগামীকাল)
Be First to Comment