শুভ জন্মদিন ওস্তাদ বিসমিল্লা খাঁ
“হাত পেতে নিয়ে চেটে পুটে খাই
বিসমিল্লার পাগলা সানাই,
হাত পেতে নিয়ে চেটে পুটে খাই
স্মৃতি বিজরিত পাগলা সানাই।”
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, ভারতের উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম ওস্তাদ বিসমিল্লা খাঁ। সানাইকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বাদনের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে ওস্তাদ উপাধিতে ভূষিত হন এই অমর শিল্পী। আট দশকের বেশি সময় ধরে অনবদ্য সানাই বাদনে তিনি মুগ্ধ করেছেন ভারতবর্ষসহ বিশ্বের কোটি দর্শকের হৃদয়। বাবা পয়গম্বর খান ও মা মিঠানের দ্বিতীয় সন্তান কামরুদ্দিন জন্ম নেয়। কিন্তু তাঁর পিতামহ নবজাতককে প্রথমবারের মতো দেখে ‘বিসমিল্লাহ’ বলায় তাঁর নাম হয়ে যায় বিসমিল্লা খাঁ। ওস্তাদ বিসমিল্লা খাঁ সাহেব’র পূর্বপুরুষেরা ছিলেন বিহারের ডুমরাও রাজ্যের রাজ সঙ্গীতজ্ঞ। ওস্তাদ বিসমিল্লা খাঁ সাহেবের সঙ্গীত গুরু ছিলেন প্রয়াত আলী বক্স বিলায়াতু। তিনি ছিলেন বারাণসীর বিশ্বনাথ মন্দিরের সানাই বাদক।
সানাইকে ভারতের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত জগতের যন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেয়ার কৃতিত্ব কেবল এবং একমাত্র ওস্তাদ বিসমিল্লা খাঁ সাহেবের। তিনি ১৯৩৭ সালে কলকাতায় অল ইন্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্সে সানাই বাজিয়ে একে ভারতীয় সঙ্গীতের মূল মঞ্চে নিয়ে আসেন। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি দিল্লীর লাল কেল্লায় অনুষ্ঠিত ভারতের প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসে বিসমিল্লা খাঁ সাহেব তাঁর অন্তরের মাধুরী ঢেলে রাগ কাফি বাজিয়ে মুগ্ধ করেছিলেন সারা ভারতবর্ষকে। আফগানিস্তান, ইউরোপ, ইরান, ইরাক, কানাডা, পশ্চিম আফ্রিকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, জাপান, হংকং সহ পৃথিবীর প্রায় সকল প্রান্তেই ওস্তাদ বিসমিল্লা খাঁ সাহেব বিলিয়েছেন তাঁর সুরের মুগ্ধতা। এতো সুনাম এবং অর্জন সত্তেও অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করতেন খান সাহেব। সবসময়ই ছিলেন বারাণসীর পুরোনো পৃথিবীতে। সাইকেল রিকশাই ছিল তাঁর চলাচলের মূল বাহন। অত্যন্ত অন্তর্মুখী বিনম্র এই সঙ্গীত গুরু বিশ্বাস করতেন যে সঙ্গীত শোনার বিষয়, দেখার বা দেখাবার নয়।
ওস্তাদ বিসমিল্লা খাঁ সাহেবকে উৎসর্গ করা অসংখ্য সম্মাননা ও অর্জিত পুরস্কারের মধ্যে ভারতরত্ন (২০০১), পদ্মবিভূষণ (১৯৮০), পদ্মভূষণ (১৯৬৮), পদ্মশ্রী (১৯৬১), সঙ্গীত নাটক একাডেমী পুরস্কার (১৯৫৬), তানসেন পুরস্কার (মধ্য প্রদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত), তালার মৌসিকী (ইরান প্রজাতন্ত্র, ১৯৯২), সঙ্গীত নাটক একাডেমীর ফেলো (১৯৯৪), সম্মানসূচক ডক্টরেট, (বানারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়), সম্মানসূচক ডক্টরেট, (বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়) উল্লেখযোগ্য। পরবর্তীতে গৌতম ঘোষ তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে নির্মাণ করেন প্রামাণ্যচিত্র “মিটিং অ্য মাইলস্টোন”।
ওস্তাদ বিসমিল্লা খাঁ সাহেব ১৯১৬ সালের আজকের দিনে (২১ মার্চ) ভারতের বিহারে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment