(পর্ব – ২ ও শেষাংশ)
—————————————-
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: নির্ভয়া কাণ্ডের আসামি ,বা হায়দ্রাবাদের ড,প্রিয়াঙ্কা রেড্ডির ধর্ষণকারীদের ফাঁসির দাবিতে দেশ উত্তাল। নির্ভয়া কাণ্ডের আসামিদের ফাঁসি আইনের দুর্বলতার জেরে বারবার ফাঁসি স্থগিত হওয়ায় হতাশ দেশের অধিকাংশ মানুষ।বাপুজীর অহিংসার দেশ ভারত।কিন্তু বাপুজির অহিংসার প্রতি আস্থা নেই মানুষের।খুনের বদলে খুন।একবার তো শুনেছিলাম কোন এক ধর্ষকের বাড়িতে চড়াও হয়ে জনতা ধর্ষকের দিদিকে গণ ধর্ষণ করে এসেছে।অর্থাৎ ধর্ষণের বদলে ধর্ষণ,খুনের বদলে খুন,।এখনতো কেন্দ্রীয় শাসক দলের সুবাদে জনপ্রিয় স্লোগান গোলি মারো শালো কো।
সমাজবিজ্ঞানীদের সমীক্ষা বলছে,ধর্ষণ ও খুনের মতো বিরল থেকে বিরলতম ঘটনার ক্ষেত্রে আদালত যে আসামিদের ফাঁসির আদেশ দেয় তারা মূলত সমাজের প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষ। শিক্ষার অভাব,জীবনের শুরু থেকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আতঙ্ক,সর্বোপরি সমাজের অবহেলায় তাদের অবচেতন মনে অপরাধ স্পৃহা কাজ করে।ইদানিং তো বিদেশে গবেষণাও চলছে।শুধু নবীন প্রজন্ম নয়,সব মানুষেরই অপরাধমূলক স্বভাবের পেছনে জিনগত ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের পাশাপাশি রক্তের রসায়নও কাজ করে।তারা দেখেন,রক্তে
টক্সোপ্লাজমোসিস আছে কিনা?
বিজ্ঞানীরা বলছেন,পথেঘাটে অপরাধ প্রবণতার অসুখগুলি যেমন,সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা আত্মহত্যার প্রবণতার পেছনে রয়েছে পরজীবী ঘটিত সংক্রমণ।যা কিনা ছড়ায় বিড়ালের বিষ্ঠা, আধসিদ্ধ মাংস বা দূষিত জলের মাধ্যমে। এই পরজীবী মানুষের দেহে প্রবেশের পর সুপ্ত অবস্থায় থাকলেও ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের রসায়ন বদলাতে থাকে ফলে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
যৌন অপরাধের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন,যৌন জীবনের ছটি স্তর।ষষ্ঠ স্তরটি ক্ষণস্থায়ী।১৬বছর বয়স থেকে মন যৌন জীবনের শেষ স্তরে আসতে শুরু করে।।এই স্তরে এসে যা পূর্ণতা পায়।বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে।এই স্বাভাবিক বিকাশ বাধা পায় দু ভাবে। এক, জন্মগত দৈহিক ত্রুটি জনিত বাধা, দুই, পরিবেশগত বাধা।আমাদের বর্তমান সমাজে উপার্জনক্ষম না হওয়ায় ১৭/১৮ বছর বয়সে বিয়ে করে স্বাভাবিক যৌনজীবন যাপন করা সম্ভব নয়।ফলে সমকামিতা,আত্মমেহন,ইত্যাদিতে লিপ্ত হয়।পাশাপাশি অসংযমী মন জোর করে নারী দেহ ভোগ করার প্রবণতা বাড়ায়।ধর্ষণ করে খুন কেন বা কার্যকারণ সম্পর্কে মানুষের মাথাব্যাথা নেই।অপরাধীর কঠোর শাস্তি তাই মানুষ দাবি করে।
আইনে তাই
সর্বোচ্চ শাস্তি বিধান আছে ফাঁসি।বিদেশে আদিম প্রথার বদলে গুলি করে ,গ্যাস চেম্বারে রেখে কিম্বা বৈদ্যুতিক
শক দিয়ে অপরাধীদের মেরে ফেলার বিধান তৈরি হয়েছে।মূল কথা জীবনের বদলে জীবন। এবার ফাঁসি বা আইনের পথে মৃত্যুদণ্ড কতটা মানবিক বা সভ্য সমাজের জন্য মানানসই তা নিয়ে বিতর্কে না গিয়েও প্রশ্ন ওঠে,ধর্মীয়গুরুরা যখন মানুষের আস্থার সুযোগ নিয়ে ধর্ষণ করে এবং খুন করে তাদের ফাঁসির দাবি অতটা জোরালো হয় না কেন?না রাষ্ট্র ,না,জনদাবি আন্দোলনে পরিণত হয়।রহস্যটা কি?
বহু বাবাজী অপরাধ প্রমাণে জেলবন্দী হয়েছেন।তবু হ্যামলিনের বাঁশির সুরে (পড়ুন আধ্যাত্বিক বচনে)ভাবাবেগে আপ্লুত হয়ে এইসব বাবাজীর পদতলে লুটিয়ে পড়ছেন।
শাজাহানপুরের এক আইনের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাজপেইজির মন্ত্রিসভার সদস্য প্রৌঢ় স্বামী চিন্ময়ানন্দ ।কিন্তু প্রমাণের অভাবে তাকে এলাহাবাদের উচ্চ আদালত জামিনে মুক্তি দিয়েছে।গত বছর ২০সেপ্টেম্বর তিনি গ্রেপ্তার হন।
স্বামীজির ট্রাস্টের এক কলেজের ছাত্রী অভিযোগে জানিয়েছিল, বাথরুমে তার স্নানের ছবি লুকানো কামরায় তুলে ব্ল্যাকমেল করা শুরু হয়।দিনের পর দিন লোকলজ্জার ভয়ে স্বামীজি তাকে ধর্ষণ করে গেছে।ধর্ষিতা তার অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে পাঁচটি ভিডিও ফুটেজ তুলে দেয় পুলিশের হাতে।ফতেহাবাদের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার যোগিন্দ্র শর্মা জানিয়েছিলেন,স্বামীজির আশ্রম থেকে আপত্তিকর বহু যৌন সরঞ্জাম উদ্ধার হয়।স্বামীজি শুধু একজন নয়,প্রায় ১২০জন নারীকে ব্ল্যাকমেল করে ধর্ষণ করেছেন বহুদিন ধরে ।এই স্বামীজি ছাড়াও রাম রহিম বাবা ,আশুতোষ মহারাজ, রামপাল,আশারাম বাপুও আছেন। কারোরই ফাঁসির সাজা হয় নি।স্বামী নিত্যানন্দ তো ধর্ষণে অভিযুক্ত হওয়ার পর পালিয়ে গেছেন দেশ ছেড়ে প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে।
হিন্দু বাবাজীদের কেলেঙ্কারির বহর এতোই বেড়ে গেছে যে অখিল ভারতীয় আখড়া পরিষদ ভন্ড বাবাজীদের একটি তালিকা বানিয়েছে। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল বোর্ডও একই পথে হেঁটেছে ।এই মুহূর্তে ইউরোপে কোনো ধর্মগুরুকে ইউরোপে যাওয়ার ভিসা দেওয়া হচ্ছে না।ফ্রান্স এ ব্যাপারে সবচেয়ে কঠোর। অনেকে বলেন, বাবাজিরাও রক্ত মাংসের মানুষ ।ব্রহ্মচর্য পালনে অবদমিত যৌনবেগ দমন করতে না পেরেই গুরুদেবরা সংযম হারিয়ে ধর্ষণ এবং প্রমাণ নষ্ট করতে ধর্ষিতাদের খুন করছেন।বিষয়টি এত সহজ নয়। আসলে ধর্মেই গুরুদেবদের ধর্ষণ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ধর্মগ্রন্থ বেদ ভারতম। সেখানে মহর্ষি গৌতম তার প্রিয়তম শিষ্য ১২বছর বয়সী প্রিয়দর্শন ঋষি কুমার বেদশকে নারীর যৌন চাহিদা নিবারণের দ্বায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে বলেন,গর্ভধারিনী জননী ব্যতীত যে কোনও নারীর কামাবেগ ঊর্ধ্বগামী করে তার যোনিতে শুক্রধারা নিক্ষেপ করে যোনিগর্ভ প্লুত করবে।
সনাতন(?)হিন্দু ধর্মের গরবে গর্বিত মানুষ জানেন কি সেযুগে গুরুদেবরা শুধু পরনারীকে ধর্ষণ করতেন তা নয়।নিজের ভাইএর বধুকেও ধর্ষণ করতে ছাড়েননি।দে বগুরু বৃহস্পতির ভাই ঋষি উতথ্য।তার স্ত্রী মমতা।ভাইএর অনুপস্থিতিতে মমতাকে তিনি জোর করেন সঙ্গমের জন্য।মমতা আপত্তি জানিয়ে বলেন ,আমি আপনার ভাইএর সন্তানের জন্ম দিতে চলেছি।আমার গর্ভে আর স্থান নেই ।দেবগুরু শোনেননি।
জোর করে ধর্ষণ করেন।(সূত্র:কালিপ্রসাদ সিংহের অনুবাদিত মহাভারত,আদিপর্ব,১০৪ অধ্যায়)।দেবগুরু বৃহস্পতির ছাত্র চন্দ্রও কম যান না। তিনি ধর্ষণ করেন গুরুর স্ত্রী তারাকে।(সূত্র:ব্রহ্ম বৈবর্ত পুরাণের কৃষ্ণ জন্ম খণ্ডের ৮০ অধ্যায়)।আবার চন্দ্রের কন্যা ভদ্রাকে ধর্ষণ করেন বরুণ দেব। কুন্তীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেন সূর্যদেব । এমন ঘটনার কথা আছে ভুরি ভুরি। সে যুগে সন্তান না হলে ব্রাক্ষণ কে দিয়ে স্ত্রীর ক্ষেত্রজ সন্তান সৃষ্টির ব্যাবস্থা ছিল ।এযুগেও হচ্ছে।একে বলে গুরুপ্রসাদী। সুতরাং মানুষের অজ্ঞতা আর আধ্যাত্বিক বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে নারী ধর্ষণ শুধু হিন্দু ধর্মে নয়,মুসলিম,খ্রিস্টান ধর্মেও আছে।এই অপরাধের জন্য পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত কোনও ধর্মেরই বাবাজিদের ফাঁসি হ য়েছে এমন তথ্য নেই।সমাজবেত্তারা বা সমাজসচেতন নাগরিকরা কি বিষয়টি ভেবে দেখবেন না ?নারীবাদী মহিলা সংগঠনগুলির মৌনতাও অবাক করে।
Be First to Comment