Press "Enter" to skip to content

সরস্বতীর বাহন জলচৌকি

Spread the love

——————–পর্ব ২(শেষাংশ)———————–
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: ৩০শে জানুয়ারি ২০২০ প্রথম পর্বে দেবী সরস্বতীর পাঁচটি রূপ বর্ণনা দিয়েছি।এখন বলছি বাকি রুপগুলির কথা। দেবীর ষষ্ঠ রূপ পুরুষ দত্তা ভারতী। বাহন হাতি। চতুর্ভূজা। দুটি হাতে বরাভয়, অন্য দুটি হাতে চক্র ও শতঘ্নি। দেবীর মুখমন্ডল পুরুষকৃতি। পুরাণ অভিধান শতঘ্নি অস্ত্রের বিবরণ দিয়ে বলেছে, এটি একটি পৌরাণিক অস্ত্র। একসময়ে শত শত্রু হননকারী। কণ্টকিত লৌহসার নির্মিত মুদগরকল্প, সুদৃঢ় ও বর্তুল প্রমাণ চার হস্ত।
দেবীর সপ্তম রূপ কালী বাহন বৃষ। চতুর্ভুজা। কিন্তু এই কালী দশমহাবিদ্যার কালী নন। দুহাতে বরা ভয়, ডানহাতে ত্রিশূল। বাঁহাতে শতঘ্নি। দেবীর অপর নাম শান্তা। সরস্বতীর অষ্টম রূপ মহাকালী। এই কালী ও শাক্ত তন্ত্রের দেবী নন। এই দেবীর কোনো বাহন নেই। চতুর্ভূজা। দুহাতে বরা ভয়, অন্য দুটি হাতে ষষ্ঠি ও শতঘ্নি। দেবীর নবম রূপ গৌরী। বাহন বৃষ। চতুর্ভূজা। দুহাতে বরাভয়, অন্য দুটি হাতে লাঠি (ষষ্ঠি) ও মঙ্গলঘট।

অন্য নাম মানসী। দেবীর দশম রূপ গান্ধারী। এই দেবীরও বাহন নেই। চতুর্ভূজা। দুহাতে বরাভয়, অন্য দুটি হাতে পরিখ ও শীর। এই শীর অস্ত্র প্রসঙ্গে অভিধান বলছে, প্রাচীন যুগের ভারতীয় অস্ত্র। মূলাংশ লৌহ নির্মিত, সার্ধত্ৰী হস্ত পরিমিত দীর্ঘ।দেবীর একাদশ রূপ সর্বাস্ত্র মহাজ্জ্বালা। বাহন বৃষ। দেবী অষ্টভূজা। ডান হাতে অসি, ত্রিশূল, ভল্ল ও
বৈষ্ণবাস্ত্র। বাঁহাতে বরাভয়, ব্রহ্মশীর, তীর ও পাশ। ভল্ল এক ধরণের বর্শা। ব্রহ্মশীর এক ব্রক্ষ্মাস্ত্র। মূল মালিক শিব। পাশ এক ধরণের অস্ত্র। যা শত্রুকে বেঁধে ফেলা যেত। এই অস্ত্র থেকে উৎপন্ন দড়ি লম্বায় হত দশ হাত। অভিধান বলছে গুণ, রজ্জু, কাপাশ রজ্জু, মুঞ্জ রজ্জু, পশু বিশেষের দেহের স্নায়ু আকন্দ পাতার আঁশ ও চামড়ার বিশেষ সূক্ষ্ম ত্রিশগাছি তন্তু দিয়ে তৈরি বানানো দড়ি এইসব দিয়ে বানানো হত। ছুড়ে মারার অস্ত্র। কিন্তু ব্যাকরণগত ভাবে ছুড়ে মারার বস্তুকে শস্ত্র বলে।
দেবীর দ্বাদশ রূপ মানবী। বাহন সাপ। চতুর্ভূজা। দু হাতে দর্পণ অন্য দুটি হাতে লাঠিও বরাভয়। দেবীর অপর নাম অশোকা। দেবীর ত্রয়োদশ রূপ বৈরাট্যা। বাহন সাপ। চতুর্ভূজা। দু হাতে বৈষ্ণবাস্ত্র।অন্য দুটি হাতে ভয় ও বরাভয়। দেবীর চতুর্দশ তচ্ছুপ্তা। বাহন হাঁস। চতুর্ভূজা। দু হাতে বরাভয়। অন্য দুটি হাতে ভল্ল ও বিজয়ধনু। এই ধনুকের মূল মালিক পরশুরাম। পরে মালিক হন দেবরাজ ইন্দ্র।সেটা কি করে দেবী পেলেন সে অন্য গল্প। দেবীর পঞ্চদশ রূপ মানসী। বাহন সিংহ। চতুর্ভূজা।
দান হাতে ভল্ল ও কুঠার। বাঁহাতে দর্পণ ও বিজয়ধনু। লক্ষ্য করলে দেখবো দেবীর অষ্টম রূপ গৌরী। তাঁর আর এক নামও মানসী। তবে সে দেবীর বহন বৃষ। যাইহোক দেবীর সর্বশেষ রূপ মহামানবী। বাহন ময়ূর। চতুর্ভূজা এই দেবীর দু হাতে বরাভয়,অন্য দুটি হাতে ভল্ল ও চক্র। দেবীর অপর নাম নির্বাণী।

পুরুষতান্ত্রিক বৈদিক সভ্যতায় নারী দেবী তেমন গুরুত্ব পাননি। পরবর্তী কালে সূর্যের তিন রূপকে বিভক্ত করা হয়। প্রাতে ঊষা। স্নিগ্ধ রূপ। মধ্যাহ্নে তেজদীপ্ত রূপ পুরুষ রুদ্র। সন্ধ্যায় কোমল রূপ সন্ধ্যা কে নারী রূপ বলা হয়ে থাকে। গায়ত্রীও বলা হয়। সব পুজোতে চাঁদমালা দেখি চাঁদের সঙ্গে কিন্তু সম্পর্ক নয়। বৈদিক সূর্য্ পুজোর পথ ধরে সব দেব দেবীর কল্পনা। তাই প্রতীকী সূর্যের তিন রূপকে প্রতিমার সঙ্গে রাখা হয়।
গ্রীক পুরাণেও পাই দেবী মিনার্ভাকে। তাঁর হাতেও বাদ্যযন্ত্র। চিনে সরস্বতী নারী দেবী নন। পুরুষ নাম মঞ্জুশ্রী। কালক্রমে চিন থেকে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবে মঞ্জুশ্রী জাপানে গিয়ে নারী দেবী বেনতেন এ রূপান্তরিত হন। দেবীর ষোলো রূপ হিন্দু পুরাণে এসেছে প্রাচীন জৈন ধর্মের অনুকরণে। জৈন শাস্ত্রে ১৬জন বিদ্যা দেবীর বর্ণনা আছে। মারকেন্ড মারকেয়েন্ডেয় পুরাণ অনুসারে দেবী শুধু যে বিদ্যার দেবী তা নয়। মহা সরস্বতী রূপ শুম্ভ নিশুম্ভ নামে দুই অসুরকে বধ করেন। তখন দেবী অষ্টভূজা। বইপত্র বাদ্যযন্ত্র ফেলে আট হাতে দেবী তখন তুলে নেন বাণ, কার্মুক, শঙ্খ, চক্র,হল, মুষল, শূল ও ঘণ্টা। প্রতিবেদনের শেষ মুহূর্তে মনে পড়ছে ঐতিহাসিক সেই ঘটনা। বাংলার মেয়েরা দেবী নারী হলেও পুজোর অধিকার পেতেন না । একশো বছরও হয় নি মেয়েরা সে অধিকার আদায় করেন। তবে পুজোর অধিকার হিন্দুধর্মে দেওয়া হয় নি। একথা হিন্দু পুরোহিতরা অস্বীকার করেন না। তাদের বক্তব্য বীজমন্ত্র উচ্চারণের স্বীকৃতি মেয়েদের নেই। কলকাতার চেতলা অঞ্চলে প্রদীপ সংঘের কালী পুজোয় মণ্ডপে মেয়েদের প্রবেশ আজও নিষেধ। তবে এবারের সরস্বতী পুজোতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন শিলিগুড়ির হায়দর পাড়ার বুদ্ধ ভারতী স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বপনেন্দু নন্দীর স্কুলের শিক্ষিকাদের দাবিতে অনুমতি দিয়েছেন ।তাই এবছর একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী স্নিগ্ধা সরকার স্কুলের সংস্কৃত শিক্ষিকা সাধনা মজুমদারের কাছে একমাস ধরে সংস্কৃত মন্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়েছে।ধর্মের কঠোর বিধান ভাঙছে। কিন্তু এই লোরিয়ের ব্যাপকতার জন্য আরও অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে ।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *