–আজ ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবি মুক্তি দিবস–
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা,‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী রচিত এবং সত্যজিৎ রায় নির্মিত একটি চলচ্চিত্র। সত্যজিৎ-পত্নী বিজয়া রায়ের স্মৃতিচারণা ‘আমাদের কথা’ থেকে জানা যায়, শিশুপুত্র সন্দীপ রায়ের অনুরোধে তিনি এই ছবিটি নির্মাণ করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গল্পকার উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন সত্যজিতেরই পিতামহ। পরিচালকের বহু অন্যান্য ছবির মতো এখানেও তিনি স্বয়ং চিত্রনাট্য রচনা ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। শুধু তাই নয়, এই ছবির সবকটি গান রচনা ও সুরারোপ তাঁরই করা। গল্পের দুই নায়ক গুপী ও বাঘা সঙ্গীতের অনুরক্ত, অথচ সাংগীতিক প্রতিভাহীন। এই কারণে গুপীর গ্রাম আমলকী ও বাঘার গ্রাম হরতুকী থেকে তারা বিতাড়িত হয়। পথে এক বনে দু’জনের সাক্ষাৎ হয় এবং সেখানে ভূতের রাজা তাদের তিনটি ‘বর’ দেন। প্রথম বরে তারা যখন ইচ্ছে মনমতো খাবার পেতে সমর্থ হয়। দ্বিতীয় বরে দু-জোড়া জুতো ও দু-জনের হাতে হাতে তালি দিয়ে দেশ-বিদেশ ঘোরার ক্ষমতা পায় ও তৃতীয় বরে তাদের সঙ্গীত প্রতিভা উন্নতি করে ও লোককে গান শুনিয়ে অবশ করে দেওয়ার ক্ষমতা পায় তারা। এরপর দু-জনে শুন্ডী রাজ্যের রাজাকে গান শুনিয়ে তাঁর সভাগায়ক হয়ে সেখানেই থেকে যায়। শুন্ডীর প্রতিবেশী হাল্লা শুন্ডীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে, তারা গুপ্তচরের বেশে হাল্লায় যায় ও হাল্লার রাজা ও মন্ত্রীদের সততা ও সঙ্গীত প্রতিভা দিয়ে পরাস্ত করে যুদ্ধ থামিয়ে দেয়। এরপর শুন্ডীর রাজকন্যা মণিমালার সঙ্গে গুপীর ও হাল্লার রাজকন্যা মুক্তামালার সঙ্গে বাঘার বিয়ে হয়।
মূলত ছোটদের জন্য নির্মিত হলেও ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ সব বয়সের দর্শকদেরই উপভোগ্য। ছবির মূল আকর্ষণ সত্যজিৎ রচিত গানগুলি, সাড়ে ৬ মিনিটের ভূতের নৃত্যের একটি দৃশ্য ও ভারতীয় স্টাইলে নির্মিত বিশেষ কয়েকটি স্পেশাল এফেক্ট। মুক্তির ছয় মাসের মধ্যে ছবিটি সারা বাংলায় শুধু জনপ্রিয়তাই অর্জন করে না, বাংলার জনপ্রিয় সংস্কৃতির একটি স্থায়ী আইকনে পরিণত হয়। ১৯৭০ সালে ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবিটি সেরা ফিচার ফিল্ম ও সেরা পরিচালনায় জাতীয় পুরস্কার পায়। এছাড়াও ছবিটি চারটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছিল — অ্যাডিলেডে “The Silver Cross”, অকল্যান্ড চলচ্চিত্র উৎসবে “সেরা পরিচালনা”-র পুরস্কার, মেলবোর্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে “সেরা ছবি”-র পুরস্কার এবং টোকিও-তে “Merit Award”।
‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ১৯৬৮ সালের আজকের দিনে (৮ মে) মুক্তি লাভ করেছিল।
Be First to Comment