শু ভ জ ন্ম দি ন স ন্ধ্যা রা য়
বাবলু ভট্টাচার্য : একটি ছোট খাট কিন্তু অসম্ভব মায়াবী মিষ্টি মুখের কিশোরী পায়রা উড়িয়ে গেয়ে উঠলেন পায়রার মত শুভ্র উচ্ছ্বলতায়- ‘ও বাক বাকুম বাকুম পায়রা’ …। আর প্রেক্ষাগৃহ ভরা দর্শক আবিষ্কার করলেন বাংলা চলচ্চিত্রের আগামী দিনের এক উজ্জ্বল নায়িকাকে। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গানে ঠোঁট মিলিয়ে বাক বাকুম করে উঠা সেই কিশোরীর নাম সন্ধ্যা রায়। আর ছবির নাম ‘মায়ামৃগ’।
সন্ধ্যা রায় নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করলেও কিছুদিন পর তিনি তাঁর পরিবারের সাথে বাংলাদেশে চলে যান।
সন্ধ্যা রায়ের পৈতৃক নিবাস যশোরের বেজপাড়াতে। তাঁর ঠাকুরদাদা বাংলাদেশের একজন জমিদার ছিলেন। তিনি ৭ বছর বয়সে তাঁর বাবাকে এবং ৯ বছর বয়সে মা’কে হারান।
মা-বাবা’র মৃত্যুর পর তিনি তাঁর মামার কাছে চলে যান এবং বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৭ সালে, তিনি আবার এই দেশে ফিরে আসেন।
তাঁর অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘মামলার ফল’। যেখানে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করেছিলেন। তাঁর অসামান্য অভিনয় কৌশলের তিনি অনায়াসে যে কোন সিনেমার চরিত্রের সাথে সহজেই খাপ খাওয়াতে পারতেন।
তাঁর সমালোচক কর্তৃক প্রসংশিত সিনেমাগুলোর মধ্যে সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনী সংকেত’ এবং তরুণ মজুমদারের ‘ঠগিনী’ এবং পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র যেমন, ‘বাবা তারকনাথ’।
তিনি বিশ্বজিৎ এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে রোমান্টিক সিনেমা ‘মনিহার’ এবং বিশ্বজিতের বিপরীতে থ্রিলার সিনেমা ‘কুহেলি’তে অভিনয় করেন। এই সিনেমায় তারকা ভরপুর একটি দল অভিনয় করে, এরমধ্যে ছায়া দেবী, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, সুমিতা স্যানাল এবং সত্য বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন।
সন্ধ্যা রায়কে সহজাত অভিনয় প্রতিভার অধিকারী শিল্পী হিসাবে আখ্যায়িত করা যায়। কত বিচিত্র চরিত্রে সহজ রূপায়ন করেছেন। ছবি করেছেন কলকাতা, মুম্বাই এবং বাংলাদেশে।
ঢাকায় তিনি দুটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ভারত বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় ‘পালংক’ তাঁর জীবনের স্মরণীয় ছবি। এছাড়া কাজী জহিরের পরিচালনায় ‘ফুলের মালা’ নামে একটি বাণিজ্যসফল ছবিতেও তিনি অভিনয় করেছেন।
তাঁর অভিনীত হিন্দী ছবি একটি ‘আসলী নকলী’। সত্তর হতে নব্বই এর দশক পর্যন্ত অর্থাৎ ত্রিশাধিক বছর ধরে দাপটের সংগে কলকাতার অসংখ্য বাংলা ছবিতে অভিনয় করে নিজের জন্যে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তিনি গড়ে নিয়েছেন।
সুচিত্রা সেন, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, সুপ্রিয়া দেবী, অরুন্ধতি দেবী, অর্পণা সেন প্রমুখ নায়িকাদের মধ্যে নিজের অবস্থান করে নেওয়া অসম্ভব কঠিন কাজ হলেও সন্ধ্যা রায় তা করেছেন সহজে। সহজাত প্রতিভার কল্যাণে ধরে রেখেছিলেন তাঁর মিষ্টি মুখের লাবণ্যে যা একেবারেই বাঙালির চিরন্তন প্রতিমা।
শিল্পীজীবনের পরমারধ্য শিল্পচর্চাই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান-সাধনা যে সাধনা তাঁকে পরিচিতি দিয়েছে, স্বীকৃতি দিয়েছে অসংখ্য পুরস্কারে।
তাঁর অভিনীত অসংখ্য ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছবির সংখ্যাও কম নয়। বিশেষ করে উত্তমকুমারের বিপরীতে ‘তিন অধ্যায়’, ‘ভ্রান্তি বিলাস’, ‘সূর্যতাপ’ প্রভৃতি ছবির নাম উল্লেখ করতেই হয়। তবে বেশি ছবি তাঁর বিশ্বজিৎ, সৌমিত্র এবং অনুপকুমারের সঙ্গে। বিশ্বজিৎ ও সৌমিত্রের বিপরীতে ‘মনিহার’ তাঁর অসাধারণ ব্যবসা সফল ছবি।
তাঁর অভিনয় প্রতিভার স্ফুরণ সমৃদ্ধ ছবিও অনেক। ‘গঙ্গা’, ‘পালংক’, ‘বাঘিনী’, ‘সংসার সীমান্তে, ‘নিমন্ত্রণ’, ‘দ্বীপের নাম টিয়া রং’।
বিশেষ করে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অমর ছবি ‘অশনি সংকেত’ তাঁকে অমর করে রাখবে আগামী প্রজন্মের কাছে।
বিশেষ করে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অমর ছবি ‘অশনি সংকেত’ তাঁকে অমর করে রাখবে আগামী প্রজন্মের কাছে।
সন্ধ্যা রায় ১৯৪৩ সালের আজকের দিনে (১১ এপ্রিল) পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment