…………মন ও শরীরের বন্ধন দৃঢ় করে ঘুম……….. মৃদুলা ঘোষ: কলকাতা,২৭মে, ২০২০। “ঘুমের মাসি ঘুমের র পিসি মোদের বাড়ি এসো”… এই আমন্ত্রণ সকল মানুষের জীবন ভর থাকে। সাম্প্রতিক গৃহবন্দী দশা বা এই দশা পার করেও থাকুক এই চাওয়া। জীবের যে সকল স্বাভাবিক ক্রিয়া আছে তার মধ্যে নিদ্রা বা ঘুম হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। আমরা জীবনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ সময় ঘুমিয়ে কাটাই, তার মধ্যে স্বপ্ন ও দেখি। ঘুমের মধ্যেই আমরা সবথেকে বেশি শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম নিয়ে থাকি। তবে অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়া গুলো যেমন শ্বাস প্রশ্বাস, হৃদপিন্ডের কম্পন, রক্তসঞ্চালন ইত্যাদি অব্যাহত থাকে।
বরং, অপর একটি প্রক্রিয়া চলতে থাকে, সেটি হচ্ছে ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে গৃহীত আমাদের অসংখ্য তথ্য রাশি গ্রন্থ, বিশ্লেষণ সাজানো হয়। আমরা যখন জেগে থাকি তখন বাস্তব পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যস্ত থাকি। ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে নানাধরনের নানা তথ্য প্রতি নিয়ত ব্যাহত হয়। তাই ঘুমের মধ্যে আমরা সচেতন অবস্থায় থাকি না বলে নতুন তথ্য ও গ্ৰহন করি না। তারপর মস্তিষ্কের মধ্যে থাকা এলোমেলো তথ্য গুলো বিশ্লেষণ করে সাজাতে থাকি। এই কারণে ঘুম একটি অচেতন প্রক্রিয়া।
হিপোক্যাম্পাস হল সচেতন শিক্ষা এবং স্মৃতির মূল কেন্দ্র। তাই ঘুমের সময় মস্তিষ্কের নানা অংশ হিপোক্যাম্পাস এর সঙ্গে স্নায়বিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখে। ক্লান্তি দূর করার জন্য ঘুম একটি অপরিহার্য প্রক্রিয়া। মানুষ যখন খুব বেশী ক্লান্ত হয়ে পরে, তখন আবার ঘুম আসে। তবে ঘুমের সময়, ইন্দ্রিয় উদ্দীপক উপাদানের জন্য ঘুম ব্যাহত হয়। যেমন, অত্যাধিক আলো, অত্যধিক শব্দ, মারাত্মক দুর্গন্ধ প্রভৃতি।
ঘুমের মধ্যে অপর এক অভিজ্ঞতা হলো অনৈচ্ছিক ভাবে স্বল্প সময়ের জন্য অচেতন অবস্থা থেকে সচেতন অবস্থায় চলে আসে। তখন সে নানা রকম ঘটনা দেখতে থাকে, যা বাস্তব বলে মনে হলেও বাস্তব নয়। এই পরিস্থিতির নাম স্বপ্ন। ঘুমের মাঝে সজ্জিত করন প্রক্রিয়া চলে, নতুন ও পুরানো ফাইলের সংমিশ্রণ ঘটে। তখন নানা রকম কাহিনী তৈরি হয়, যার কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই। এই কারণে আমরা স্বপ্নের মধ্যে আমরা অবাস্তব বিষয়বস্তু অবলোকন করি।
সারা রাতের ঘুম কে দুভাগে ভাগ করা যায়। Rapid Eye movement এবং Non Rapid Eye Movement. যেখানে ঘুমের পর্যায় অনুযায়ী বৈশিষ্ট্য থাকে। প্রথম পর্যায়ে ঘুম ঘুম ভাব আসে, মস্তিষ্ক ও পেশীর নিষ্ক্রিয়তা শুরু হয়। শেষ হয় যখন ঘুমে আছন্ন হয়ে চোখের সঞ্চালন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকে। রক্তচাপ, শ্বাস প্রশ্বাস, তাপমাত্রা সব থেকে কম থাকে, শরীর অনড় হয়ে পড়ে। এরমধ্যে শরীর কে নিয়ন্ত্রণ করে বায়োলজিক্যাল ক্লক যা রাতে ঘুমিয়ে পড়া থেকে সকাল এ জেগে ওঠার কাজটি নিয়ন্ত্রণ করে। ছন্দবদ্ধ গতিতে এই কাজটি প্রতি ২৪ ঘন্টায় ঘটতে থাকে।
যার অবস্থান মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস এ একে বলে Circadian Clock, হাজার নিউরন দিয়ে তৈরি। আমাদের জীবনে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা ও তাৎপর্য বুঝতে পারলে প্রশ্ন আসে ঘুম না হলে কি হবে। ঘুম না হলে আসে ক্লান্তি, অলসতা, দুর্বলতা, আর অবসাদ। দেখা দেয় কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, গ্যাস অম্বল, এর থেকেই তৈরি হয় মানসিক অসুস্থতা। তাই অনিদ্রার কারন খুঁজে, সঠিক ভাবে ঘুমের চেষ্টা করতে হবে নিজেকেই। প্রাত্যহিক জীবনে কিছু অভ্যাস, সচেতনতা, কর্মপদ্ধতি সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
যেমন, নিজের শরীর, স্বাস্থ্য অনুযায়ী পরিশ্রম করুন। নিজেকে ভালো কাজে ব্যাস্ত রাখলে মানসিক অস্থিরতা আসবে না। নিয়মিত একটু শরীর চর্চা, সুষম খাদ্যাভ্যাস খুব দরকার পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য। অন্যদিকে, একজন ব্যক্তি নিজেই বুঝতে পারেন তিনি কেন নিদ্রা হীনতায় আক্রান্ত। সেই সমস্যা, অসুবিধা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসতে হবে সেটাও তাকে ঠিক করতে হবে।
যদি শারীরিক সমস্যা হয় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কথায় আছে, দুর্বলের ঘুম সবলের ঘাম। মানুষ সবল হোক বা দুর্বল, ঘুম একান্তই প্রয়োজন।
Be First to Comment