সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়/গোপাল দেবনাথ: কলকাতা,৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২০। অ্যাবোটস্ ল্যাবরেটরিজ একটি বহুজাতিক বিখ্যাত ওষুধ নির্মাতা সংস্থা।আমেরিকার এক চিকিৎসক ওয়ালস কেলভিন এওয়ার্ড এর ছিল ছোট্ট একটি ওষুধের দোকান। অধ্যবসায় দিয়ে তিনি ১৮৮৮ তে গড়ে তোলেন শিকাগোতে এক ওষুধের ব্যবসা। দিনে দিনে আজ তা মহীরুহে পরিণত হয়েছে। ওষুধ নির্মাণ ও বিপণনের সাথে সাথে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে স্বাস্থ্য সম্পর্কে জনচেতনা গঠনের এক সামাজিক দায়িত্ব গ্রহণের কর্মসূচি নিয়ে থাকে এই বহুজাতিক সংস্থা। যার জন্য অবশ্যই সাধুবাদ প্রাপ্য।বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতার এক সাততারা হোটেলে এই ওষুধ নির্মাতা সংস্থা আয়োজন করে গ্রো রাইট শীর্ষক সেমিনার। সাংবাদিকদের পাশাপাশি ছিলেন বেশ কিছু শিশু এবং অভিভাবকেরা।সেমিনারে অংশ নেন সংস্থার পেডিয়াট্রিক নিউট্রিশন বিভাগের প্রধান ডাঃ ইরফান শেখ, ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থ এর বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুমন পোদ্দার এবং গ্রো রাইট গিল্ড মেম্বার নিউট্রিশনিস্ট ডাঃ এলিন ক্যান্ড।
মূলত শিশু বিকাশের সেমিনারের এই আলোচনায় গুরুত্ব দেওয়া হয় চারটি বিষয়ে। এক) সঠিক পুষ্টি, দুই)সঠিক খেলাধুলা, ৩)সঠিক পরিচর্যা ৪)সঠিক অনুশাসন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিশুকে পেট ভর্তি করে খাওয়ানো টা বড় কথা নয়। শিশুরা কি খাচ্ছে সেটা বড় কথা। আর্থিক স্বচ্ছল পরিবারের মায়েরা শিশুদের পছন্দের খাদ্য দিতে গিয়ে অস্বাস্থ্যকর বাইরের খাদ্য দিচ্ছেন। অথচ সেই খাদ্যের খাদ্যগুণ যে নেই সেটা দেখছেন না। মূল কারণ শিশুর বিকাশের জন্য কোন খাদ্য স্বাস্থ্যকর আর কোন খাদ্য অস্বাস্থ্যকর সেটা বোঝা।
এটা অজ্ঞতা। ফাস্ট ফুড, কৃত্রিম রং মিশ্রিত খাদ্য শিশুদের জন্য বিষ। অতিরিক্ত স্নেহজাত খাদ্য শিশুর ওজন বাড়িয়ে দেয়। সাধারণ ডাল ভাতেই রয়েছে সঠিক পুষ্টি। সঙ্গে দুটি মরশুমি ফল যথেষ্ট। মিষ্টি জাতীয় খাবারের ক্ষেত্রে রাশ টানা দরকার।
সাম্প্রতিক কালে শিশুদের অপুষ্টি ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে যে হারে বাড়ছে সেই সময়ে এই সচেতনতামূলক সেমিনার প্রয়োজনীয়।
ইউনিসেফের সমীক্ষা, ভারতে প্রতি সেকেন্ডে ৫ বছর বয়সের নিচে শিশুরা অপুষ্টির শিকার হচ্ছে।সংখ্যার হিসেবে প্রায় ৬৯ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হচ্ছে।গ্রামাঞ্চলে যখন অপুষ্টিজনিত কারণে শিশুরা ভুগছে তখন শহুরে শিশুদের মধ্যে ও বি সি টি বাড়ছে। মূলত অস্বাস্থ্যকর খাবারের ফলেই এই সংকট। সুতরাং পারিবারিক স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। ইউনিসেফের চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট বলছে, ২০১৮ তে ভারতে অপুষ্টিতে মারা গেছে প্রায় ৯ লক্ষ ভারতীয় শিশু। দি স্টেট অফ দি ওয়ার্ল্ডস্ চিলড্রেন ২০১৯শীর্ষক রিপোর্ট বলছে, ভারতে প্রতি হাজার শিশুর ৩৭ জন শিশুর মৃত্যু হয় অপুষ্টিসহ নানা কারণে।
২০১৮তে ভারতে অপুষ্টিসহ নানা অসুখে মারা গেছে ৮ লক্ষ ৮০ হাজার শিশু। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, দেশের মাত্র ২১ শতাংশ শিশুর খাদ্য তালিকায় সুষম আহারের যথাযথ সমন্বয় মেলে। বাকি ৭৯ শতাংশ শিশু পুষ্টির অভাবে জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পাঁচ বছর এর নিচে শিশুরা ভুগছে হাইপার টেনশন, সুগার ও কিডনির রোগে। পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের মধ্যে পাঁচ জনের একজনের শরীরে ভিটামিন এ র অভাব। প্রতি তিন জনের একজনের শরীরে ভিটামিন বি-১২ এর অভাব।
পাঁচ জনের দুজন ভোগে রক্তাল্পতায়। মাইক্রো নিউত্রিয়েন্স এর অভাবে রিকেট, রাতকানা, অন্ধত্বের কবলে পড়ছে শিশুরা। অভিভাবকদের অজ্ঞতা এবং দারিদ্রতা এর মূল কারণ। এই প্রতিবেদকের প্রশ্ন ছিল- সমীক্ষা বলছে, ভারতে শহরে ৪০ শতাংশ ও গ্রামে ৬০শতাংশ পানীয় জল দূষিত। সেক্ষেত্রে পুষ্টিকর খাদ্য শিশুরা পেলেও দূষিত জল সেই খাদ্যের পুষ্টির গুণ খর্ব করে। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত কি?
ডাঃ সুমন পোদ্দার জবাবে কেরলের কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া বন্যার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সেখানে ভয়াবহ বন্যাতে দূষিত জলপানে কোনো মৃত্যু বা অসুস্থ হবার খবর আসেনি।সুতরাং জলের যে দূষণের কথা বলা হয় তা অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এছাড়াও তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে জল ফুটিয়ে পান করলেই সমস্যার সমাধান হয়।কিন্তু বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা বলছে, জল ফোটানোর সময় লাগবে প্রায় তিরিশ মিনিট। সেই জল অন্য পাত্রে নিলে জল আবার দূষিত হবে। ফোটানোর পর মাত্র ২৪ঘণ্টা সেই জল পানের উপযুক্ত।গ্রামাঞ্চলে আর্থিক দুর্বল মানুষ রান্নার প্রয়োজনে গ্যাস ব্যবহারে অপারগ অত্যাধিক মূল্যের কারণে। সেখানে জল ফুটিয়ে খাওয়া তাদের জন্য বিলাসিতা বই কিছু নয়।
সুতরাং শহরাঞ্চলে এই সেমিনার যুক্তিযুক্ত হলেও গ্রামাঞ্চলে যেখানে দেশের অধিকাংশ শিশু বড় হয়ে উঠছে সেখানে একদিকে দারিদ্রতা অন্যদিকে অশিক্ষাজনিত অজ্ঞতা সুষ্ঠু ভাবে বেঁচে থাকা অলীক স্বপ্ন হয়েই থেকে যাচ্ছে।
শিশুর মানসিক ও শারীরিক সঠিক বিকাশ শীর্ষক অনুষ্ঠান গ্রো রাইট
More from GeneralMore posts in General »
- মোহনবাগানের নির্বাচনের দিন ঘোষণা হবে আগামী শনিবার….।
- What is PCOS? A Comprehensive Guide to Understanding Polycystic Ovary Syndrome….
- TV9 বাংলার নতুন নিউজ সিরিজ ‘পায়ে পড়ি বাঘ মামা!’….।
- আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার উদ্যোগে ১২১১ তম রক্তদান শিবিরে সাধারণ মানুষের বাঁধ ভাঙা উচ্ছাস….।
- একাদশ বার্ষিকী শ্রী চৈতন্য জন্মোৎসব ও মেলা….।
- ১০ তম প্রণব রথ ও হর গুরু শঙ্কর শিব শম্ভুর শতবর্ষ পালন….।
Be First to Comment