শান্তিনিকেতন থেকে সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়:১৫ মার্চ ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে আপ্লুত রবি কবি বলেছিলেন, ওরে গৃহিবাসি, খোল দ্বার খোল, লাগলো যে দোল…… প্রতি বছর বসন্ত উৎসবে শান্তিনিকেতনের আশ্রম আকাশ বাতাস মুখরিত হয় এই গানে।
সাতরঙা আবিরে আবিরে ছেয়ে যায় আশ্রমের ভূমি। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সরকারি নির্দেশে আগেই বসন্ত উৎসব বাতিল হয়ে যায়। বিষাদের কালো মেঘ ছেয়ে যায় কবির সাধের শান্তিনিকেতনে। তবু রবীন্দ্র প্রেমী বাঙালি দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে দলে দলে হাজির হন শান্তিনিকেতনে। আশ্রমের গুরুগৃহে না যাওয়া গেলেও বাইরে থেকে দর্শন করবেন কবির আশ্রম এই আশা নিয়ে। দোলের পর সপ্তাহান্তের ছুটি কাটাতে অনেক মানুষ এসে ভিড় জমান শান্তিনিকেতনে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে করোনা আতঙ্কের জেরে সেই বাইরে থেকে কবির আশ্রম দেখারও সুযোগ হারালেন। বিশেষ নির্দেশে আশ্রম প্রাঙ্গণও আগামী ৩১মার্চ পর্যন্ত আপৎকালীন প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়েছে। তাই ভরসা শুধু শনিবারের মেলা। তাই ভিড় উপচে পড়ে সেখানে।
প্রশাসন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে সেই মেলাও আজ থেকে বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছে। কথা হচ্ছিল কলকাতা থেকে আসা তরুণ স্বামী- স্ত্রী নন্দ পাল ও অর্চনা পালের সঙ্গে। কলকাতায় তাদের কেবল টিভির ব্যবসা। পায়ে তাঁদের সর্ষে। সুযোগ এলেই তাঁরা বেরিয়ে পড়েন দেখবো এবার জগতটাকে এই সংকল্প নিয়ে। এবার তাই এসেছিলেন শান্তিনিকেতন। নন্দবাবু জানান, এসেছিলাম ডিনার করতে। শুনলাম ডিনার নয়, মিলবে টিফিন। এখন দেখছি জল খেয়েই বাড়ি
ফিরতে হবে। কবিগুরুর আশ্রমটুকু যে বাইরে থেকে দেখবো সেটাও হলো না। বিশ্বভারতী প্রশাসন জানিয়েছেন, বিদেশি ছাত্রছাত্রী ছাড়া সব ছাত্রছাত্রীদের হোস্টেল ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই ভারাক্রান্ত মুখে অনেক আশা নিয়ে শান্তিনিকেতনে আসা রবীন্দ্র প্রেমীরা সবাই সফর সংক্ষিপ্ত করে ফিরে যাচ্ছেন।মাথায় হাত স্থানীয় ছোট ব্যবসায়ীদের।
সারা বছর তারা প্রতীক্ষা করেন বসন্ত উৎসবের এই মুহূর্ত।বেচা কেনায় তাদের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। ভুবনডাঙার এক শাড়ি ব্যবসায়ী বললেন, প্রচুর শাড়ির স্টক তুলেছিলাম, সব ভেস্তে গেল। স্থানীয় বাসিন্দা তুষার ভট্টাচার্য বলেন, শান্তিনিকেতনের ইতিহাসে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। এদিকে আবার গোদের ওপর বিষফোঁড়া। আবহওয়া দফতর পূর্বাভাস দিয়েছিল, রাজ্যের বাঁকুড়া , পুরুলিয়ায় বৃষ্টিপাত হবে। কিন্তু প্রতিবেশী জেলা বীরভূমেও আজ রবিবার সকাল থেকে আকাশ মেঘলা।শান্তি নিকেতনে বৃষ্টি পড়ছে। ফলে পর্যটকরা হোটেলবন্দী হয়ে আছেন। ভরসা টেলিভিশন। শান্তিনিকেতনে এবার বসন্ত বন্দনা মলিন হয়েই রইল।
Be First to Comment