মৃদুলা ঘোষ: কলকাতা, ৫জুন, ২০২০। সৃষ্টির শুরু থেকেই নিজেকে সুন্দর দেখানো সকল মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। মানুষ যখন সাধারণ ভাবে নিজেকে সুন্দর করে সন্তুষ্ট হতে পারেনা। এই সময় কালে কি পুরুষ বা নারী নিজেকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে সারা গায়ে হাজারো আঁকিবুকির মাধ্যমে নিজেকে সুন্দর দেখানোর খেলায় মেতে ওঠে। আধ খোলা শরীরে নানা রঙের সাহসী চিহ্ন র নাম ‘উল্কি’, আন্তর্জাতিক ফ্যাশন জগতে ট্যাটু নামে জনপ্রিয়। পোশাক যেমনই হোক শরীর জুড়ে এই শিল্পের কাজ বদলে দিতে পারে আপনার সৌন্দর্য। ট্যাটু একধরনের শিল্প, যেখানে অমোচনীয় কালি ত্বকের রঙ পরিবর্তন করার জন্য বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ত্বকের ওপর অংশে প্রয়োগ করা হয়। গ্ল্যামার জগতের অভিনেতা অভিনেত্রী থেকে শুরু করে এন্টারটেইনমেন্ট জগতের প্রচুর ব্যক্তিত্ব ট্যাটু করে থাকেন স্টাইলের অঙ্গ হিসেবে।
আবার অনেক প্রেমিক প্রেমিকা নিজেদের প্রেম কে আরও মজবুত করার জন একে অপরের নাম নিজেদের শরীরে ট্যাটু করে চিরস্থায়ী করে রাখে। এমন কি পরিবারের লোকজন নিজেদের নাম, প্রিয় জনের নাম সহ ঠাকুর দেবতার ছবিও শরীরে ট্যাটুর মাধ্যমে চির স্থায়ী করে রাখে। তবে বিশ্বজুড়েই উল্কির প্রচলন দেখা যায়। জাপানের আদি গোষ্ঠী আইনু ঐতিহ্যবাহী ভাবে তাদের মুখে উল্কি ব্যবহার করে। বর্তমানে বিশ্বে কিছু জাতি আছে যারা এখনও ট্যাটু বা উল্কি কে ঐতিহ্য বলে মনে করেন। উত্তর আফ্রিকা র বার্বারে র টামাজঘা, নিউজিল্যান্ড এর মাউরি, তাইওয়ানের আতায়া, পলিনেশিয়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে, বোর্ণিয়ো, মেন্তায়োয়ী দ্বীপপুঞ্জ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, কম্বোডিয়া তে আঞ্চলিক প্রথা হিসেবে ট্যাটু বা উল্কি র প্রচলন আছে। ভারতের উত্তর পূর্বে ট্যাটু বা উল্কি কে আঞ্চলিক ঐতিহ্য বলে মনে করা হয়। তবে স্থান ভেদে ট্যাটু করার প্রথা ও ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা রাখে।
ট্যাটু যে কি অসাধারণ শিল্প পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে উঁকি দিলে বোঝা যায়। ট্যাটু র মাধ্যমে তৈরী হতে পারে একটা গোটা পোশাকের অবয়ব। ট্যাটু হল বিভিন্ন রঙের পিগমেন্ট যা সূঁচ দিয়ে গেঁথে একেবারে ত্বকের নিচের স্তরে বসিয়ে দেওয়া হয়। প্রাচীনকালে ট্যাটু মূলত পশু র চর্বি দিয়ে করা হতো। কাঁটা ওয়ালা গাছের কাঁটা ব্যবহার করা হতো চামড়া কাটা র জন্য। বর্তমানে আধুনিক প্রক্রিয়ায় ট্যাটু করা হয়। ট্যাটু নিড্লস, ট্যাটু মেশিন, ট্যাটু ইনক, ট্যাটু ডিজাইন পেন, কার্বন পেপার, পেট্রোলিয়াম জেলি। দি আমেরিকান আ্যকাডেমী অফ ডারমাটোলজি পাঁচ প্রকারের ট্যাটু র কথা বলেছে। ১.ট্রমাটিক বা ন্যাচারাল ট্যাটু, ২.আ্যমেচার ট্যাটু ৩.প্রফেশনাল ট্যাটু ৪.কসমেটিক ট্যাটু ৫.মেডিকেল ট্যাটু। তবে সাধারণত ট্যাটু দুপ্রকার- পার্মানেন্ট এবং টেম্পোরারি। পার্মানেন্ট ট্যাটু তে প্রথমে ত্বকের উপর রঙ ফেলা হয়, তারপর সেই রঙের সূঁচ দিয়ে গেঁথে একের পর এক নকশা তোলা হয়। এখানে একটি প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসে এরকম ট্যাটু কি শরীরের পক্ষে ক্ষতি কর? যারা শরীরে ট্যাটু করান তাদের জেনে রাখা ভালো ট্যাটু করতে যে রঙ ব্যবহার করা হয়, তার সাথে রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়, যা ট্যাটু মেশিনের সাহায্যে শরীরে প্রবেশ করছে তাতে নানা অসুখ আক্রমণ করতে পারে। এমনিতে ট্যাটু করার পর ত্বকের ঐ অংশ ফুলে যায়। এই নকশা চিরস্থায়ী হয়ে যায় নিজের শরীরে। টেম্পোরারি ট্যাটু তে হেনার সাহায্যে ত্বকের উপর নানারকম নকশা তৈরি করা হয়। ট্যাটু যে শুধু ফ্যাশনের জন্য করা হয় তা নয়, এর মাধ্যমে চোখে লাইনার এঁকে দেওয়া যায়, মুখে নতুন করে ইচ্ছা মতন তিল করা যায়,লিপ লাইনার করা যায়, প্রয়োজনে লেজার রশ্মি দিয়ে তুলে ও ফেলা যায়। পিঠে, কোমরে, হাতে, পায়ে, পেটে, মুখে সব জায়গায় ট্যাটু আঁকা যায়। আধুনিক ফ্যাশনে ট্যাটু র কোনও বিকল্প হয় না। যেকোনো ফ্যাশনে মহিলাদের জন্য শাড়ি, সঙ্গে ব্লাউজ, লিপস্টিক, নেলপালিশের মতোই আনুষঙ্গিক হিসেবে থাকতে পারে ট্যাটু। শাড়ি পরলে ব্লাউজের ডিজাইন অনুযায়ী উন্মুক্ত অংশে ট্যাটু করা যায় গ্লিটার ট্যাটু দিয়ে, যেকোনো সিল্ভলেস পোশাকের জন্য হাতে ট্যাটু করা যায়। নাভির চারপাশে ট্যাটু করা যায়। প্রচুর ফুটবলাররা পায়ে ও হাতে অনেক টা অংশ জুড়ে ট্যাটু করে। তবে ট্যাটু করার আগে কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে হবে। যেমনঃ যেখানে ট্যাটু করবেন সেখান কার যন্ত্রপাতি যেন সঠিকভাবে স্টেরিলাইজ করা আছে কি না। ২. খালি পেটে বা মদ্যপ অবস্থায় ট্যাটু করতে বসা যাবে না। ৩.যেকোনো রকম অসুস্থ অবস্থায় ট্যাটু করানো যায় না। ৪.ট্যাটু করানোর পর সঠিক আহার ও বিশ্রাম প্রয়োজন।
৫.ত্বকের যে জায়গায় ট্যাটু করা হবে, সেই জায়গা যেন পরিস্কার থাকে। ৬.ট্যাটু করা জায়গা অন্তত ২৪ঘন্টা ব্যান্ডেজ করে রাখা দরকার। ট্যাটু করা অংশে লাল বা ফোলা হলে আইসপ্যাক দিতে হবে। ট্যাটু করার ব্যাপারে চলতি সময়ে মহিলা পুরুষ উভয়েই স্বছন্দ। ট্যাটু মানেই উন্মুক্ততা, ট্যাটু মানেই বোল্ড আ্যন্ড বিউটিফুল, তবুও আবেদনের সাথে থাকে পল্লবতা র ছোঁয়া।
Be First to Comment