দক্ষিণ রায়: ক্যানিং, ২১মে,২০২০, আগাম খবর ছিল। সতর্কতাও ছিল। তাতে প্রাণহানি রোধ করা গেলেও বৈষয়িক ক্ষয়ক্ষতি আটকানো যায়নি। অভিজ্ঞ মানুষ জনের আশঙ্কা উমপুনের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আইলা ঝড়ে হওয়া ক্ষয়ক্ষতিকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। সাম্প্রতিক কালে এত শক্তিশালী ঝড় রাজ্যবাসী দেখেনি। ২০ মে বুধবার সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা আর সঙ্গে বৃষ্টি উমপুনের আগমনবার্তা ঘোষণা করছিল। বিকেল ৩টে নাগাদ শুরু হয় হাওয়ার দাপাদাপি। গাছথেকে কাঁচা আম পড়তে শুরু করে। চলে যায় বিদ্যুৎ। রাস্তাঘাটে লোক চলাচল এমনিতেই ছিল কম, দোকানপাটও বেশিরভাগই ছিল বন্ধ। তখনও ঝড়ের প্রাবল্য চোখ রাঙাতে শুরু করেনি। সময় যত যেতে থাকে ততই বাড়তে থাকে হাওয়ার দাপট, সঙ্গী হয় বৃষ্টি।
হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তে থাকে বড় বড় গাছ। ভেঙে পড়ে একেরপর এক বিদ্যুতের খুঁটি। তবে তখনও উমপুনের আসল ক্ষমতা দেখানো বাকি ছিল। সন্ধে ছ’ টা নাগাদ পূর্ণ ক্ষমতায় শক্তি জাহির করা শুরু করে সে। বাড়ির আসবেসটসের চাল ঘুড়ির মত পাক খেতে খেতে উড়তে দেখা যায়। হাওয়ার শক্তি দেখে মনে হচ্ছিল কোনোও প্রকান্ড দৈত্য খেপে গিয়ে চারিদিক তছনছ করে দেওয়ার পাগলামোতে মেতে উঠেছে। গাছগুলো কেউ যেন জামা কাপড়ের মতো নিংড়েছে। নদীর জল উথল পাথাল। সমুদ্র ফুঁসে উঠেছে সাতমাথাওয়ালা প্রকান্ড সাপের মতো। রাত প্রায় ন’টা পর্যন্ত চলেছে এই তাণ্ডব। তারপরও মাঝে মাঝেই দমকা ঝড় চলেছে। কখনো বেড়েছে, কখনো কমেছে। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে মোবাইল পরিষেবা, ইন্টারনেট সংযোগ। রাত ১১টার পর ঝড়ের গতি স্তিমিত হয়। তবে বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়া চলেছে গভীর রাত পর্যন্ত। পরদিন সকালে ক্যানিং শহরকে মনে হচ্ছিল মত্ত হাতির তাণ্ডবে ধ্বস্ত কোনো বাগান। রাস্তার দু’ধারে উপড়ে পড়া গাছ আর বিদ্যুতের খুঁটি। সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। গাছ উপড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নেই ইন্টারনেট সংযোগ। মোবাইল পরিষেবা ও বিদ্যুৎ নেই। ক্যানিং শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে নিকারিঘাটায় ভেঙেছে মাতলার বাঁধ।
প্রচুর মানুষ গৃহহীন হয়েছে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও প্রচুর।
এমনিতেই লকডাউনের ফলে মানুষের আর্থিক পরিস্থিতি করুণ। তার ওপর উমপুনের দরুন হওয়া ক্ষতি গরিব মানুষের কোমর ভেঙে দিল বলেই মনে হচ্ছে।
Be First to Comment