নিজস্ব প্রতিনিধি : কলকাতা, ২৮ মে ২০২৩। স্বাধীনতার ৭৫ বছরে দেশে পালিত হচ্ছে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব। অথচ এই মহোৎসব পালনের আলোকবৃত্তের বাইরে বিস্মৃতই রয়ে গেছে বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর বলিদান। তাঁদের মধ্যে অন্যতম বাঙালি বিপ্লবী পুলিন বিহারী দাস। তাঁর হাত দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকা অনুশীলন সমিতি। যা অবিভক্ত বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সশস্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। পরাধীন ভারতকে স্বাধীন করতে সর্বপ্রথম আত্মনির্ভরতার পথই দেখিয়েছিলেন বিপ্লবী পুলিন বিহারী দাস। আত্মনির্ভর হতে গেলে প্রয়োজন মানসিক স্থিতি। কোনও পরাক্রমী শক্তির সঙ্গে লড়তে গেলে নিজেকেও সেভাবে তৈরি করা চাই। সে জন্য দরকার শারীরিক ও মানসিক শক্তিও। আজ থেকে শতবর্ষের বেশি বছর আগে ঢাকা অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠা করে সেই পথই দেখিয়েছিলেন বিপ্লবী পুলিন বিহারী দাস। সশস্ত্র পথেই ভারতের স্বাধীনতা আসবে, তাই গান্ধীজির অহিংস আন্দোলনের মতবাদের সঙ্গে একমত হতে পারেননি পুলিন বিহারী দাস। বাংলার যুবকদের সশস্ত্র বিপ্লবে পারদর্শী করে তুলতে ১৯২০ সালে গঠন করলেন “ভারত সেবক সঙ্ঘ”। ১৯২৮ সালে কলকাতার মেছুয়া বাজারে প্রতিষ্ঠা করলেন বঙ্গীয় ব্যায়াম সমিতি। শারীরিক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তৈরি এই আখড়ায় তরুণদের লাঠি, তলোয়ার চালনা ও কুস্তি শেখানো হত। পুলিন বিহারীর সঙ্গে সশস্ত্র বিপ্লবে আত্মনির্ভরতার ভাবনার মিল খুঁজে পান নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস। ১৯৩০ সালে তৎকালীন কলকাতা পুরসভার মেয়র সুভাষ চন্দ্র বোসের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় পুলিন বিহারীর। তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বঙ্গীয় ব্যায়াম সমিতিকে ২০ কাঠা জমি দান করে কলকাতা পুরসভার মেয়র নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস। তখন থেকে আমৃত্যু পুলিন বিহারীর সাধনাস্থল ছিল বঙ্গীয় ব্যায়াম সমিতি। যা পুলিন দাসের আখড়া নামে পরিচিত ছিল।
পুলিন বিহারী দাসের কর্মের ব্যাপ্তি এক লপ্তে বর্ণনা করা প্রায় অসম্ভব। একাধারে প্রবাদপ্রতিম বিপ্লবী, অন্যদিকে এশিয়া মহাদেশের আধুনিক মার্শাল আর্টের অন্যতম পথিকৃৎ-ও তিনিই। আধুনিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নিয়ে পুলিন বিহারী রচিত বই পড়ে বিস্মিত হয়েছিলেন রাজা পঞ্চম জর্জ স্বয়ং। অথচ স্বাধীনতার ৭৫ বছরে বিস্মৃত বিপ্লবী পুলিন বিহারী দাসের অবদানকে ভুলে না গিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব থেকেই যায়। কিন্তু কোনও অজানা কারণে বিস্মৃতির অতলেই রয়ে গিয়েছেন বিপ্লবী পুলিন বিহারী দাস। পাঠ্য বইয়ের স্থান পাওয়া তো দূরের কথা, বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অনুশীলন সমিতির ভূমিকার জন্য কটা পাতা কি বরাদ্দ করা যেত না? বঙ্গীয় ব্যায়াম সমিতি যা পুলিন বিহারীর আখড়া তা বিস্মৃত হয়েছে। শুধু তাই নয় পুলিন বিহারী নামাঙ্কিত রাস্তার নেই কোনও পুরসভার বোর্ড। আরও আশ্চর্যের! যে বাড়িতে পুলিন বিহারী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, সেই বাড়িও আজ বিস্মৃত। আর সবশেষে নিমতলা ঘাট মহাশ্মশানে পুলিন বিহারী দাসের সমাধি ফলকও তুলে ফেলা হয়েছে।
পুলিন বিহারী দাস তাঁর প্রাপ্য সম্মান না পেলেও তাঁকে নিয়ে চর্চা কোনওদিন থামবে না। পুলিন বিহারী দাস ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যে লড়াইটা শুরু করেছিলেন, মাথা উঁচু করে সমাজে বাঁচার মন্ত্র জাগিয়েছিলেন। সেই মন্ত্র আজও বাঙালি যুবকযুবতীদের উদ্বুদ্ধ করতে পারে। পুলিন বিহারী দাসই প্রথম আত্মনির্ভরতা কথা বলেছিলেন। শতবর্ষেরও বেশি বছর আগে স্বপ্ন দেখেছিলেন এক শক্তিশালী ভারত গড়ার । আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে পুলিন বিহারী দাসের কর্মকাণ্ডকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে তৈরি হয়েছে “পুলিন বিহারী দাস মেমোরিয়াল ট্রাস্ট”।
পুলিন বিহারী দাসের লিখিত আত্মজীবনী “আমার জীবন কাহিনী” প্রকাশ করার প্রয়াস নিয়েছে “পুলিন বিহারী দাস মেমোরিয়াল ট্রাস্ট”। বইটির সম্পাদনা করেছেন পুলিন বিহারী দাসের দুই পৌত্র বিশ্বরঞ্জন দাস ও মনীশরঞ্জন দাস। ২৭মে, ২০২৩ শনিবার বিকেল চারটেয় রোটারি সদনে বিপ্লবীর আত্মজীবনী বইটির প্রকাশ করলেন রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অফ কালচার গোলপার্কের সেক্রেটারি স্বামী সুপর্ণানন্দ মহারাজ। বিশেষ অতিথি রাজ্যের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত ও এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বহু গুণিজন। সেইসঙ্গে প্রকাশিত হল বিপ্লবী পুলিন বিহারী দাসের জীবনী নিয়ে একটি তথ্যচিত্র “আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক বিপ্লবী পুলিন বিহারী দাস”। তথ্যচিত্রটির নির্মাতা “ওয়াইড অ্যাঙ্গেল”। যা এদিন উপস্থিত সকলের সামনে প্রদর্শিত হয়।
“আমার জীবন কাহিনী” বইটির সম্পাদনা করেছেন বিশ্বরঞ্জন দাস ও মনীশরঞ্জন দাস,
প্রকাশক: পুলিন বিহারী দাস মেমোরিয়াল ট্রাস্ট।
*বইটির মূল্য: ৯৫০/- টাকা।
Be First to Comment