সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: কলকাতা,২৫শে জানুয়ারি ২০২০ শ্লীলতাহানির আগে বা পরে যাই ঘটুক না কেন সমাজের এই সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে। সম্প্রতি মিডিয়ার দৌলতে দেশের যে কোনো প্রান্তে ঘটে যাওয়া নারীর সম্ভ্রম কেড়ে নেওয়ার ঘটনা বেশি করে সামনে আসছে। স্বাভাবিক ভাবে চলচ্চিত্র মাধ্যমে ধর্ষণ বিষয়টি গুরুত্ব পারছে। বিনোদন শর্ত পূরণ করে সামাজিক চেতনা গড়ে তোলার প্রচেষ্টার জন্য পরিচালক রেশমী মিত্র কে সাধুবাদ দেওয়াই যেতে পারে। প্রয়াত কবি মল্লিকা সেনগুপ্তের কাহিনী অবলম্বনে তৈরি ছবির প্রধান চরিত্র গুলিতে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অভিষেক চট্টোপাধ্যায়, শ্রীলা মজুমদার, রাহুল, মৌবনি সরকার, ঈশান মজুমদার এবং দেবলীনা কুমার ও শুভম। শ্লীলতাহানি বা ধর্ষণের সংজ্ঞা এক নয়। নারী শরীর বিনানুমতিতে স্পর্শ করাই শ্লীলতাহানি আইনের চোখে। ছবিতে অবশ্য পরিচালক একটি ধর্ষণের প্রসঙ্গকেই চিত্রায়িত করেছেন। ৮০ র দশকে তপন সিংহ ছবি করেছিলেন আদালত ও একটি মেয়ে । ধর্ষিতা নারীর চরিত্রে অভিন়য় করেন তনুজা। একজন ধর্ষিতা সমাজের অবিবেচক মানুষ কি চোখে দেখে পরিচালক সেই নিষ্ঠুর বাস্তব ছবিটাই তুলে ধরেছিলেন।
এই মুহূর্তে সমাজ নাকি অনেকটা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে। কিন্তু একটি ধর্ষিতা মেয়ে আজও সেই তিমিরেই থেকে গেছে। তথাকথিত রাজনৈতিক নেতা এবং সমাজের গণ্যমান্যরাও ধর্ষণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ জড়িত হচ্ছেন। ভোগবাদী সমাজে নারীকে ভোগ্যপণ্য ভাবার প্রবণতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ফলে নারীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভোগ করার অধিকার এক শ্রেণীর পুরুষের স্বাভাবিক অধিকার ভাবার মূল কারণগুলিকে চিহ্নিত না করতে পারলে বিষয়টি নিয়ে ছবি নাটক, তৈরি করা বেশ চাপের হয়ে যায়।
কেননা রামায়ণ, মহাভারত বা অন্যান্য দেশের তথাকথিত মহাকাব্যে নারীর শ্লীলতাহানি বা ধর্ষণের ভূরি ভূরি কাহিনী আছে। মনুর বিধানে আছে পিতা রক্ষ্যতি কৌমারে ভর্তা রক্ষতি যৌবনো রক্ষতি সুবিয়ে পূত্রা না স্ত্রী স্নাতন্ত্র মহতি। (৯.৩)অর্থাৎ নারীকে পিতা রক্ষা করবে কুমারিকালে। স্বামী রক্ষা করবে যৌবনে। বার্ধক্যে রক্ষা করবে পুত্র। স্ত্রী স্বাধীনতার যোগ্য নয়। আমেরিকার ৫০ টি প্রদেশের মধ্যে নগণ্য হলেও আমেরিকা অধিকৃত আদিবাসী সমৃদ্ধ গুয়ামে দ্বীপে এই দেশে কুমারী মেয়েদের বিয়ে বৈধ নয়।তাই অভিভাবকেরা পুরুষ ভাড়া করে কুমারীত্ব হরণ করিয়ে তারপর বিয়ে দেওয়া হয়। বাইবেলে ওল্ড টেস্টা মেন্টে (শুমারি ৩১:৪৬-৪৭)আছে হজরত মুসা (আলয়হিস সালাম) নির্দেশ দিচ্ছেন কুমারী মেয়ে দের বাঁচিয়ে রেখে লুঠের মাল হিসেবে ভোগ করতে। সেদিক থেকে ইসলাম ধর্ম এসেছে সবচেয়ে পরে। অর্থাৎ আধুনিকতম। ইসলাম ধর্ম নারীকে দিয়েছিল কিছু অধিকার যা ইহুদি, হিন্দু বা খ্রিস্টান ধর্ম দেয় নি। তারপর কেটেছে হাজার হাজার বছর। ইসলামি পুরুষতন্ত্র প্রভাব বাড়িয়েছে এই ধর্মেও। কুরআনে আছে পুরুষ নারীর কর্তা, কারণ আল্লহ তাঁদের এককে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন….. স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা করো তাদের প্রহার কর। মরক্কোর সংবিধানে বলা আছে স্ত্রী স্বামীর আইনি ক্রীতদাস…….।
অনেকে বলবেন, পুরানো কাসুন্দি ঘাঁটার কি দরকার। আজ নারীর সমান অধিকার।
সত্যিই কি তাই? আজও নারী পুরুষের সমান পারিশ্রমিক পান না। তাজা সমীক্ষা বলছে নারীরা শুধু অচেনা পুরুষের হাতে শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছেন যতটা তার চেয়ে বেশি শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন পরিবারের পুরুষেরই হাতে।সুতরাং এই ধরণের বিষয়বস্তু নির্ভর ছবি তৈরি বেশ কঠিন কাজ । আশা করি পরিচালক চিত্রনাট্য রচনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট গবেষণা করেছেন । কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলে সোনম দাস নিবেদিত ও সোনম মুভিজ প্রযোজিত শ্লীলতাহানির পরে ছবির পোস্টার ও অডিও মুক্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির হন ছবির প্রযোজক পরিচালক, শিল্পী ও কলাকুশলীদের অনেকে। শোনানো হয় ছবির গান। সঙ্গীত পরিচালক বাপ্পা অরিন্দম জুটি জানান, ছবির চারটি গান চার রকমের। আছে একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। যেটি ছবিতে প্রতীকী হিসেবে ব্যাবহৃত হয়েছে। গান গেয়েছেন ঋদ্ধি বন্দোপাধ্যায়, দেবমাল্য সহ নবাগত কয়েক জন। ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন চন্দন মুখার্জি। এখন প্রতীক্ষা বর্তমান প্রেক্ষাপটে পরিচালক রেশমী মিত্র তাঁর শ্লীলতাহানির পরে ছবিটি কতটা দর্শক প্রশংসা পায়?
Be First to Comment