বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, ফোনের ধার ধারেননি উত্তমকুমার। সোজা হাজির হলেন বিমল মিত্রের বাড়িতে। তাঁর আসাটা ছিল একেবারে হঠাৎই। ভাগ্যিস লোকজন টের পায়নি! বাড়িতে এসে বিমল মিত্রের মুখোমুখি হয়ে সরাসরি প্রস্তাব দিলেন, ‘‘আপনার ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ নিয়ে ছবি করতে চাই।’’ জবাবে বিনীত স্বরে বিমল বাবু বলেছিলেন, ‘‘আপনি সিনেমা করলে সবাই ওটাই দেখবে। আমার বই আর কেউ পড়বে না। তাই এখন না, কিছু দিন পরে না হয় করবেন।’’ ভাবুন, উত্তমকুমার বাড়ি বয়ে এসে কোনও কাহিনিকারের গল্প নিয়ে সিনেমা করার কথা বলছেন। আর সাহিত্যিক কিনা তাঁর প্রস্তাব উড়িয়েই দিচ্ছেন! ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ অবশ্য সিনেমা হয়েছিল।
তখন উত্তমকুমার আর ইহজগতেই নেই। তবে ’৭২ সালে বিমল বাবুর লেখা নিয়ে যখন ‘স্ত্রী’ ছবিটি হল, সেখানে উত্তমকুমার ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করেছিলেন। বিমল মিত্রের শিক্ষা চেতলা স্কুল, আশুতোষ কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। রেলে চাকরি করতে করতে সাহিত্যচর্চা। প্রথম উপন্যাস ‘চাঁই’। পাঁচের দশকের ‘সাহেব বিবি গোলাম’ উপন্যাস লিখে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। এরপর রেলের চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি সাহিত্যসৃষ্টিতে আত্মনিয়োগ। তাঁর অন্যান্য বিখ্যাত উপন্যাস ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’, ‘একক দশক শতক’, ‘চলো কলকাতা’, ‘পতি পরম গুরু’, ‘আসামি হাজির’ ইত্যাদি। প্রায় পাঁচশটি গল্প ও শতাধিক উপন্যাসের লেখক বিমল মিত্র তাঁর ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ গ্রন্থের জন্য ১৯৬৪ সালে রবীন্দ্র পুরস্কারে ভূষিত হন। এ ছাড়াও বহু পুরস্কার ও সম্মান লাভ করেন। তাঁর রচনা ভারতের বিভিন্ন চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে। স্রেষ্ঠ কাহিনীকার হিসাবে তিনি ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন।তাঁর রচনা ভারতের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এতো সহজ করে আর কারো কলমে ইতিহাসকে কথা বলতে দেখা যায়নি।
১৭৫৭ থেকে ১৯৬২ সালের সময়কাল নিয়ে তার লেখা পাঁচটি ভিন্ন কাহিনীর উপন্যাস যথাক্রমে ‘বেগম মেরি বিশ্বাস’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’, ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’, ‘একক দশক শতক’ আর ‘চলো কলকাতা’। বিমল মিত্রের লেখার অনুরাগীরা বলে থাকেন, বাংলায় আর কোনো বই না পড়লেও প্রত্যেক বাঙালির এই কয়েকটা বই অবশ্যই পড়ে রাখা উচিত। ১৯৯১ সালে ২ ডিসেম্বর কলকাতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
বিমল মিত্র ১৯১২ সালের আজকের দিনে (১৮ মার্চ) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment