————জন্মদিনে স্মরণঃ নার্গিস (দত্ত)———–
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, ক্লাসিকাল সংগীত শিল্পী মায়ের হাত ধরেই আড়মোড়া ভাঙ্গতে থাকা ভারতীয় চলচ্চিত্রে নার্গিসের আগমন। বলিউডে চিরস্থায়ী করে নার্গিস নামটি। প্রকৃত নাম ফাহিমা রশিদের বদলে ‘নার্গিস’ নামেই তিনি কাটিয়ে দেন অভিনয় জীবনের বাকি সময়টা। চল্লিশ দশকের শেষ এবং পঞ্চাশ দশকের শুরুতে একের পর এক হিট ছবি উপহার দিতে থাকেন নার্গিস। রূপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে তার ভক্তের সংখ্যাও। ‘বারসাত’, ‘আন্দাজ’, ‘আওয়ারা’, ‘দিদার’, ‘শ্রী ৪২০’, ‘চোরি চোরি’র মতো ছবিগুলো শুধু দর্শক নয়, দৃষ্টি কাড়ে সমালোচকদেরও।
রাজ কাপুরের সঙ্গে নার্গিসের অন স্ক্রীন পারফরম্যান্স পরিণত হয় হিন্দি সিনেমার সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটিগুলোর একটিতে। আর এই অন স্ক্রীন রসায়নই শীঘ্রই ডানা মেলতে থাকে রূপালী পর্দার বাইরেও। পঞ্চাশের দশকে হিন্দি পত্রিকাগুলোর বড় আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ায় এই দুজনের রোমাঞ্চ কাহিনি। তবে নানা কারণে শেষ পর্যন্ত সেটা আর পরিণয়ে রূপ নিতে পারেনি।ক্যারিয়ারের একেবারে শেষ মুহূর্তে নার্গিস লাভ করেন তার অভিনয় জীবনের সেরা সাফল্য। মেহবুব খানের অস্কার মনোনীত ছবি ‘মাদার ইন্ডিয়া’ নার্গিসকে এনে দেয় আন্তর্জাতিক খ্যাতি। গ্রামীণ দরিদ্র হিন্দু সমাজের উপর নির্মিত এই ছবিতে রাধা চরিত্রে নার্গিসের অসাধারণ অভিনয় জয় করে ফিল্মফেয়ার জুরিদের মনও। শেষ পর্যন্ত অস্কার জিততে না পারলেও চিরায়ত ভারতীয় নারীর ভূমিকায় নার্গিসের অনন্য সাধারণ অভিনয় এখনো দাগ কেটে আছে লাখো দর্শকের হৃদয়ে। এর ঠিক এক বছর বাদে রূপালী পর্দার আরেক বিখ্যাত অভিনেতা এবং মাদার ইন্ডিয়ার সহকর্মী সুনীল দত্তকে বিয়ে করে অভিনয় জীবনকে বিদায় জানান মোহময়ী এই অভিনেত্রী।
‘রাত আউর দিন’ ছবির মাধ্যমে আবারো অভিনয়ে ফেরেন নার্গিস ১৯৬৭ সালে। আর এই ছবি তাকে এনে দেয় ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা— জাতীয় পুরস্কার। এই ক্যাটাগরীতে তিনিই প্রথম জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন। তবে এই পুরস্কারও নার্গিসকে অভিনয়ে আর মনোযোগী করতে পারেনি। ফলে এটিই হয়ে থাকে তার শেষ ছবি। অভিনয় জীবনের মতো বিবাহিত জীবনেও দারুণ সফল নার্গিস। একজন সামাজিক উন্নয়ন কর্মী হিসেবেও নার্গিসের অবদান স্মরণীয়। সুনীল দত্তের সঙ্গে নার্গিস গড়ে তোলেন অজান্তা আর্টস কালচারাল ট্রূপ। সংস্থাটির কাজ ছিল দুর্গম সব যুদ্ধ ক্ষেত্রে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বিনোদনের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা। স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় পারফর্ম করা প্রথম বিদেশি সংগঠনও ছিল অজান্তা। বর্ণাঢ্য এক জীবন শেষে ১৯৮১ সালের ৩ মে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নার্গিস। ভারতীয় চলচ্চিত্রে তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রথম চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে ১৯৫৮ সালে নার্গিস লাভ করেন ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার।
দেশটির জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের একটি ক্যাটাগরীকে ‘নার্গিস দত্ত অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট ফিচার ফিল্ম অন ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন’ ঘোষণা করা হয়। মুম্বাইয়ের মেরিন রোডে যে রাস্তায় নার্গিসকে সমাহিত করা হয় সেটিও এখন পরিচিত নার্গিস দত্ত রোড নামে।
নার্গিস দত্ত ১৯২৯ সালের আজকের দিনে (১ জুন) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment