———-শুভ জন্মদিন জয়া (ভাদুড়ী) বচ্চন———
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, বলিউডে যেখানে চটকদার, খোলামেলা, আবেদনময়ী নায়িকাদের ভিড়, সেখানে সাদামাটা চেহারার, শ্যামলা একটি ছোটখাট বাঙালি মেয়ের টিকে থাকাই ছিল বিস্ময়ের। কিন্তু তিনি কেবল টিকেই থাকেননি, উপহার দিয়েছেন ব্যবসা সফল ও শিল্পসার্থক চলচ্চিত্র। জয়া ভাদুড়ীর বাবা তরুণ কুমার ভাদুড়ী ছিলেন প্রখ্যাত লেখক, সাংবাদিক এবং মঞ্চ অভিনেতা। তার বিখ্যাত বই অভিশপ্ত চম্বল। অভিনয় ছিল জয়ার রক্তে। সত্যজিৎ রায় ছিলেন পারিবারিক বন্ধু।
১৯৬৩ সালে সত্যজিৎ রায়ের ‘মহানগর’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে ১৫ বছর বয়সে রূপালি ভুবনে প্রবেশ করেন জয়া ভাদুড়ী। এর পর ‘সুমন’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং ‘ধন্যি মেয়ে’ নামে উত্তমকুমার অভিনীত একটি বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় করেন। এর কোনোটিতেই প্রধান ভূমিকায় ছিলেন না তিনি। জয়া পুনে ফিল্ম ইন্সটিটিউটে অভিনয় শেখেন এবং সোনার মেডেল পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ১৯৭১ সালে হৃষিকেশ মুখার্জির হিন্দি ছবি ‘গুড্ডি’তে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত। ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেত্রীর মনোনয়ন পান তিনি। এর পর একে একে মুক্তি পায় ‘উপহার’ ‘পরিচয়’, ‘পিয়া কা ঘর’ ইত্যাদি ব্যবসা সফল ও শিল্পমুখী ছবি।
১৯৭৩ সালে মুক্তি পায় গুলজার পরিচালিত ‘কোশিস’। ছবিতে সঞ্জীব কুমার ও জয়া ভাদুড়ী ছিলেন বাক প্রতিবন্ধী দম্পতির ভূমিকায়। দুজনের অভিনয়ই ছিল অসাধারণ। অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে তিনি প্রথম অভিনয় করেন ১৯৭২ সালে ‘বংশী বিরজু’ এবং ‘এক নজর’ ছবিতে। কিন্তু ছবিদুটো বাণিজ্যিক সফলতা পায়নি। বক্স-অফিসে ব্যর্থ ‘লম্বু নায়কে’র বিপরীতে তখন প্রথম সারির কোনো নায়িকা অভিনয়ে রাজি ছিলেন না। কিন্তু জয়া বুঝেছিলেন এ ছেলেটি হেরে যাবার জন্য আসেনি। তাই ১৯৭৩ সালে সেলিম-জাভেদের অ্যাকশন ছবি ‘জঞ্জির’ এ অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি। বাকিটা ইতিহাস। এরপর এ জুটির ছবি ‘অভিমান’ও দারুণ সফল হয়।
‘অভিমান’ ছবির কাজ চলার সময় বিয়ে করেন জয়া-অমিতাভ। ‘অভিমান’ এর সুবাদে ফিল্মফেয়ারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারও পান জয়া বচ্চন। ‘চুপকে চুপকে’ ছবিতেও অভিনয় করেন এ জুটি। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া বলিউড ক্ল্যাসিক ‘শোলে’তেও জয়া ছিলেন অমিতাভের বিপরীতে। ক্যারিয়ারের এমন মধ্য গগনে অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কারণ ততদিনে জন্মেছে শ্বেতা এবং অভিষেক। সন্তানদের জন্য ঘর সংসারকে বেছে নিতে দ্বিধা করেননি জয়া। দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯৮ সালে জয়া আবার অভিনয়ে ফিরে আসেন গোবিন্দ নিহলানি পরিচালিত ‘হাজার চৌরাশিকি মা’ ছবিতে। মহাশ্বেতা দেবীর লেখা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ছবিটি আবর্তিত হয় নকশাল আন্দোলনে মৃত এক বিপ্লবী তরুণের মাকে কেন্দ্র করে। ২০০০ সালে মুক্তি পায় ‘ফিজা’। এ ছবির জন্য পার্শ্ব-চরিত্রে সেরা অভিনেত্রীর ফিল্মফেয়ার জয় করেন তিনি।
২০০১ সালে করন জোহরের ‘কাভি খুশি কাভি গম’ ছবিতে অমিতাভের স্ত্রী ও শাহরুখ খানের মায়ের ভূমিকায় হৃদয় ছোঁয়া অভিনয় করেন তিনি। ২০০৪ ও ২০১২ সালে জয়া বচ্চন সমাজবাদী পার্টি থেকে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। জয়া বচ্চন ১৯৯২ সালে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মাননায় ভূষিত হন। ২০০৭ সালে তিনি ফিল্মফেয়ারের আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন। তিনি তিন বার সেরা অভিনেত্রী ও তিন বার পার্শ্ব-চরিত্রে সেরা অভিনেত্রীর ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন। মনোনয়ন পেয়েছেন পাঁচবার।
জয়া (ভাদুড়ী) বচ্চন ১৯৪৮ সালের আজকের দিনে (৯ এপ্রিল) জব্বলপুরে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment