Press "Enter" to skip to content

রাজা সুরথ কেন বাসন্তী পুজো করেছিলেন?

Spread the love

সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : কলকাতা, ২এপ্রিল ২০২০ চৈত্র মাসে ই বাঙালির দুর্গাপুজো। শারদীয়া দুর্গা তো বাঙালির বাড়তি পাওনা। বাঙালি কৃতজ্ঞ তাই কবি কৃত্তিবাস এবং লর্ড ক্লাইভের কাছে। এরা দুজন বাঙালিকে অকাল বোধন পুজো করতে শিখিয়েছেন। আমাকে অনেকে প্রত্যেক বাসন্তী পুজোর দিনগুলিতে শুভ সপ্তমী, শুভ অষ্টমী, শুভ নবমীর শুভেচ্ছা জানান। কিন্তু শাস্ত্র কিন্তু তা বলে না। দুর্গা পুজো হয় শরৎ কালে। অর্থাৎ শাস্ত্রমতে শ্রাবণ মাস থেকে পৌষ সংক্রান্তি পর্যন্ত স্বর্গের দেব দেবীরা থাকেন ঘুমিয়ে। বাকি সময়টা দক্ষিণায়ন।এই সময় তাঁরা জেগে থাকেন। কেননা দেবতা বলে কথা। আমাদের এক বছর ওদের একদিন। দেবীকে তাই বোধন করে জাগানো হয়। তাছাড়া সন্ধি পুজো হয় অষ্টমী আর নবমীর সন্ধি মুহূর্তে।

তাই দুর্গাপুজোর এই তিথি গুলিকে মহা সপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী বলা হয়। কিন্তু বাসন্তী পুজোয় মহা শব্দ যুক্ত হয় না।
এই বাসন্তী পুজোর চল কি করে শুরু হলো বাংলায়? মার্কেন্ডয় পুরাণ বলছে, রাজা সুরথ আর সমাধি বৈশ্য র কাছে মেধস ঋষি যে দেবী মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছিলেন,পরে তিনি তা প্রিয় শিষ্য ভাগুরি মুনিকে বলেছিলেন। বলা হয় রাজা সুরথ যবনদের কাছে পরাজিত হয়ে জঙ্গলে পালিয়ে জীবন বাঁচিয়েছিলেন। আসলে আর্য রাজা সুরথ পরাজিত হয়েছিলেন কোল আদিবাসি প্রগার্য দের কাছে। জঙ্গলে একাকী ঘুরছিলেন। সেখানে দেখা হয় আর এক ভাগ্য বিপর্যয়ের শিকার ধনী সওদাগর সমাধি বৈশ্যের সঙ্গে। তাঁরা খুঁজে পান জঙ্গলে মেধস মুনির আশ্রম। যেহেতু অনার্য কোল দের কাছে রাজা পরাজিত হন তাই তাঁকে আর্য দেবী দুর্গার আরাধনা করতে বলেন। একই কথা বলেন সওদাগর সমাধি বৈশ্যকে। মার্কণ্ড মুনির শিষ্য ভগুরি এই কাহিনী পুরাণের ১৩নং অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। রাজা সুরথ সেই জঙ্গলে মন্দির বানিয়ে সেখানে বাসন্তী পুজো করেন। সময়টা তো ছিল বসন্তকাল। পরে সেই জঙ্গল কেটে বসতি হয়। নাম হয় দুর্গাপুর। এই কোলদের এক অংশের নাম অসুর। দেবী যাকে বধ করে আর্য আগ্রাসনকে বিস্তৃত করেছেন। এই প্রসঙ্গে সমুদ্র বিশ্বাস তাঁর দুর্গাপুজোর অন্তরালে গ্রন্থের ২১পৃষ্ঠায় লিখেছেন ব্রাহ্মণ মুনি মেধস এক্ষেত্রে শত্রু নিধনের জন্য রাজা সুরথকে দেবী দুর্গার পুজোর পরামর্শ দিলেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত রজ্যহারা কোল বা আদিবাসী সমাজের কোনো উন্নতি হয়নি। বরং লুঠে রা রাজ্য দখলকারী রাজা থেকে সুরথের উত্তরসূরি গণ আদিবাসীদের নিকট প্রনম্যও। আর লুঠেরা আর্য দস্যুদের মূল শক্তিদায়িনী দুর্গা কোল আদিবাসীদের ক্রমশ আরাধ্যা দেবী হয়ে উঠেছেন।এটাই প্রাগার্যদের ট্র্যাজেডি। দুর্গা বা বাসন্তী এই দেবীকে মা হিসেবে আরাধনার তত্ত্ব কিন্তু বেশ আকর্ষণীয়।

শুধু আমাদের দেশে নয়, মাতৃ আরাধনার শুরুর ইতিহাস জানতে পিছিয়ে যেতে হবে মানব সভ্যতার অনেক আগে।তখনও প্রায় মানুষদের যুগ। হোমো হ্যাবিলিস থেকে বিবর্তিত হয়ে মানুষ তখন হোমো ইরেকটাস পর্যায়ে। শেষ তুষার যুগের পর এই গোত্রের না মানুষ বিবর্তিত হয়ে হোমো স্যাপিয়েন্স হলো।থাকত তারা দক্ষিণ পশ্চিম ফ্রান্সের লাস্কোস পাহাড়ের গুহার দেওয়ালে এবং স্পেনের আলতা মারির পাহাড়ের গুহায় চিত্রশিল্পের নিদর্শন মেলে।মেলে চুনা পাথরের আসন্ন প্রসবা নারী মূর্তি। এই মূর্তি পরে দেবী হিসেবে নারী মূর্তির প্রতীক হয়ে ওঠে।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.