Press "Enter" to skip to content

রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল ইসলামের স্নেহের পাত্র ছিলেন পল্লী কবি জসীমউদ্দীন…….

Spread the love

বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, সমগ্র বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বহুপঠিত কবিদের একজন জসীমউদ্দীন। পূর্ব বাংলার গ্রামীণ জীবনের রূপকার হিসেবে তিনি ‘পল্লীকবি’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন, যদিও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন একজন উচ্চশিক্ষিত আধুনিক মানুষ। রবীন্দ্রযুগের কবি হয়েও জসীমউদ্দীন প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্য এবং তা পেরেছিলেন অত্যন্ত সার্থকভাবে। জসীমউদ্দীনের জন্ম ম্যাট্রিকুলেশন সার্টিফিকেট অনুযায়ী ১ জানুয়ারি ১৯০৩। তাঁর পৈতৃক নিবাস ফরিদপুর শহরের পার্শ্ববর্তী অম্বিকাপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আনসার উদ্দীন মোল্লা। তিনি ছিলেন একজন অবস্থাপন্ন মানুষ। কবির মায়ের নাম মোসাম্মৎ আমেনা খাতুন। ১৯২১ সালে জসীমউদ্দীন ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। তখন মহাত্মা গান্ধী ও মওলানা মোহাম্মদ আলী, মওলানা শওকত আলীর অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন তুঙ্গে। সে আন্দোলনে তিনিও ঝাঁপিয়ে পড়েন। গান্ধীর আদর্শে হাতে বোনা সুতায় তৈরি খদ্দরের কাপড় পরতেন, স্বদেশী রাজনৈতিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে তাঁর পড়াশোনার ক্ষতি হয়। ১৯২৪ সালে রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। রাজেন্দ্র কলেজ থেকে তিনি বিএ পাস করেন ১৯২৯ সালে। তখন তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন প্রতিষ্ঠিত কবি। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ “রাখালী” প্রকাশিত হয় ১৯২৭-এ। তত দিনে জসীমউদ্দীন স্নেহের পাত্রে পরিণত হন রবীন্দ্রনাথ, দীনেশচন্দ্র সেন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নজরুল ইসলামের। নজরুল ছিলেন পরম গুণগ্রাহী। প্রথম থেকেই জসীমউদ্দীন তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। নিজে ছিলেন বিদ্রোহী, জসীমউদ্দীন ছিলেন তাঁর বিপরীত। তা সত্ত্বেও নজরুল জসীমউদ্দীনের কবি-প্রতিভার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতেন। ১৯২৯ সালে প্রকাশিত হয় জসীমউদ্দীনের “নকশী কাঁথার মাঠ”— দু’টি গ্রাম্য তরুণ-তরুণীর জীবনের কাহিনী অবলম্বনে এক ‘সাহিত্যিক গীতিকা’। বাংলা সাহিত্যে এটি ছিল এক অভিনব সংযোজন। ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ পাঠ করে রবীন্দ্রনাথ মন্তব্য করেন: ‘জসীম উদ্দীনের কবিতার ভাব-ভাষা ও রস সম্পূর্ণ নূতন ধরনের। প্রকৃত কবির হূদয় এই লেখকের আছে। অতি সহজে যাঁদের লিখবার ক্ষমতা নেই, এমনতর খাঁটি জিনিস তাঁরা কখনই লিখতে পারেন না।’ জসীমউদ্দীনের কাব্যনাটকগুলোও ছিল একসময় খুবই জনপ্রিয়। কাব্যনাট্যের মধ্যে রয়েছে— বেদের মেয়ে (১৯৫১), মধুমালা (১৯৫১), পল্লীবধূ (১৯৫৬), গ্রামের মায়া (১৯৫৯) প্রভৃতি। জসীমউদ্দীনের গদ্যও অসামান্য। তাঁর ভ্রমণকাহিনী চলে মুসাফির (১৯৫৭), জার্মানীর শহরে বন্দরে (১৯৭৬) এবং উপন্যাস বোবা কাহিনী (১৯৬৪), আত্মজীবনী জীবন কথা (১৯৬৪) প্রভৃতি বাংলা সাহিত্যের স্থায়ী সম্পদ। জসীমউদ্দিন ১৯৭৬ সালের ১৩ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.