ভাস্কর ভট্টাচার্য : লেখক ও কবি, কলকাতা, ৭, আগস্ট, ২০২০। আজ রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবস। তিনি চিরনিদ্রায় নিদ্রিত আজ অনেক কাল। জীবন মরনের সীমানা ছাড়িয়ে এই মৃতপ্রায় সময়ে আজও তিনি সশ্রদ্ধায় স্মরণীয়। অন্তত ফেসবুকের পাতায় পাতায়, মানুষের মনে মনে স্মরণে স্মরণে পূজনীয়।
প্রথম বাঙালি, যিনি বিশ্বের দরবারে বাংলা ও বাঙালিকে পরিচিত করেছিলেন তাঁর গীতাঞ্জলির মাধ্যমে। সারাবিশ্ব সেদিন এই বাঙালির সঙ্গে যেন বাংলাকেও চিনতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিল। অষ্টাদশ ঊনবিংশ শতাব্দী এক ঝাঁক মনীষী বাঙালি পেয়েছিল। তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ একজন। রামমোহন,বিদ্যাসাগর ,বঙ্কিমচন্দ্র বহুবিধ বাঙালির মধ্যচূড়ামণি হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সারাবিশ্বে বাংলাকে পরিচিতি ঘটানোর জন্য তিনি যেমন ছুটে বেড়িয়েছেন তাঁর সাহিত্য সংগীত নিয়ে তেমনি বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই যে রবীন্দ্রনাথকে চিনতে জানতে আত্মস্থ করতে ছুটে আসেননি সেই দেশের সাহিত্যানুরাগী মানুষ। চিন, জাপান, রাশিয়া ইউরোপের এমন কোনো সে সময়ের প্রসিদ্ধ মানুষ ছিলেন না, যাঁর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সংযোগ ঘটেনি। তাই তিনি বিজ্ঞানী ডাক্তার -মনোবিদই হোন বা রাজনৈতিক ক্ষুরধার ব্যক্তিত্বই হোন। সে তালিকায় যেমন আছেন আইনস্টাইন, রমা রঁলা, তেমনই আছেন মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েড। আছেন জার্মান কবি ও ঔপন্যাসিক নোবেলজয়ী হেরমান হেসো ,অঁদ্রে জিদ। চিত্রশিল্পী রোটেনস্টাইন ও কবি নাট্যকার উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস এর সঙ্গে গভীর হৃদ্যতাই কবিকে বিশ্ব দরবারে আলোকিত করেছিল। তাঁর পরের ইতিহাস ঐতিহাসিক।
বিশ্বের নানা প্রান্তে তাঁর রচনা অনূদিত, সমাদৃত।
রবীন্দ্রনাথ নিজেই লিখেছিলেন , ‘ দেশে দেশে মোর দেশ আছে’ — এক কথায় তিনি বিশ্বজনীন বাঙালি হয়ে রয়েছেন আজও।
২২শে শ্রাবণ। সকাল থেকে নানা পোস্ট ভেসে উঠছিল তাঁর ছবি। মনে মনে ভাসছিল দু এক কলি গান। এমনিতেই শোক আর কাতরতা মাখা দিনযাপনে কাটছে। স্বাভাবিক বা অকাল প্রয়াণ, শোক আর শোক। আর এ দিনটি যেন বাৎসরিক শোকের পূজা।
হঠাৎ এক ফেসবুক বন্ধু একটা এমন হৃদয় বিদীর্ণ গান পাঠালেন, রবীন্দ্রনাথকে ভালোবেসে,রবি ঠাকুরেরই গান। ভাঙা মনে খান খান হয়ে বেজে উঠলেন কবি। আমার অন্তরে।
তাঁর গান আমাদের আশ্রয়। হঠাৎ উলটোতে লাগলাম গীতবিতান। নেড়ে চেড়ে দেখতে দেখতে ,গান শুনতে শুনতে হঠাৎ মনে হল রবীন্দ্ররচনাবলির অনেক পাতাই আজও পড়ে ওঠা হয়নি।
একটা মানুষ তাঁর অন্তর্ভেদী সৃষ্টি দিয়ে এত মানুষের অন্তরের অন্তস্থলে পরম্পরায় কী করে পরমাত্মীয় হয়ে ওঠেন তা ভাবলে বিস্ময়ের অন্ত পাওয়া ভার। সময়ের পর সময় , যুগের পর যুগ এক অনন্ত জিজ্ঞাসা। প্রত্যেকেরই যেন মনে হয়, এই গান তিনি তাঁর জন্যেই লিখেছেন, যিনি যখন তাঁর শ্রোতা। প্রকৃতি,প্রেম , পূজা, দুঃখ সবই যেন শ্রোতার সঙ্গে কবির আত্মার মিলন। এ বড় বিস্ময়ের । কী গভীর, কী সূক্ষ্ম অনুভূতির নিবিড়তায় যেন একাকার হয়ে যান কবি ও শ্রোতা।
যেমন ভাবে আজও আমরা আত্মময়তায় জড়িয়ে নিই কবির গান। এক স্মৃতিময়তা ঘিরে ধরে এবং কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়ে উঠি–
এক ,দুই ,তিন একাধিক প্রাণের গান , মনের গান।’ভরা থাক স্মৃতিসুধায় ….
অথবা
‘আছে দুঃখ,আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে…
Be First to Comment