——আজ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট চেকিং ডে——
–———————————————————-
সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: কলকাতা, ২এপ্রিল ২০২০ আজ ২ এপ্রিল। ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট চেকিং ডে। বিশ্বের সর্বত্র পালিত হয়। ১৯১৭ সালে আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্যোশাল মিডিয়ায় অনবরত মিথ্যে সংবাদ প্রচারিত হচ্ছিল। কোনো কোনো সংবাদপত্রেও কাটতি বাড়াতে কিছু কিছু সাংবাদিকরাও ফেক নিউজ পরিবেশন করছিলেন। ফলে একটি উদ্যোগ গড়ে ওঠে এই ফেক নিউজ আটকাতে।
এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রায় তিনহাজার কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবীরা সোস্যাল মিডিয়া ও নিউজ মিডিয়ায় নজর রাখছেন। পয়লা এপ্রিল যেহেতু মানুষকে বোকা বানানোর দিন হিসেবে পালিত হয়, তাই ঠিক তার পরদিন ২রা এপ্রিল ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট চেকিং ডে হিসেবে পালিত হচ্ছে। ২০২০ চতুর্থ বর্ষ। গত লোকসভার নির্বাচনের সময় একটি সমীক্ষা করে মাইক্রোসফ্ট সংস্থা। সেখানে বলা হয়, তিনটি বিষয়ে ভারত সবার চেয়ে এগিয়ে। এক) সাধারণ মানুষের ওপর রাষ্ট্রের নজরদারি, দুই) ভুয়ো খবর পরিবেশন, তিন) সোশ্যাল মিডিয়া বা মুখে মুখে গুজব ছড়ানো। সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা নিজের বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া গুজবে বা মিথ্যে সংবাদে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ভারতীয়রা।ধর্ষণ, ডাইনি, পাচারকারী সন্দেেহ ইত্যাদি গুজবে ভারতে প্রতিবছর বহু মানুষের মৃত্যু হয়। ভারতের ৫৪% মানুষ গুজবের শিকার। সারা পৃথিবীর গড় সেখানে ৫০%। সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলছে সোস্যাল মিডিয়া। নিজের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে এবং বিপরীত পক্ষকে হেয় প্রতিপন্ন করতে ভুল খবর, ভুল ছবি ও ভিডিও ছড়ানো হয়। সারা বিশ্বে যেখানে ৫৭% মানুষ ভুয়ো খবরের শিকার, ভারতে তা ৬৪%। এই সংস্থা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় তিনশ ভুয়ো খবর প্রমাণ করেছে। আজকের দিনে সংস্থার পক্ষে স্লোগান, ডোন্ট লেট ইওরসেল্ফ গেট ফুল্ড। সমাজের স্বনামধন্য ব্যক্তি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া তথ্য, বক্তব্য, ঘটনা, আলোচনা সমালোচনা উঠে আসবে সেসব তথ্যের পেছনে কতটা সত্য আছে বা তথ্য বিকৃত হচ্ছে কিনা তা যাচাই করে মানুষকে জানানো এই সংস্থার কাজ।
বিশ্ব সংস্থার পরিচালক অ্যালেক্সিস মঞ্জারলিস এর বক্তব্য, একদিন ফ্যাক্ট চেকিং দিবস প্রতিপালন করে নয়, রোজকার জীবনে রাজনীতি, সাংবাদিকতায় ও সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকৃত তথ্য যাচাই বাছাই তে মানুষকে উৎসাহিত করার চেষ্টা চালাবে।
এই মুহূর্তে করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রচুর ফেক নিউজ সোস্যাল মিডিয়ায় আসছে। চিনে করোনা আক্রান্ত দশ হাজার মানুষকে নাকি চিন প্রশাসন মেরে ফেলেছে এমন ফেক নিউজ ছড়ানো হয়।একটি সিনেমার দৃশ্যের ছবি দিয়ে খবর ছড়ানো হয়, রাশিয়ায় পুতিন মানুষকে ঘরবন্দী রাখতে রাস্তায় সিংহ ছেড়ে দিয়েছেন। কলকাতাও বাদ যায়নি। এক শিক্ষিত পরিবারের গৃহবধূ তার সন্তানের স্কুলের অভিভাবকদের হোয়াটস্ অ্যাপ গ্রুপে ছড়িয়ে দেন স্কুলের এক ছাত্রের করোনা হয়েছে। কলকাতা পুলিসের নজরে আসায় খোঁজখবর নেওয়া হয়। জানা যায়, তথ্যটি ভুয়ো। তখনই প্রেরককে চিহ্নিত করে কৈফিয়ত চাওয়া হয়। সেই গৃহবধু ভয় পেয়ে ক্ষমা চান। এছাড়াও বেশ কিছু নাগরিককে লালবাজারে ডেকে এনে সাবধান করা হয়। গতকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও অভিযোগ করে বলেন, কোনো কোনো টিভি চ্যানেলটি টি আর পি বাড়াতে ঘনঘন ব্রেকিং নিউজ দিয়ে জানাচ্ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা নাকি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অথচ এক সঙ্গে পাঁচজন আক্রান্ত হয়েছেন যাঁরা এক পরিবারের সদস্য। এটাকে স্টেজ থ্রি বলা যায় না। মুখ্যমন্ত্রী হাতজোড় করে মিডিয়ার একাংশকে সংযত থাকার অনুরোধ করেন। পাশাপাশি দেশের শীর্ষ আদালতও জানিয়েছে, মিডিয়াকে করোনা সংক্রান্ত খবরে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা সতর্ক করে জানিয়েছেন, ফেক নিউজ ছড়ালে জেল জরিমানা দুইই হতে পারে। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। কিছু মানুষ আছেন, যারা মিথম্যানিয়া মানসিক রোগে আক্রান্ত এই রোগে আক্রান্ত মানুষ যেখানে কোনো প্রয়োজন নেই, সেখানেও মিথ্যে বলার প্রবণতা কাজ করছে।মনোবিদরা বলছেন, পুরুষদের চেয়ে মহিলারা বেশি এই রোগে আক্রান্ত হন। এই রোগে রোগীরা নিজেরাও বোঝেন না যে, তারা মানসিক রোগে আক্রান্ত। তারা মিথ্যে কে সত্য ভাবেন। শুধু তাই নয়, তাদের এই ভ্রান্ত ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে নানা যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করেন। গুজবের বহরে বেশ কয়েকদিন দৈনিক পত্রিকা বিলি বন্ধ থাকে। এখনও বেশ কিছু মানুষ হাতে টাকা এলে তা সাবান জলে ও ডেটল জলে ধুয়ে শুকোতে দিচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খবরের কাগজ বা টাকার কাগজে ভাইরাস ছড়ায় না। টাকা ধুলে দামি কাগজ নষ্ট হয়। যা এক কথায় জাতীয় ক্ষতি। সংবিধানগত ভাবে যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।গুজবের জেরে ইরানে অপরিশোধিত অ্যালকহল পান করে প্রায় পাঁচশ মানুষ মারা গেছেন। প্রশাসন বার বার প্রচার করলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো বন্ধ হয়নি। প্রশাসনের পাশাপাশি দায়িত্ববান নাগরিকদেরও প্রতিরোধ গড়ে তুলে এই গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করতে হবে।
Be First to Comment