————————-মা অন্ত প্রাণ——————-
মৃদুলা ঘোষ: কলকাতা, ১০মে ২০২০। বিশ্ব জুড়ে লকডাউনে র আবহে একটু ম্লান এবছরের মাতৃ দিবস উদযাপন। ১৯১৪ সালে আনা জার্ভিস মায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে যে মাতৃ দিবসের স্বীকৃতি আদায় করে ছিল তার ই আধুনিক রূপান্তর দেখি বতর্মান মাতৃ দিবস পালনে।
“মা”শব্দ টি র মধ্যেই আশ্চর্য ধারন শক্তি আছে, যা স্থৈর্য, ধৈর্য্য, ঐশ্বরিক ক্ষমতা, নিখাদ ভালোবাসা য় তৈরী, তার সন্তানের জন্য। সে সন্তান হোক সু অথবা কু। আর আমাদের মনোবাসনা থাকে মা যেন এমনই হয় তার কাটা ঘা এ নুনের ছিটে দিলে অন্য সবার মতো জ্বালা না ধরে।
প্রাচীন কালে গ্রিক ও রোমানদের মধ্যে ও মাতৃ দিবস পালন করা হত তাদের দেবী মা ‘রেহা ও সিবিলি’ কে সম্মান জানানোর মধ্যে দিয়ে, কোথাও আবার মা কে তার মেয়েরা মাতৃত্বের জন্য মারজিপন দেওয়া কেক উপহার দিত। তবে বর্তমান মাতৃ দিবস পালনের উৎসস্থল আমেরিকা।
পশ্চিম ভার্জিনিয়া র একটি চার্চে আনা জার্ভিস তার সমাজসেবী মা র স্মৃতি র উদ্দেশ্যে ভালো বাসা জানিয়ে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার কে নির্বাচন করেছিলেন মাতৃ দিবস হিসেবে, স্বীকৃতি দিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন। নিজের মা এবং বিশ্বের সব মা র প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রদর্শনের একটি প্রতিকী দিন এই মাতৃ দিবস।
কিন্তু চলতি সময়ে আর পাঁচ টি বিষয়ে আধুনিকতার স্রোতে গা ভাসানোর মত মাতৃ দিবস কে ঘিরে প্রচুর বিঙ্গাপন, মা কে দেওয়ার বিশেষ উপহার এর পরামর্শ, হোটেল রেস্টুরেন্ট এ মা এর সাথে লাঞ্চ-ডিনারে আকর্ষনীয় ছাড়… দিনটি র মাধুর্য কে নষ্ট করে দিচ্ছে বলে মনে হলেও, মা র সাথে বিশেষ ভাবে কাটানো র একদিন কে বিশেষ ছাড় দেওয়া যেতে পারে। যদিও সন্তানের প্রতি মা এর যাবতীয় ত্যাগ কোনো উপহারে ই বাধা পরে না। তাই, কবিগুরু’র হারিয়ে যাওয়া কবিতায়, মা তার বামী র কান্না শুনে উদ্বেল হয়ে পরে।
জগত- সংসারে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি তে মা যে তারা সন্তানের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্যে অবিচল থাকেন, তা বলাই বাহুল্য। তাই একজন বছর পঞ্চাশের মা লকডাউনে বন্দী থাকা ছেলে কে উদ্ধার করতে স্কুটার এ তেলেঙ্গানা র নিজামাবাদ থেকে অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর এক হাজার চারশো কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবার সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করেন নি। তবুও মা র দুধে ভাতে থাকা সন্তানেরা চাইবে এই বিশেষ দিনে বিশেষ ভাবে পেতে।
নিন্দুকেরা যত ই বলুন, পিতামাতা কে অনাদরে রাখার প্রবনতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে আদতে তা নয়। যে মা-বাবা সন্তান কে সাফল্যের চূড়ায় দেখবে বলে, নিজেদের সবটুকু উজার করে দেয়, তাদের সন্তানের প্রতি তথাকথিত আশা আকাঙ্খা ত্যাগ করার সাহস ও রাখতে হবে।
হয়তো, পরিস্থিতির বিপাকে মা অন্ত প্রাণ প্রকাশের উপায় থাকে না, তবুও মা র কাছে সকল সন্তান ই বীরপুরুষ হয়ে বলতে চায় “আমি আছি, ভয় কেন মা করো?”। শুধু মাতৃ দিবস এ নয়, সমস্ত জীবন জুড়েই জানি মা না থাকলে পরিবার নেই, পরিবার না থাকলে সমাজ নেই, সমাজ না থাকলে দেশ নেই আর দেশ না থাকলে মানুষের অস্তিত্ব শূন্য জগত সংসার। তাই মা অন্ত প্রাণ মাতৃ দিবস বাঁচিয়ে রাখবে যেকোন আবহে।।
Be First to Comment