Press "Enter" to skip to content

মানবপ্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য, পরিবর্তনহীন রীতিনীতি ও স্বভাব তাঁর লেখায় প্রকাশ পায় বলেই ঝুম্পা লাহিড়ী আন্তর্জাতিক….।

শু ভ জ ন্ম দি ন ঝু ম্পা লা হি ড়ী

বাবলু ভট্টাচার্য : মানবপ্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য, পরিবর্তনহীন রীতিনীতি ও স্বভাব তাঁর লেখায় প্রকাশ পায় বলেই ঝুম্পা লাহিড়ী আন্তর্জাতিক।

ঝুম্পার আসল নাম নীলাঞ্জনা সুদেষ্ণা লাহিড়ী। বাবা অমর লাহিড়ী রোড আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর মায়ের নাম তপতী লাহিড়ী। তাঁরা প্রায় ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে আমেরিকায় বসবাস করছেন। তবুও তাদের জন্মস্থানকে কোনো দিন ভোলেনি তারা। ঝুম্পার মা ভীষণভাবে চাইতেন যে তাদের মেয়ে বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য জেনে বড়ো হোক।

বাঙালির প্রবাসজীবন নিয়ে, সেই প্রবাসে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার লড়াই নিয়েই ইংরেজিতে লেখেন তিনি। উদ্বাস্তু জীবন বার বার ফুটে উঠেছে তাঁর কলমে। তিনি হলেন, ঝুম্পা লাহিড়ী পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী মার্কিন-ভারতীয় বাঙালি বংশদ্ভুত লেখিকা।

অস্তিত্বের সঙ্কটে তিনি নিজেও সারাজীবন ভুগেছেন। ঝুম্পার প্রথম উপন্যাস ‘দ্য নেমসেক’-এর মূল চরিত্র গোগোলও এই অস্তিত্ব সঙ্কটে ভোগে। ঝুম্পার নিজের জীবনই ছায়া ফেলেছে গোগোলের চরিত্রে। গোগোল তার দেশের মাটি থেকে পালাতে চায়, কিন্তু সে শান্তি পায় না। এই অশান্তিই গোগোলের নিয়তি। সেরকমই ঝুম্পারও।

ঝুম্পার কথায়, ‘আমি ছোটবেলা থেকে বাংলা শুনছি, বলতে পারি, কিন্তু বাংলা ভাষা তো পুরোপুরিভাবে আমার জানা নয়, তা হলে তো আমি বাংলাতেই লিখতাম, সেটা আমি পারি না। ইংরেজি ভাষাটা আমি ভাল জানি কারণ আমার পড়াশোনাটা ইংরেজিতে। তবুও আমার মনে হয়, ইংরেজি আমার ভাষা নয়। কারণ ইংরেজি আমার মা-বাবার ভাষা নয়। বাংলা আমার মা-বাবার ভাষা।”

মাঝে বেশ কিছু বছর ঝুম্পা আমেরিকা ছেড়ে ইতালির রাজধানী রোমে থাকা শুরু করেন। ইতালিয় ভাষা শিখে সেই ভাষায় তিনি একটি বই লেখেন। বইটি ইংরেজি অনুবাদসহ প্রকাশিত হয়েছে, নাম ‘ইন আদার ওয়ার্ডস’।

তাঁর মতে, “আমি যখন এখন ইতালিয়ান ভাষায় বই লিখছি, আমার খুব মনে হচ্ছে যেভাবে আমার কোনও নির্দিষ্ট একটা দেশ নেই, ঠিক সেভাবেই আমার কোনও নির্দিষ্ট একটা ভাষাও নেই। যে লেখে তার জন্য ভাষাই দেশ। ভাষা আর দেশ কি আলাদা কিছু? একই জিনিস।’’

আরো এক সাক্ষাৎকারে ঝুম্পা বলেন “লং আইল্যান্ডে আমার বন্ধু-বান্ধবরা জানতই না, কলকাতা কেমন! কলকাতাতেও খুড়তুতো, জ্যাঠতুতো, মামাতো ভাইবোনেরা আমাকে ‘আউটসাইডার’ ভাবত। ছোটবেলাতেই মনে হয়েছিল, আমার কোনও দেশ নেই। কিংবা সব দেশই যেন আমার নিজের। যেখানে খুশি, যেতে পারি।”

শেকড়ের সন্ধানে বার বার প্রত্যাবর্তন করেছেন কলকাতায়। ‘দ্য লোল্যান্ড’ উপন্যাসের প্রথমে নাম ঠিক করেছিলেন ‘রিটার্ন’। বলেন “পরে ভেবে দেখলাম, নামটা ভাল না। বরং লো ল্যান্ড বা নাবাল জমিতে জল জমে, আবার রোদে উবে যায়। আমার চরিত্ররাও সবাই সেই ভাবে টালিগঞ্জের পানাপুকুরে যায়, উবে যায়, ফের আসে। তখনই নামটা বদলে দিলাম।”

এভাবেই বার বার ঝুম্পা তাঁর জীবনের সাথে লেখাকে মিলিয়ে দিয়েছেন। থেকেছেন কলকাতা, লন্ডন, রোড আইল্যান্ড, ইতালিতে। সারা জীবন ধরেই ছুটে চলেছেন অস্তিত্বের সন্ধানে। এই ছুটে চলায় বিষন্নতাও অনিবার্য। তাঁর যুক্তি “আসলে আমি কোথায় আছি, কোথায় থাকি সেটা নিছক মানসিক অবস্থান।”

সাহিত্যিক অবদানের জন্য পুলিৎজার ও হেনরি পুরস্কার ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে আরও নানা পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন ঝুম্পা।

১৯৯৩ সালে হেনফিল্ড ফাউন্ডেশন থেকে ট্রান্সআটলান্টিক পুরস্কার লাভ করেন। ২০০০ সালে আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড লেটার্স থেকে অ্যাডিসন মেটকাফ অ্যাওয়ার্ড, ২০১৪ সালে ‘ন্যাশনাল হিউম্যানিটিজ মেডেল’ ইত্যাদি সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি।

ঝুম্পা লাহিড়ী ১৯৬৭ সালের আজকের দিনে (১১ জুলাই) লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন।

More from BooksMore posts in Books »
More from InternationalMore posts in International »
More from Writer/ LiteratureMore posts in Writer/ Literature »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *