স্মরণ : শ্রী ম তী বি জ য়া রা য়
বাবলু ভট্টাচার্য : নিজে একজন অভিনেত্রী এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ছিলেন বলে সত্যজিতের চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। তবে নিজেকে কখনই প্রচারের আলোয় আনেননি বিজয়া রায়।
বিজয়া দাশ। জন্ম ১৯১৭, বর্তমানে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। বড় হয়ে-ওঠা পাটনায়, উচ্চবিত্ত পরিবারে, ব্যারিস্টার পিতার বৈভবের মধ্যে। সহসা পিতার মৃত্যু এবং অবস্থা বিপর্যয়, কলকাতায় পিসিরবাড়ি উঠে আসা।
নাটকীয়ভাবে সত্যজিৎরাও সে-বাড়িতে উঠে আসেন তাঁদের পৈতৃক বাড়িটি বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর।
বিজয়া রায়ের পিসেমশাই সত্যজিতের মামা হতেন। সেই থেকে সত্যজিৎ- বিজয়ার নৈকট্য, যা শেষে বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়।
সত্যজিতের সৃষ্টিশীলতায় স্ত্রী বিজয়া রায়ের অবদান বিশাল। যে-চলচ্চিত্রমাধ্যম সত্যজিতের শিল্প বিকাশের পথ উন্মুক্ত ও প্রসারিত করেছিল, মনে রাখা ভালো, সেই চলচ্চিত্র-মাধ্যমটির সঙ্গে বিজয়ার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা গড়ে উঠেছিল একাধিক ছবিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয়ের সূত্রে।
তাঁর-অভিনীত দুটি বাংলা ছবির দুটিই মুক্তি পায় ১৯৪৪-এ। ছবিদুটির একটি হলো অরোরা ফিল্মের ‘সন্ধ্যা’। এ-ছবির পরিচালনায় ছিলেন মণি ঘোষ। ১৯৪৪-এর ১৫ ডিসেম্বর মুক্তি পেল বিজয়া (তখন পদবি ছিল দাশ)- অভিনীত রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত রম্যনাটকের চলচ্চিত্র রূপ ‘শেষ রক্ষা’। এ-ছবির পরিচালক ছিলেন পশুপতি চট্টোপাধ্যায়।
মাত্র আট বছর বয়সে মুগ্ধ রবীন্দ্রনাথকে গান শুনিয়েছিলেন বিজয়া। মুগ্ধ রবীন্দ্রনাথ বিজয়াকে স্থান দিয়েছিলেন নৃত্যনাট্যে।
বিজয়া রায় রবীন্দ্রসংগীতে তালিম নেন স্বনামখ্যাত অনাদি কুমার দস্তিদারের কাছে। ছবিদুটিতে অভিনয় করেছিলেন বিজয়া, নিজের গলায় গানও রয়েছে তাঁর দুটি ছবিতেই।
অতএব কি অভিনয়কলা, কি সংগীত, বিজয়া ছিলেন কৃতী ও সম্ভাবনাময়ী। অতিশৈশব থেকেই প্রমাণিত হয়েছিল সংগীতে বিজয়ার বিস্ময়করতা।
বাংলা ছাড়াও দুটি হিন্দি ছবিতেও নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন বিজয়া। ছবি দুটি ছিল ‘জনতা’ এবং ‘রেণুকা’। এ ছবিগুলোতেও স্বকণ্ঠে গেয়েছেন তিনি।
সত্যজিত রায়ের ছবির যাবতীয় চিত্রনাট্যের প্রথম শ্রোতা-সমালোচক ছিলেন বিজয়া। ‘আগন্তুক’, ‘চারুলতা’সহ সত্যজিৎকৃত বহু ছবিতেই শিল্পীদের গলায় গান তুলে দিতেন তিনি। এমনকি, সত্যজিতের ছবিতে পাত্রপাত্রীর পোশাক নির্বাচনে বিজয়ার প্রায় নিরঙ্কুশ ভূমিকা ছিল। কি ইনডোর, কি আউটডোর শুটিং, বিজয়া রায় গোটা ইউনিটকে নিজস্ব যত্নপরতায় সাবলীল রাখার দায়িত্বে ছিলেন।
১৯৩১ সালে প্রথম সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল তাঁর। তারপর ১৯৪৮ সালে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গেই বিয়ে। ১৯৫৩ তিনি জন্ম দেন তাদের একমাত্র সন্তান সন্দীপ রায়ের। ১৯৯২ সালে প্রয়াত হন সত্যজিৎ রায়।
শ্রীমতী বিজয়া রায় ২০১৫ সালের আজকের দিনে (২ জুন) প্রয়াত হন।
Be First to Comment