——-শুভ জন্মদিন মাক্সিম গোর্কি——-
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, বাবা-মার দেওয়া নাম আলেক্সেই পেশকভ। নিজেকে অবশ্য তিনি ‘মাক্সিম গোর্কি’ নামেই প্রকাশ করতে বেশি পছন্দ করতেন। গোর্কি শব্দের অর্থ ‘তিক্ত’। আক্ষরিক অর্থে তিনি তা-ই ছিলেন। তার লেখায় সবসময় ফুটে উঠেছে তিক্ত সত্য। রাশিয়ার জনজীবনের নিঠুর বাস্তবতাকে তিনি কলমের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন বিশ্ববাসীর সামনে। অকুতোভয় বীরের মতো জার সাম্রাজ্যের শাসকদের বিরুদ্ধে লড়ে গেছেন তার লেখনীর মধ্য দিয়ে।
বাবা-মার মৃত্যুর পর শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন। নেমে পড়েন জীবনযুদ্ধে। শুরুটা হয় জুতার দোকানে কাজ নেওয়ার মধ্য দিয়েই। ভালো না লাগায় এক সময় তা ছেড়ে দিয়ে কাজ নেন কয়েদি জাহাজে। সেখানে কর্মচারীদের বাসন ধোয়ার কাজ করতেন ভোর থেকে মাঝরাত পর্যন্ত। প্রকৃতির রূপ, রস যার হৃদয়ে আসন পেতে বসে ছিল, তাকে কি এই কষ্ট হার মানতে পারে! কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাই তিনি দু’চোখ ভরে দেখতেন নদীর অপরূপ দৃশ্য। নানা ঘাত-প্রতিঘাতে এক পেশা থেকে আরেক পেশায় ঘুরতে ঘুরতে বেড়ে উঠতে লাগলেন গোর্কি। পাশাপাশি নিজের মধ্যে গড়ে তুললেন বই পড়ার অভ্যাস। রাশিয়ায় তখন চলছিল জারের রাজত্বকাল। দেশজুড়ে শোষণ আর অত্যচার। নিজের তাগিদেই যুক্ত হলেন বিপ্লবী দলের সঙ্গে।
পাশাপাশি চলে জীবন-জীবিকার কাজ। হাড়ভাঙা পরিশ্রমে মনের সব শক্তি যেন হারিয়ে ফেলেন তিনি। এক পর্যায়ে বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে সে যাত্রায় বেঁচে গেলেন। তারপর শুরু করলেন লেখালেখি। স্থানীয় এক পত্রিকায় প্রকাশিত হলো তার গল্প-কবিতা। এ সময় পরিচিত হন তরুণ লেখক ভ্লাদিমির করোলেঙ্কার সঙ্গে। জীবন যেন অন্যদিকে মোড় নিল গোর্কির। প্রথাগত রচনার ধারাকে বাদ দিয়ে শুরু হলো তার নতুন পথের যাত্রা। সমাজের নিচুতলার মানুষের জীবনচিত্র প্রকাশ পেতে থাকে তার রচনায়। বিষয়গুলো পত্রিকায় ছাপার পর সবাই মুগ্ধ হয়ে তা পড়তেন। তখনও ঠিক অতটা খ্যাতি পাননি গোর্কি। ১৮৯৮ সালে তার প্রবন্ধ ও গল্প নিয়ে একটি সংকলন বের হয়। এটি প্রকাশের পর তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। সে সময়ের রাশিয়ার বিখ্যাত লেখক চেখভ, তলস্তয়ের সঙ্গে গোর্কির নামও উচ্চারিত হতে থাকে সবার মুখে মুখে। ১৯০০ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘ফোমা গর্দেয়ভ’। এ উপন্যাসে তিনি নিপীড়িত ও অবহেলিত মানুষের মর্মবেদনার কথা তুলে ধরলেন— যা এর আগে কেউ এমনভাবে প্রকাশ করতে পারেননি।
এ উপন্যাস রুশ শাসকদের বিচলিত করে তোলে। বন্দি করা হয় গোর্কিকে। খুব শিগগিরই অবশ্য তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় রুশ সরকার। ১৯০১ সালে বিপ্লবী অন্দোলন ক্রমেই বেড়ে চলছিল। গোর্কি তখন সেন্ট পিটার্সবার্গে। এ আন্দোলনে অনেক ছাত্র নিহত হলে গোর্কি তাদের নিয়ে লিখলেন ‘ঝড়ো পাখির গান’। এ ঝড়ের গান ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। তার এ কবিতা যেন বিপ্লবের মন্ত্র। ক্রমেই গোর্কি পরিচিত হয়ে উঠছিলেন লেনিনের আদর্শে। এ সময় বহু বিপ্লবী নেতাই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। তিনি হয়ে উঠলেন জার কর্তৃপক্ষের এক নম্বর শত্রু। আন্দোলন তুঙ্গে। দেশে দেখা দিল দুর্ভিক্ষ। গোর্কিকে গ্রেফতার করার পরিকল্পনা করা হলো। তিনি গোপন খবর পেয়ে জার্মানি হয়ে ফ্রান্স ও অমেরিকায় চলে গেলেন। সেখানেই লিখতে শুরু করেন তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘মা’। জারের ভয়ে এই বই প্রথম প্রকাশিত হয় ইংরেজি অনুবাদে। পৃথিবীজুড়ে এ উপন্যাস ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।
ম্যাক্সিম গোর্কি ১৯৩৬ সালের ১৮ জুন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
মাক্সিম গোর্কি ১৮৬৮ সালের আজকের দিনে (২৮ মার্চ) রাশিয়ার নিজনি নভগরোদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment