মৃদুলা ঘোষ: কলকাতা, ৭মে ২০২০ । মানুষের চিরন্তন সুখ দুঃখ, আনন্দ-বেদনা র পালাগান রচনা করেছেন যিনি, বিশ্ব বাঙালি র হৃদয় আকাশে যিনি আজও ধ্রুবতারা… তিনি কবি শ্রেষ্ঠ রবীন্দ্রনাথ, আমাদের প্রিয় রবি ঠাকুর। যার আলোয় উদ্ভাসিত হয় অসংখ্য হৃদয়।
২৫শে বৈশাখ, তাঁর জন্মদিনে কিছু বলার কথা ভাবলেই মনে হয়, অতি ক্ষুদ্র তুচ্ছ আমি, কিবা বলিতে পারি। তাঁর কথাতেই শব্দ চয়ন করতে পারি, “শিশির কহিল কাঁদিয়া, তোমারে রাখিবো বাঁধিয়া, হে রবি, আমার নাহি তো এমন বল, তোমা ছাড়া মোর খুদ্র জীবন কেবলি অশ্রু জল। তুচ্ছ শিশির কে সূর্য বলে আমি বিপুল কিরনে ভুবন করি যে আলো, তবু শিশির কণা কে ধরা দিতে পারি, বাসিতে পারি যে ভালো।” এইভাবেই রবীন্দ্রনাথ দু:খ দ্বন্দময়, নৈরাশ্য-পীড়িত সময়ে আমাদের একমাত্র কল্প বৃক্ষ। কিন্তু আজ এই মহামারী রচিত সংকটে বিশ্ববাসী যখন শঙ্কিত, মৃত্যুর প্রহর গুনছে প্রতি মূহুর্তে, তখন আমাদের তারই স্মরণাপন্ন হতে হবে। তিনিই বলেছেন, মৃত্যু মিথ্যা, জীবন সত্য। ভয় পেয়ে পথভ্রষ্ট না হয়ে যেন বলতে পারি “নিবিড় ঘন আঁধারে জ্বলিছে ধ্রবতারা, মন রে মন পাথারে, হোসনে দিশেহারা…
মহামারী, মৃত্যু, অসহায় তা বিধ্বস্ত পৃথিবীতে মনুষ্য সমাজ যখন তীব্র বাঁচার তাগিদে হাহাকার করছে, তখন রবীন্দ্রনাথ হোক মানবতার দীক্ষা গুরু। স্মরণ করতে পারি তাঁর কথা” স্বরগো কি হবে না কেনা বিশ্বের ভান্ডারে, শুধিবে না এত ঋণ? রাত্রের তপস্যা! সে কি আনিবে না দিন?” আমৃত্যু মানবতার জয়গান গেয়ে বুঝিয়েছেন মানুষের চেয়ে বড়ো কিছু নাই। সুন্দরের আরাধনায়, মানবতার পূজায় তিনি তাঁর পঞ্চইন্দ্রিয়ের পঞ্চ প্রদীপ জ্বেলে যেন আরতি করে গেছেন তাঁর অসংখ্য কাব্যগ্রন্থে। তাঁর থেকেই শিখেছি “সন্ধ্যা বেলার আরতি হয়নি আমার শেখা, তবে জীবনের আলোতে জীবন প্রদীপ জ্বালি। অথচ, বহমান ঘটনায় যখন দেখি বারো বছরের পরিযায়ী কন্যা শিশু শ্রমিক জামরু ঘরের টানে দেড়শ কিমি পথ দিনরাত হেঁটে পথশ্রমে মারা যায়, তখন কি কিছুই করার থাকে না? বিশ্ব কবি তো চান নি এমন পরিণতি। রবীন্দ্রনাথ নামের মানুষটির মধ্যে আসলে বিচিত্র মুখী সৃষ্টি শীলতা এবং মহৎ গুণ যে আশ্চর্যজনক ভাবে সংহতি লাভ করেছে, তার কণা মাত্র কি আমরা গ্রহণ করতে পেরেছি? তাই হয়তো তাঁর কাছে জেনেছি, “মানুষের অধিকারে বঞ্চিত করেছো যারে সম্মুখে দাঁড়ায়ে থেকে, তবু বলে দাও নাই স্থান, অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান”। একথা আজ মনে আসছে কারন, আমরা আমিত্বের অহংকার এ বন্দী। অথচ, কবি বলেন “আরো প্রেমে, আরো প্রেমে, মোর আমি ডুবে যাই নেমে…. তবু কেন? তবু কেন আমরা আমিত্ব কে বিসর্জন দিতে পারি না। তাই তাঁর “লোকহিত” প্রবন্ধ টি স্বদেশ ও সমাজ চিন্তায় আজও অন্যতম নিদর্শন। ক্ষুদ্রতাকে ছেড়ে বৃহত্তর দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর সৃষ্ট সঙ্গীত ই নিখিল মানব জগতের তৃষিত চিত্তের তৃপ্ত সরোবর। মানব সভ্যতার রক্ষার তাগিদে আমার নিভৃত প্রাণের দেবতা কে নমস্কার করি বার বার। কথা শিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর উক্তি ধার করে বলি”কবিগুরু তোমার প্রতি চাহিয়া আমাদের বিস্ময়ের সীমা নাই।
মহামারী আঁধারে রবীন্দ্র-স্মরণ”……
More from GeneralMore posts in General »
- বরানগরে তরুস্তুতি….।
- এটিএম কার্ড ফিরিয়ে দিল মঙ্গলকোটের ‘নিখোঁজ’ যুবক কে!….
- Your Summer Dishwashing Routine Made Simple…..
- প্রয়াত বিচারকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোওয়ার আসর….।
- TV9 বাংলার নতুন নিউজ সিরিজ ‘বিপন্ন উত্তরবঙ্গ’….।
- কলকাতার গান এন্ড শেল ফ্যাক্টরি পরিদর্শনে প্রতিরক্ষা দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় শেঠ….।
Be First to Comment