————-জন্মদিনে স্মরণঃ রাসবিহারী বসু——–
“I was a fighter, one fight more, the last and the best.”
———– মহাবিপ্লবী রাসবিহারী বসু
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, তিনি এমন একজন মানুষ যাকে ব্রিটিশরা একদিনও জেলে বন্দী করতে পারেনি। ভারতের স্বাধীনতা কামনায়, ভারতের প্রতি ভালোবাসায় পাগল এক নির্ভীক যোদ্ধা বিপ্লবী রাসবিহারী বসু। যার দেহের প্রতিটি কণা ছিল দেশের জন্যে উৎসর্গীত। দেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে জাপান যাত্রার পরে রাসবিহারী বসু আর ঘরে ফেরেননি। ১৯১৫ সালে ভারতের স্বাধীনতা আনার স্বপ্নে বিভোর স্বাধীনতা সংগ্রামী রাসবিহারী বসু জাপানে গিয়েছিলেন। সেটা ১৯১৫ সালের জুন মাস। নামলেন কোবে বন্দরে। হাতে নামমাত্র টাকা, বন্ধু নেই। কোবে থেকে গেলেন টোকিও। সেখানেই পরিচয় এক তরুণ চিনা বিপ্লবীর সঙ্গে। তিনিই পরবর্তী কালের বিশ্ববরেণ্য বিপ্লবী সান ইয়াৎ সেন। আলাপ হল সামুরাই নেতা মিৎসুরু তোয়ামার সঙ্গে। সন্তানস্নেহে তিনি কাছে টেনে নিয়েছিলেন রাসবিহারীকে। ২৭ নভেম্বর টোকিওতে লালা লাজপত রায়ের সঙ্গে সভা করলেন। খবর গেল ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের কাছে। তার পরই ব্রিটিশ সরকারের চাপে জাপান মারফৎ জারি হল নির্বাসনের আদেশ। তোয়ামার অনুরোধে রাসবিহারীকে বাঁচাতে আশ্রয় দিতে রাজি হলেন বেকারি মালিক আইজো ও কোকো সোমা। অল্প দিনের মধ্যেই রাসবিহারী হয়ে উঠলেন তাঁদের ঘরের ছেলে। বাবা আর মা বলে ডাকতেন ওঁদের। বিয়ে করলেন তাদের কন্যা তোশিকোকে। আট বছরে সতেরো বার বাড়ি বদলাতে হয়েছিল রাসবিহারী-তোশিকোকে। ধরা পড়ার ভয়, সঙ্গে তীব্র অর্থসঙ্কট। কিন্তু কিছুই চিড় ধরাতে পারেনি তাঁদের দাম্পত্যে। রাসবিহারীর জীবনের যাবতীয় ঝড়ঝাপটায় তোশিকোই ছিলেন রক্ষাকবচ। তিনি সংসারের হাল ধরেছিলেন বলেই ভারতের কাজে নিজেকে সঁপে দিতে পেরেছিলেন বীর বিপ্লবী। এক জায়গায় তিনি লিখেছেন— ‘আওয়ার ম্যারেড লাইফ ওয়াজ ভেরি শর্ট বাট ইট ওয়াজ ব্লিস। আই হ্যাড আ ফিলিং দ্যাট আই এনজয়েড টোটাল হ্যাপিনেস ডিউরিং দোজ ফিউ ইয়ার্স।’ ১৯৪৫ সালের ২১ জানুয়ারি জাপানেই মারা যান তিনি। প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যুর অনেক বছর পর রাসবিহারীর মৃত্যু হলে টোকিয়োর তামা শ্মশানে তোশিকোর সমাধির উপরেই তৈরি হয়েছিল তাঁর সমাধি।রাসবিহারী বসু জাপানে বাড়ির পাইনগাছের ফলকে লিখে রেখেছিলেন ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ দেওয়া তাঁর বিপ্লবী বন্ধুদের নাম। অবসরে দেখতেন এবং কাঁদতেন। বহু সাধ থাকলেও দেশে ফিরতে পারেননি। জাপান সম্রাট তাকে জাপানের সর্বোচ্চ সম্মান “Second Order of the Merit of the Rising Sun” প্রদান করে। তাঁর শেষকৃত্যে সভাপতিত্ব করেছিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। ১৯৪১ সালে ২২ বছরের সাধনায় রাসবিহারী বসু তৈরি করেন ইন্ডিয়ান ইনডিপেনডেন্স লীগের সামরিক বিভাগ। ১৯৪৩ সালের ২ জুলাই নেতাজি সিঙ্গাপুরে পৌঁছান। ১৯৪৩ সালের ৪ জুলাই রাসবিহারী বসু নেতাজিকে সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব তুলে দেন। রাসবিহারী বসুর প্রারম্ভিক সাংগঠনিক শ্রমের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তী সময়ে সুভাষচন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন।
রাসবিহারী বসু ১৮৮৬ সালের আজকের দিনে (২৫ মে) পূর্ব বর্ধমান জেলার সুবলদহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment