———–জন্মদিনের শ্রদ্ধাঃ যূথিকা রায়————
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, যূথিকা রায় ছিলেন বাঙালি খ্যাতকীর্তি ভজন গায়িকা। চার দশকের সঙ্গীত জীবনে ভক্তিমূলক ভজনগানে হিন্দি ও বাংলা চলচ্চিত্রে অসামান্য প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন তিনি। যূথিকা রায় ২০০টির বেশি হিন্দি ও ১০০টির বেশি বাংলা চলচ্চিত্রে নেপথ্য সঙ্গীতে কণ্ঠ দেন। যূথিকা রায়ের আদি বাড়ি ছিল বাংলাদেশের খুলনার সেনহাটি’তে। ডাক নাম ছিল ‘রেণু’। পিতা ছিলেন স্কুল ইনসপেক্টর, বদলির চাকরি। ঘন ঘন বদলির কারণে লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটত। ১৯৩০ সালে তাঁর মা কলকাতার চিৎপুরে বাসা নেন। বড় বোন বেথুন কলেজে ভর্তি হন। আর যূথিকা ছোটবেলা থেকেই গানে অনুরক্ত ছিলেন বলেই বরানগরে জ্ঞানরঞ্জন সেনের কাছে তালিম নেওয়া শুরু করেন। ঘটনাক্রমে কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হন। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে নজরুল ইসলামের চেষ্টায় প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড হয় ‘স্নিগ্ধ শ্যাম বেণী বর্ণা’ গানটি। এরপর কমল দাশগুপ্ত তাঁকে দিয়ে প্রণব রায়ের রচনায় দুটি গান করান- ‘আমি ভোরের যূথিকা’ আর ‘সাঁঝের তারকা আমি পথ হারায়ে’। গান দুটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে তিনি জনপ্রিয় শিল্পীতে পরিণত হন।
তাঁর জন্য নতুন গান রচনা করেন কাজী নজরুল ইসলাম- ‘নীল যমুনার জল’ এবং ‘হে কৃষ্ণ প্রিয়তমা’। হেমন্তকুমার ও মান্না দে’র সমসাময়িক হয়ে, এরপর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয় নি। সারা ভারতে গান শুনিয়েছেন। গিয়েছেন শ্রীলঙ্কা ও পূর্ব আফ্রিকা। দিল্লি, কলকাতা বোম্বাই মাদ্রাজ এলাহাবাদ লক্ষৌ পাটনা, জলন্ধর সহ বহু বেতারকেন্দ্রে গান করেছেন। ১৯৩৭ সালে রামকৃষ্ণ পরমহংস-এর জন্মশতবার্ষিকী উৎসব উপলক্ষে ঠাকুর ও স্বামী বিবেকানন্দ সম্বন্ধে কাজী নজরুল ইসলামের রচনায় ও কমল দাশগুপ্তর সুরে দুটি ভক্তিমূলক গান- ‘পরমপুরুষ সিদ্ধযোগী মাতৃভক্ত যুগাবতার’ ও ‘জয় বিবেকানন্দ সন্ন্যাসী বীর’ গান করেন। দীর্ঘ চার দশকের সঙ্গীত জীবনে জনপ্রিয় আধুনিক গান সহ বহু ভক্তিমূলক ভজন গেয়েছেন। মোট রেকর্ড সংখ্যা হল ১৭৯টি। উল্লেখযোগ্য গানগুলি হল- ‘এমনই বরষা ছিল সেদিন’, ‘জানি জানি প্রিয়’, ‘দোল দিয়ে কে যায় আমারে’, ‘এই যমুনার তীরে’, ‘তুমি যদি রাধা হতে শ্যাম’ ইত্যাদি। মহাত্মা গান্ধীর প্রিয় ভজনসহ হিন্দিতে ভজন গেয়েছেন। মহাত্মা গান্ধী তার ভজন শুনে যূথিকাকে ‘মীরাবাঈ’ উপাধি উপহার দেন। মহাত্মা গান্ধী ও জওহরলাল নেহরু দুজনেরই প্রিয় ভজন শিল্পী ছিলেন তিনি। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট, ভারতের প্রথম স্বাধীনতা দিবস। দিল্লির রেডিও স্টেশন থেকে আমন্ত্রণ পেলেন গান গাইবার। ১৯৭২ সালে ভারত সরকার তাঁকে “পদ্মশ্রী” সম্মানে ভূষিত করে।
যূথিকা রায় আজীবন ব্রহ্মচর্যের জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করে দীর্ঘরোগভোগের পর ৯৩ বৎসর বয়সে ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতার রামকৃষ্ণ মিশন সেবাপ্রতিষ্ঠানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
যূথিকা রায় ১৯২০ সালের আজকের দিনে (২০ এপ্রিল) পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার আমতা’য় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment