——————এক যে ছিল মাছি——–———
মধুমিতা শাস্ত্রী: ২ এপ্রিল ২০২০মধ্যহ্নভোজনে একটা মাছি এসে ভাতে বসল। হাত নাড়িয়ে তাড়িয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পর আর একটা এসে বিরক্ত করতে শুরু করল। অনেকক্ষণ ধরে মাছিগুলোকে তাড়ানোর পরও বারে বারে ফিরে আসছিল। এবার তাক করে আছি, ফাঁকা কোথাও বসলে মারব। হাত তুলেছি এমন সময় একটি মাছি বলে উঠল,
–এটা কী করছেন?
আমরা মাছি বলে আমাদের জীবনের কোনও মূল্য নেই নাকি?
— মানেটা কী? তুমি আমার ভাতে ওই নোংরা পা নিয়ে বসছ, খাবারে জীবাণু ছড়াচ্ছ, এতে আমার কতরকমের অসুখ হতে পারে জানো?
— শুধুই তো অসুখ, মরে তো যাবেন না। আর আপনার ঐ দৈত্যাকার হাতের তলায় যদি আমি পিষে মারা যেতাম। ভাবতে পারছেন কী হতো? আমার ভরা সংসার, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা এদের কী হতো? তাছাড়া খাবারে বসাটা আমাদের জন্মগত অধিকার।
— সে কী রে বাবা!
— অমন অবাক হলেন যে বড়। জানেন না, খাদ্য – বস্ত্র- বাসস্হান এগুলি একটা জীবের প্রাথমিক চাহিদা। আর এর মধ্যে আমরা দ্বিতীয়টির দাবি করি না। আপনারা তো তিনটেরই সুবিধা নিচ্ছেন। আর তৃতীয়টা আমরা কায়ক্লেশে অর্জন করি। তাও আপনারা আমাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন!
— তা তোমরা তো নোংরা জায়গায় না বসে পরিষ্কার জায়গায় বসতে পার।
— আসলে আপনারা পরিষ্কার রাখবেন না আর আঙুল তুলবেন আমাদের দিকে! আর আপনারা কী না খান, মরা, পচা, জ্যান্ত, কোনওদিন হয়তো আমাদেরই খেয়ে ফেলবেন। একটা কথা জানেন তো আমরা একে অপরের পরিপূরক। মানে আমরা খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে পড়ি। আমরা না থাকলে খাদ্যশৃঙ্খলের চরম সঙ্কট দেখা দেবে। তাই ক্ষুদ্র এই জীবটিকেও গুরুত্ব দিন।
— আচ্ছা ঝামেলা করছ তো!
— জানেন, আমাদের এই মক্ষীকূল আজ লুপ্তপ্রায়। মাছে বসব, ফরমালিন দিয়ে রাখেন। ফুলে বসব, কীটনাশক দেন। বলি আমাদের কি ধনেপ্রাণে মারবেন? আমাদের জাতভাই ডাঁশ, তাদের তো নির্বংশ করেছেন। সারা পৃথিবীতে তো আপনাদেরই আধিপত্য। আর পৃথিবীর অন্য প্রাণীদের হাতের পুতুল ভাবেন!
— আরে তুমি তো বলতে বলতে বড্ড বাজে কথা বলে যাচ্ছ! আর তোমাদের বাঁচা, মরা, জীবনচক্র চালাবার ও বংশবিস্তার করার অনেক জায়গা আছে, কিন্তু তোমারা শুনবে না। তোমরা হলে মাছির জাত।
— শেষপর্যন্ত আমার জাত তুললেন? আমাদের জাতভাই মৌমাছি, তার থেকে সমস্তরকম সুবিধা নিচ্ছেন। জানেন, একবিন্দু মধু জোগাড় করতে কী কী করতে হয়! আর আপনারা তা ডাকাতের মতো নিয়ে যান।
শুনুন আপনাদের মতো কথা আর অতো বড় মাথা আমাদের নেই। আমরা অল্পতে তুষ্ট। আপনারা সারাজীবন শুধু আরও চাই আরও চাই করে যান। আমরা কেবল আমাদের জীবনচক্র চালানোর জন্য যা করার তাই করি। আর মনুষ্যজাতী পৃথিবীর সমস্ত প্রাকৃতিক জিনিস নষ্ট করছে। পৃথিবীতে প্রলয় নামিয়ে আনছেন, নিজেদের আরাম, ভোগবিলাসের জন্য।
— ব্যাটা মাছি, ঐ টুকু চেহারা নিয়ে এতো লপচপানি কীসের রে?
— ছোট বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন না। মশাই দেখেছেন তো আমাদের থেকে আরও ছোট একটা জীব কীরকম প্রলয় নৃত্য শুরু করে দিয়েছে। পারছেন তাকে থামাতে!
— তোদের থেকেও ছোটো জীব! সে আবার কে রে?
— ঐ যে আপনারা যার নাম দিয়েছেন করোনা ভাইরাস।
ব্যাস আমার আর মুখে কথা জোগায় না। আমি ভাতের থালা ছেড়ে উঠে পড়ি।
Be First to Comment