Press "Enter" to skip to content

মধ্য কলকাতার বাইক কাফেতে পালিত হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস…….

Spread the love

গোপাল দেবনাথ/সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: কলকাতা, ৭মার্চ ২০২০ বিশ্বের বৃহত্তম সংবাদসংস্থা রয়টার্সের সেবামূলক শাখা সংগঠন দি দ্য টমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন এর এক সমীক্ষা বলছে,নারীদের জন্য বিপদজনক এই তালিকায় ভারতের স্থান আফগানিস্থান, সিরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো,পাকিস্তানের আগে। অর্থাৎ যে দেশগুলি দীর্ঘদিন গৃহযুদ্ধে নিপীড়িত মহিলারা রক্ষণশীলতার নামে নিষ্ঠুর অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন সেই সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছে সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতি ঘণ্টায় ৪০টি অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। যার অধিকাংশ ধর্ষণ। সমীক্ষা বলছে, কন্যা ভ্রূণ হত্যা, বধূ নিগ্রহ ,যৌন নির্যাতনের কারণে বিশ্বে গড়ে প্রতিদিন ১৫০জন মহিলা নিহত হচ্ছেন। গতবছর রাষ্ট্রপুঞ্জের ড্রাগ ও অন্যান্য অপরাধ সংক্রান্ত দফতর তাদের গবেষণায় জানিয়েছেন, মহিলারা বাড়িতেও ক্রমশ অসুরক্ষিত হয়ে পড়ছেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ১৪৪ টি দেশে নারী পুরুষের আয় বৈষম্য নিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে বলেছে, কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষের বেতনসাম্য আনতে ২১৭বছর লাগবে। ভারতের স্থান ১৪৪এর মধ্যে ১০৮। যেখানে বাংলাদেশ ৪৬। চাকরি জীবনে পুরুষদের তুলনায় গড় বেতনে ১০-২০শতাংশ ফারাক পেনশনের ক্ষেত্রে দাঁড়াচ্ছে ৩০থেকে৪০শতাংশ। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন নারীরা।কেননা গড় আয়ু তাদের পুরুষদের তুলনায় ২.৫বছর বেশি। সুদানের অবস্থা শুনলে শিউরে উঠতে হয়। সেখানে সুদান সরকার অর্থাভাবে নিয়মিত বেতন দিতে না পেরে পরিবর্ত হিসেবে নারী ধর্ষণে বৈধতা দিয়েছে। চরম অর্থ সংকট চলছে ভেনজুয়েলাতে। সেখানে নারীরা ৯০শতাংশ ছিলেন সম্মানজনক শিক্ষিকার পেশায়। কাজ হারিয়ে পেটের জ্বালায় কলম্বিযায় গিয়ে তারা পতিতাবৃত্তি করছেন। নারী অবমাননার চরম উদাহরন রয়েছে আমাদেরই দেশে। মহারাষ্ট্রের কাণ্ডরভর সম্প্রদায়ের বিয়েতে প্রথম রাতে স্ত্রীর সতীত্ব পরীক্ষা হয়। এদেশে শিয়া ইসমাইলি সমাজে নারী খৎনার জঘন্য প্রথা চালু আছে।দিদিমা ছোট থাকতে মেয়েদের দাই এর সাহায্যে যোনীর অস্ত্রোপচার করে দেন। নেপালে কুমারী পূজার নামে ছোট ছোট মেয়েদের ৩২ রকমের পরীক্ষা দিতে হয়। মন্দিরে রাখা হয় বন্দী করে ।বাড়ির লোক বছরে ১৩বার দেখার সুযোগ পান।এই প্রথা আজও চলছে। আফ্রিকার আদিবাসী সমাজের এক ঘৃণ্য প্রথা পৌঁছে গেছে আমেরিকায়। সেখানে আদিবাসীরা কন্যা শিশুদের স্তন বিকশিত হলে গরম পাথর দিয়ে আয়রন করে দেওয়া হয়। যাতে পুরুষের চোখে স্তন আকর্ষিত না হয়। লন্ডনে এর নাম ব্রেস্ট আয়রনিং। নিউগিনিতে স্তন বৃদ্ধির জন্য এক বিশেষ জাতের পিপড়ের মাথা ছিড়ে ডলে দেওয়া হয়। পিপড়ের বিষাক্ত দেহরসে স্তনের চামড়া ফুলে ওঠে। বিষাক্ত কিছু পাতার রস দিয়ে আরও ফোলানো হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলিতেও নারী নির্যাতন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে মেয়েরা বিয়ে করতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে সেক্সটয় কেনার প্রবণতা বাড়ছে।নারী দিবসের তাৎপর্য ফিকে হয়ে পড়ে বিভিন্ন শাস্ত্রীয় বিধান দেখলে। হিন্দু ধর্মে মনুর (৫:১৫৫)বিধানে বলেছেন,নারী শুধু কন্যা সন্তান জন্ম দিলে বারো বছর অপেক্ষা করো। তাতেও পুরুষ সন্তান জন্ম না দিলে ত্যাগ করো ।মৃত সন্তান প্রসব করলে পনেরো বছর পরেও ত্যাগ করা যায়। বৃহ দ্যারণ্যক উপনিষদে (১_৯২৪১) তে বলা হয়েছে লাঠি মেরে নারীকে বশিভুল রাখবে। দেহ বা সম্পত্তির ওপর অধিকার নেই। কুরআনে (সুরানিসা৩৪) বলছে,স্ত্রীদের সদুপদেশ দাও। তবু অবাধ্য হলে শয্যা ত্যাগ করো।

তাদের প্রহার করো। মরক্কোর সংবিধানে বলছে স্ত্রী অনুগত থাকবে স্বামী ও স্বামীর পরিবারের প্রতি।
বিশ্বের এই ছবির পাশাপাশি ভারতে যে নারী দিবসের গুরুত্ব বাড়ছে তা আশাব্যাঞ্জক।কলকাতার বাইক ক্যাফের কর্ণধার মনোজ রাঠির উদ্যোগে ক্যাফেতে উদযাপন হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস । হাজির হন লরেটো স্কুলের অধ্যক্ষ জেসিকা গোমস্, গায়িকা পরমা ব্যানার্জি, লোকশিল্পী দীপান্বিতা আচার্য, শেফ প্রিয়াঙ্কা এম, ফিউচার হোপের সুজাতা সেন, বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালক রূপালী বসু, আর জে রূপসা, সমাজবিদ নীলাঞ্জনা চক্রবর্তী, ও ড়ি শী নৃত্যশিল্পী সঞ্চিতা ভট্টাচার্য, চিত্রশিল্পী এলিনা বণিক এবং সস্ত্রীক অভিনেতা ও বিজ্ঞাপন জগতের বরুণ চন্দ। বরুনবাবু বলেন,বিশেষ একটি দিন পালন করে নারীর ক্ষমতায়ন হয় না।সমাজের সর্বস্তরে বিষয়টি অনুভূতিতে আনতে হবে। বাস্তব সত্য আজও অনেক নারী চান স্বামীর প্রাধান্য। এই আত্মসুখ নেতিবাচক। সুচিন্তিত বক্তব্য রাখেন চিত্রশিল্পী এলিনা বণিক। নারী দিবসের পাশাপাশি পুরুষ দিবস হচ্ছে। আলাদা করা তাহলে এল জি বি টি দিবসও দরকার।সামাজিক স্বীকৃতি টাই আসলে বড় ব্যাপার।মানুষকে বিবর্তনের শর্ত রক্ষা করতে লিঙ্গ ভেদে সমতা আনতে হবে। নারী অগ্রগতির প্রধান সহায় ক হতে হবে পুরুষকেই। একটু সংবেদনশীলতার পরিচয় দিলেই সমাজটা শাশ্বত সুন্দর হয়ে উঠতে পারে। আমি আশাবাদী। সেই সুন্দর পৃথিবীটা গড়ার দায়িত্ব বর্তাক নতুন প্রজন্মের হাতে।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.