গোপাল দেবনাথ/ সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়:কলকাতা, ২৭ফেব্রুয়ারি ২০২০ মধ্য কলকাতার সম্ভ্রান্ত এলাকা সেক্সপিয়ার সরণি তে নাগাল্যান্ড হাউস এর নিচে নাগাল্যান্ড রাজ্যের কৃষি সম্পদ ও হস্ত শিল্পের এক আকর্ষণীয় সম্ভার নিয়ে হাজির। দেশে প্রথম কলকাতায় বিপণী খোলা হলো।
কমলালেবুর ফুলের মধু, কিম্বা নাগা লাল শুকনো লঙ্কা,-অথবা নাগা রাজমা ,নাগা মুড়ি, এমনকি নাগাল্যান্ডের বুনো আপেলের মোরব্বা যদি চান আপনাকে আসতে হবে এই বিপনীতে। ঘর সাজানোর বাঁশ কিম্বা কাঠের আসবাব,বেতের আসবাব অথবা রংবাহারি এমব্রয়ডারি জমকালো পোশাক ফ্যাশনে বিপ্লব ঘটাতে চাইলে একটাই গন্তব্য এই বিপণী।
বঙ্গ সুন্দরীরা যদি নাগা সুন্দরীদের পছন্দের গ্রামীণ অলঙ্কারে রুচি রাখেন তাদেরও গন্তব্য হওয়া উচিত এই বিপণী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনাবিল রাজ্য নাগাল্যান্ডের এই প্রথম বিপণী র উদ্যোগের দাবিদার নাগাল্যান্ড রাজ্য সরকার, নাগাল্যান্ড বাম্বু ডেভলপমেন্ট এজেন্সি, নাগাল্যান্ড মৌমাছি পালন ও মধু সংরক্ষণ মিশন, নাগাল্যান্ড প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগ। যা নারী সম্পদ উদ্যোগ যা অনুন্নত এলাকার বিকাশে কর্মরত সংস্থার সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে। এছাড়াও অংশীদারিত্বও রয়েছে নাগাল্যান্ড হ্যান্ডলুম এবং হান্ডিক্রাফটস ডেভলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড এর।
নাগাল্যান্ড এম্পরিয়ামের উদ্বোধন করেন নাগাল্যান্ড সরকারের শিল্প ও বানিজ্য দফতরের সচিব লিথ্রংলা জি চিশি। উপস্থিত ছিলেন মিশন ডিরেক্টর ইমটিরেনলা জামীর, ডিআরসি কলকাতা রেনবেনি নাগুল্লি, এন বি এইচ এম আধিকারিক খুঁজোভোই ভেসে, এন এইচ এইচ ডি সি জেকাবো ভি রতখা ও ডঃ টোলতো মেথা।
নাগাল্যান্ড শিল্প ও বানিজ্য দফতরের সচিব জানালেন, সরকারের সদিচ্ছায় এই প্রথম একটি বিপণী কলকাতায় তৈরি হলো। আমাদের কৃষ্টি ও সম্পদের সঙ্গে প্রতিবেশী রাজ্য ও বিশ্বের দেশগুলির পরিচয় ঘটানোর উদ্যোগ নিয়েছি।কলকাতায় আমরা প্রথম শুরু করলাম। যদিও বৃহৎ আকারে এই পণ্যের উৎপাদন এখনই সম্ভব নয়।
ধীরে ধীরে আমরা চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের ব্যবসায়িক উৎপাদন মাত্রা বাড়াবো। তবে প্রথম থেকেই আমরা প্যাকেজিং ও পণ্যের উৎকর্ষতা বজায় রাখতে আগ্রহী।
নাগাল্যান্ডের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
কারণ অসমের নেফা অঞ্চলকে স্বীকৃতি দিয়ে ভারত সরকার ১৯৬০সালে ১৬ ডিসেম্বর নতুন রাজ্য হিসেবে নাগাল্যান্ড ঘোষিত করে। সংস্কৃত ভাষায় নাগা শব্দের অর্থ পর্বত। নাগা উপজাতিদের বিবরণ বেদে নেই। তবে ঐতিহাসিক তথ্য বলছে, ইন্দমঙ্গলয়েড গোষ্ঠীর মানুষ। কেউ বলেন , ফিলিপাইনস এর নাগা অঞ্চল থেকে এই জাতির আগমন ভারতে।কেউ বলেন বর্নিও দ্বীপ থেকে।আবার কারও অনুমান ইন্দোনেশিয়া থেকে।
যাই হোক না কেন ভারতভুক্তি হওয়ার পর তিন তিনটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নাগারা ব্রাত্য থাকেন । নাগাল্যান্ডে ১৬ টি উপজাতি গোষ্ঠী নোটিফাইড হলেও মূলত পাঁচটি উপজাতি গোষ্ঠী প্রধান। এরা হলেন, গারো, কাছারি, কুকি, মিকির ও নাগা সম্প্রদায়। আদি জীবিকা শিকার ছেড়ে নাগা সম্প্রদায় চাষবাসে ব্যস্ত হয়েছেন।
সঙ্গে কুটির শিল্প ও হস্ত শিল্পেরও প্রসার ঘটছে। এরা বছরকে চারটি ঋতুতে ভাগ করেছেন । মজিলা (বসন্ত), মেরু (গ্রীষ্ম), চালিমং(শরৎ) ও মংপু অর্থাৎ শীত। বিভিন্ন ফসল উৎপাদন তারা করেন ঋতু ভিত্তিক।
সুতরাং অর্গানিক কৃষিপণ্য বা নাগা সংস্কৃতির হস্তশিল্প সামগ্রী তে উৎসাহী রসিক মানুষেরা একবার ঘুরে আসতে পারেন নাগাল্যান্ড এম্পোরিয়াম ।
Be First to Comment