জন্মদিনে স্মরণঃ ব লা ই চাঁ দ মু খো পা ধ্যা য়
বাবলু ভট্টাচার্য : ছোটগল্পের অবয়ব কত ছোট হতে পারে আর সেই স্বল্প পরিসরেও কাহিনি বিন্যাস ও কথন ভঙ্গির গুণে কাহিনির কি অসামান্য ব্যাপ্তি ঘটানো সম্ভব তা বোধহয় তাঁর পূর্বে আমাদের জানা ছিল না। আমরা পরিচিত হলাম ছোটগল্পের নির্মাণে তাঁর বিস্ময়কর দক্ষতার সঙ্গে। ডাক্তার বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় বা ‘বনফুল’— বাংলা সাহিত্যের এক উজ্বল নাম।
পিতা সত্যচরণ ছিলেন মনিহারী জেলা বোর্ড হাসপাতালের ডাক্তার। বলাইচাঁদও সাহেবগঞ্জ স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ এবং হাজারিবাগের সেন্ট কলম্বাস কলেজে আইএসসি পাশ করার পর পাটনা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে চিকিৎসক পেশা গ্রহণ করেন।
চিকিৎসকের পেশা বলাইচাঁদের সাহিত্য কর্মে কোন বাধা হয়নি, বরং চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে নানান ধরনের মানুষকে তিনি দেখেছিলেন সংবেদনশীল অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে।
তাঁর গল্প, উপন্যাসে সেই মানুষকে দেখা আর মানবজীবনের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম অনুভুতির সংবেদনশীল প্রকাশ দেখতে পাই। চিকিৎসকের জীবিকা তাঁকে দিয়েছিল স্বচ্ছ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি— সমাজ ও চরিত্র বীক্ষণে মানব চরিত্রের অনুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ কাজে লাগিয়েছিলেন তিনি।
মধ্যবিত্ত মানুষের লোভ, দোলাচলতা, আত্ম-প্রবঞ্চনা, ভন্ডামি আর বিশ্বাসের সংকট বনফুলের গল্প ও উপন্যাসের উপজীব্য। মানবজীবনকে দেখেছেন বিপুল কৌতুহলি মন ও সহমর্মিতায় । ‘দ্বৈরথ’, ‘ডানা’, ‘কিছুক্ষণ’, ‘স্থাবর’, ‘জঙ্গম’, ‘নির্মোক’, ‘সে ও আমি’ ‘হাটে বাজারে’, ‘অগ্নি’, ‘সপ্তর্ষি’, ‘মৃগয়া’, ‘অগ্নিশ্বর’ বনফুলের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস।
বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় প্রায় এক হাজারের মতো কবিতা, ছয়শত ছোট গল্প, একষট্টিটি উপন্যাস, ‘বিদ্যাসাগর’, ও ‘শ্রী মধুসূদন’ সহ কয়েকটি নাটক ও বেশ কিছু প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তাঁর ‘রচনা সমগ্র’ বাইশ খন্ড।
শরৎস্মৃতি পুরস্কার (১৯৫১), রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৬২), বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক (১৯৬৭)। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট উপাধি (১৯৭৩) এবং ভারত সরকারের পদ্মভূষণ (১৯৭৫) প্রভৃতি বহু সম্মাননা তিনি পেয়েছেন।
১৯৭৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বনফুল আশি বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ১৮৯৯ সালের আজকের দিনে (১৯ জুলাই) বিহারের পূর্ণিয়া জেলার মনিহারিতে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment