———-শুভ জন্মদিন মাস্টারদা সূর্য সেন——–
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, সূর্য সেন বা সূর্য কুমার সেন, ডাকনাম কালু, যিনি ‘মাস্টারদা’ নামে সমধিক পরিচিত। ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব। এই বাঙালি বিপ্লবী তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং নিজ জীবন বলিদান করেন।মাস্টারদা সূর্য সেন ছিলেন বিপ্লবী ‘যুগান্তর’ দলের চট্টগ্রাম শাখার প্রধান এবং ১৯৩০ সালের চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের প্রধান সংগঠক। স্থানীয় দয়াময়ী বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষার পর নোয়াপাড়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন এবং ১৯১২ সালে চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন।
সূর্য সেন যখন নোয়াপাড়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের ছাত্র তখন বঙ্গভঙ্গকে (১৯০৫) কেন্দ্র করে বাংলায় স্বদেশী আন্দোলন শুরু হয়। ক্রমে এ আন্দোলন বিপ্লবে রূপ নেয়। সূর্য সেন ১৯১৮ সালে চট্টগ্রামে ফিরে বিপ্লবী যুগান্তর দলকে পুনরুজ্জীবিত করেন। আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে তিনি ‘ন্যাশনাল স্কুল’-এ শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষকতা করার কারণে তিনি পরিচিত মহলে ‘মাস্টারদা’ আখ্যা পান। ক্রমেই তার দল চট্টগ্রামে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯২৯ সালে চট্টগ্রামে জেলা কংগ্রেসের সম্মেলনে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। এতে সূর্য সেন সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। একই বছর ১৩ সেপ্টেম্বর লাহোর জেলে একটানা ৬৩ দিন অনশন করে বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মারা যান। এর প্রতিক্রিয়ায় সারা বাংলায় প্রচণ্ড বিক্ষোভ দেখা দেয়। বিক্ষোভ মিছিল ও সভায় নেতা সূর্য সেন বিপ্লবের পরবর্তী কার্যক্রমের পরিকল্পনা সদস্যদের সামনে তুলে ধরেন। বিপ্লবীরা স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করার শপথ নেন। এ জন্য তারা ‘মৃত্যুর কর্মসূচি’ ঘোষণা করেন। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিলের সশস্ত্র বিদ্রোহ ছিল সূর্য সেনের নেতৃত্বে বিপ্লবীদের দীর্ঘ সময়ের প্রস্তুতি ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার ফসল। ১৮ এপ্রিল গুড ফ্রাইডে থাকায় সেদিন ইউরোপিয়ান ক্লাবে ইংরেজ পদস্থ কর্মকর্তারা কেউ উপস্থিত ছিল না এবং অক্সিলিয়ারি ফোর্সের অস্ত্রাগারে ভারী অস্ত্র মিললেও কোনো গুলি পাওয়া যায়নি বলে এ দুটি ক্ষেত্রে আশানুরূপ সফলতা আসেনি। তবে সূর্য সেনের নেতৃত্বে পুলিশের অস্ত্রাগার দখলের পর অস্ত্র ও গুলি সংগৃহীত হয়। অস্ত্রাগারে আগুন লাগানোর সময় অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন বিপ্লবী হিমাংশু বিমল সেন। সূর্য সেন পাহাড়ে আত্মগোপন করেন। পরবর্তীকালে গৈরালা গ্রামে আত্মগোপন করে থাকার সময় গ্রামবাসী একজন সূর্য সেনের লুকিয়ে থাকার তথ্য পুলিশকে জানিয়ে দেয়। ১৯৩৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে একদল গোর্খা সৈন্য গোপন স্থানটি ঘিরে ফেলে। সৈন্যবেষ্টনী ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সূর্য সেন ধরা পড়েন। সঙ্গে ছিলেন কল্পনা দত্ত, শান্তি চক্রবর্তী, সুশীল দাসগুপ্ত, মণিলাল দত্তসহ কয়েকজন বিপ্লবী।
‘যুগান্তর’ দলের চট্টগ্রাম শাখার নতুন সভাপতি তারকেশ্বর দস্তিদার সূর্য সেনকে চট্টগ্রাম জেল থেকে ছিনিয়ে আনার প্রস্তুতি নেন। কিন্তু পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়। তারকেশ্বরের সঙ্গে আরও কয়েকজন গ্রেফতার হন। ১৯৩৩ সালে সূর্য সেন, তারকেশ্বর দস্তিদার এবং কল্পনা দত্তের বিশেষ আদালতে বিচার হয়। ১৪ আগস্ট সূর্য সেন ও তারেকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসির রায় ও কল্পনা দত্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ১৯৩৪ সালের ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কারাগারে সূর্য সেন ও তারেকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
সূর্য সেন ১৮৯৪ সালের আজকের দিনে (২২ মার্চ) চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment