Press "Enter" to skip to content

ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা ও অগ্নিযুগের শহীদ বিপ্লবী ছিলেন প্রফুল্ল চাকী…

Spread the love

——————-স্মরণঃ প্রফুল্ল চাকী—————

বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা ও অগ্নিযুগের শহীদ বিপ্লবী ছিলেন প্রফুল্ল চাকী। প্রফুল্ল চাকী ১৮৮৮ সালের ১০ ডিসেম্বর বগুড়া জেলার বিহার গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রাজনারায়ণ ও মাতা স্বর্ণময়ী। পিতা ছিলেন বগুড়ার নওয়াব পরিবারের একজন কর্মচারী। প্রফুল্ল চাকী মাত্র দু’বছর বয়সে পিতাকে হারান।মাতা কর্তৃক লালিত-পালিত চাকী তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামের স্কুলেই শুরু করেন। ১৯০৪ সালে তিনি রংপুরের জেলা স্কুলে ভর্তি হন। রংপুরে তিনি বান্ধব সমিতিতে যোগ দেন। এটি ছিল একটি স্থানীয় শরীরচর্চা ও সামাজিক- সাংস্কৃতিক সংগঠন। নবম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে পূর্ববঙ্গ ও আসাম সরকারের কার্লাইল সার্কুলার লঙ্ঘন করে ছাত্র সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য চাকী স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর তিনি রংপুরের জাতীয় স্কুলে ভর্তি হন। এ সময়েই তিনি জিতেন্দ্রনারায়ণ রায়, অবিনাশ চক্রবর্তী ও ঈশানচন্দ্র চক্রবর্তী-র মতো বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন এবং এর ফলেই তাঁর মাঝে উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ঘৃণা জন্মাতে শুরু করে। ঠিক এমনই এক সন্ধিক্ষণে যুগান্তর দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষ রংপুর ভ্রমণে আসেন। বারীন্দ্র ঘোষের সঙ্গে প্রফুল্ল চাকীর পরিচয় হয় এবং তিনি তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করতে সক্ষম হন। এরপর ১৯০৭ সালে বারীন ঘোষ কলকাতায় গোপন বোমা কারখানা গড়ে তোলার সময় তিনি চাকীকে কলকাতায় নিয়ে যান। এদিকে পূর্ববঙ্গ ও আসামের লেফটেন্যান্ট গভর্নর ব্যামফিল্ড ফুলার বিপ্লবীদের প্রতি তার হিংসাত্মক মানসিকতার জন্য জনগণের চরম ঘৃণার পাত্রে পরিণত হন। বারীন ঘোষ তাঁকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। ফুলারের দার্জিলিং ট্যুরের সময় এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয় ও চাকীর ওপর এ দায়িত্ব অর্পিত হয়। কিন্তু ট্যুর বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে পারে নি। ১৯০৮ সালে যুগান্তর সদস্যগণ কলকাতা প্রেসিডেন্সির ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। স্বদেশী আন্দোলনকারী ও বঙ্গভঙ্গ বিরোধীদের প্রতি তাঁর পক্ষপাতমূলক ও কঠোর আচরণের জন্য তিনি মানুষের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়। অন্য একজন তরুণ বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর সঙ্গে চাকীকে এ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে কিংসফোর্ডকে সেশন জজ হিসেবে মুজাফ্ফরপুরে বদলি করা হয়। তাঁরা দু’জন মুজাফ্ফরপুরে গিয়ে কিংসফোর্ডকে খুব কাছ থেকে কয়েকদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করেন এবং এরপর তাঁদের পরিকল্পনা তৈরি করেন। ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় তাঁরা ইউরোপীয়ান ক্লাবের প্রধান ফটকের সামনে আত্মগোপন করে কিংসফোর্ডের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এরপর কিংসফোর্ডের গাড়ির অনুরূপ একটি গাড়ি গেটের কাছ আসলে তাঁরা বোমা নিক্ষেপ করে গাড়িটি উড়িয়ে দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এটি ছিল মিসেস ও মিস কেনেডির গাড়ি। ঘটনাস্থলেই তাঁরা দুজন মারা যান। প্রফুল্ল ও ক্ষুদিরাম পৃথক পৃথক ভাবে পলায়ন করেন। পরদিন সকালে সমস্তিপুর রেলওয়ে স্টেশনে নন্দলাল ব্যানার্জী নামে পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর প্রফুল্লকে সন্দেহ করে তাঁকে গ্রেফতারের জন্য উপস্থিত পুলিশের সাহায্য নেয়। প্রফুল্ল আত্মসমর্পণ না করার সিদ্ধান্ত নেন এবং নিজেই নিজের রিভলবার দিয়ে মাথায় দু’বার গুলি করে আত্মহত্যা করেন।

প্রফুল্ল চাকী ছিলেন প্রথম দিককার অন্যতম বিপ্লবী যিনি দেশের জন্য আত্মত্যাগ করেছিলেন। তাঁর এই আত্মদান পরবর্তী প্রজন্মের বিপ্লবীদের প্রেরণা জুগিয়েছে।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.