——-জন্মদিনে স্মরণঃ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার—–
“স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতেও পারব, প্রাণ নিতেও মোটেও মায়া হবে না। কিন্তু নিরীহ জীব হত্যা করতে সত্যি মায়া হয়, পারব না।”
——— প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে অনেক বিপ্লবী পুরুষের নাম শোনা গেলেও নারী বিপ্লবীর নাম কমই শোনা যায়। তাদের মধ্যে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার নামটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে এবং থাকবে। একজন নারী সেই সময়ের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে চোখে স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে যেভাবে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন তা আজও মানুষের মনে অম্লান। তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নায়ক মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তিনি। দেশের জন্য, দেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য অন্যায়- অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন প্রীতিলতা।
যে বছর তিনি শহীদ হন সে বছর পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব দখলের সময় তিনি ১৫ জনের একটি বিপ্লবী দল পরিচালনা করতেন। সেই ক্লাবের একটি সাইনবোর্ডের লেখা থেকে ভারতীয়দের প্রতি ব্রিটিশদের ঘৃণা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। এ ক্লাবের একটি সাইনবোর্ডে লেখা ছিল ‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ’। এই একটি বাক্য থেকেই বোঝা যায় সাদা চামড়ার সাহেবরা ভারতীয়দের নিম্নশ্রেণীর কোনো প্রাণী থেকে ভিন্ন কিছু মনে করত না। এছাড়াও পদে পদে ভারতীয়দের অবমূল্যায়ন করা হতো। এসব অবমূল্যায়ন ক্রমেই মনে গভীরভাবে দাগ কাটতে শুরু করেছিল সমগ্র ভারতবাসীর মনে।ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে বহু নাম জড়িয়ে রয়েছে। বহু বিপ্লবীর রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে ভারত এবং পরে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। মাস্টারদার যোগ্য শিষ্য ছিলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ১৯৩২ সালের ১৩ জুন চট্রগ্রামের বিপ্লবীদের প্রধান কেন্দ্র ধলঘাটের ঘাঁটিতে মাস্টারদার সঙ্গে প্রথম দেখা করেন প্রীতিলতা। স্কুলজীবন থেকেই প্রীতিলতা মনে স্বাধীনতার ইচ্ছা পোষণ করতেন। সেটা তার পড়া বইয়ের তালিকা থেকেই বোঝা যায়। প্রীতিলতা যখন দশম শ্রেণীর ছাত্রী তখন লুকিয়ে লুকিয়ে বাঘা যতীন, ক্ষুদিরাম, দেশের কথা আর কানাইলাল পড়তেন। এসব বই প্রীতিলতাকে বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত করে। তিনি ভেতরে ভেতরে দেশকে শত্রুমুক্ত করার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। ব্রিটিশ শাসন থেকে দেশের মানুষকে বাঁচানোর চিন্তা করতে থাকেন। ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের পর পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে তিনি আত্মাহুতি দেন। কারণ তার কাছে জীবনের চেয়ে দেশ অনেক বেশি মূল্যবান ছিল। তার কাছ থেকে যেন কোনো তথ্য ফাঁস না হয়ে যায় সে কারণেই তিনি তার কাছে থাকা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। তার দেহে অবশ্য গুলিও লেগেছিল।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের বিপ্লবী চেতনার যে বিশ্বাস জন্ম দিয়েছেন, তা যুগ যুগ ধরে স্বাধীনতাকামী মানুষকে প্রেরণা দিয়েছে, যা আজও প্রবহমান। কারণ বিপ্লবের মৃত্যু হয় না।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ সালের আজকের দিনে (৫ মে) চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment