————জন্মদিনে স্মরণঃ চে গেভারা————
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে, প্রতিবাদে ও সংগ্রামের রক্তধারায় মিশে আছেন তিনি। জীবন জয়ের সংগ্রামী ধ্রুবতারা তিনি। ইতিহাসের এক নন্দিত ও নিন্দিত চরিত্র। টাইম পত্রিকার বিংশ শতাব্দীর সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী একশো জন ব্যক্তির তালিকায় তাঁর নাম প্রকাশিত হয়। তিনি কমিউনিস্ট বিপ্লবী, লেখক, চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবী, গেরিলা নেতা, কূটনীতিবিদ, সামরিক তত্ত্ববিদ এবং কিউবার বিপ্লবের প্রধান ব্যক্তিত্ব। তিনি বিপ্লবের বরপুত্র : আর্নেস্তো চে গেভারা। দুনিয়ার মুক্তিকামী মানুষের উজ্জ্বল স্বাক্ষরে শুধুই পরিচিত নাম ‘চে ‘। শৈশব থেকেই অসহায়, দরিদ্রদের প্রতি একধরনের মমত্ববোধ তাঁর ভিতর তৈরি হতে থাকে। ভালো কবিতা আবৃত্তি করতে পারতেন। খেলাধূলায় ছিল প্রচন্ড আগ্রহ। সাঁতার কাটতেন, দাবা খেলতেন। রাগবি ছিল তাঁর পছন্দের খেলা। দুর্দান্ত খেলার জন্য তাঁর নামই হয়ে যায় ‘ফিউসার’ (উন্মত্ত)। হাঁপানির কারণে মাঝে মাঝে মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে। সহপাঠীরা তাঁকে ডাকত চানচো (Pig) বলে, কারণ চে অনিয়মিত স্নান করতেন এবং সপ্তাহে একবার মাত্র পোশাক পালটাতেন।
চে গেভারা বুয়েন্সআয়ার্স থেকে ডাক্তারি পাশ করেন। লাতিন আমেরিকার সাধারণ মানুষের জীবন সংগ্রাম উপলদ্ধির জন্য সমগ্র লাতিন আমেরিকা ভ্রমণ করেন। এসময় রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য তাঁর নামে মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়। গুয়াতেমালা ত্যাগ করে বাধ্য হয়ে মেক্সিকোতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সেখানেই আত্মগোপনকারী কিউবার বিপ্লবী এবং ফিদেল কাস্ত্রোর সান্নিধ্যলাভ। ১৯৫৭ সালে সশস্ত্র বিপ্লবী বাহিনীর প্রথম কমান্ডার নিযুক্ত হন এবং কিউবায় বাতিস্তা সরকারের পতন ঘটান। ১৯৬৫ সালে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচিত হন। সারা পৃথিবীজুড়ে কিউবার প্রতিনিধিত্ব করেন। আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও রাষ্ট্রপুঞ্জে কিউবার প্রধান বক্তা ছিলেন তিনি।
১৯৬৬ সালের নভেম্বরে বলিভিয়ার নিপীড়িত মানুষের জীবনযুদ্ধে বলিভিয়ায় প্রবেশ করেন ছদ্মবেশে। বলিভিয়ার সামরিক সরকারের উৎখাতের জন্য গেরিলা অভিযান শুরু করেন। চলতে থাকে একের পর এক সফল অভিযান। সারা বিশ্ব তখন আন্দোলিত। নিদারুণ ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ প্রতিকূল সময়ের এক বিরল যোদ্ধা ও সেনাপতি তখন চে গেভারা। হঠাৎই ছন্দপতন! ১৯৬৭ সালের ৯ অক্টোবর বলিভিয়ার বিপ্লবভূমিতে সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন বিপ্লবের আইকন চে গুয়েভারা। মৃত্যুর প্রমাণ রাখার জন্য তাঁর দুই হাত কেটে নেওয়া হয়। ভ্যালেগ্রান্দেতে তাঁকে কবর দেওয়া হয়। ১৯৯৭ সালে কিউবার সান্তাক্লারায় নতুন স্মৃতিসৌধ করে তাঁকে সমাহিত করা হয়। চে গুয়েভারার লেখালেখি নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে ন’খন্ডের রচনাবলি। এসবই তিনি লিখেছেন ৩৯ বছরের জীবনে যার সিংহভাগই ব্যয় হয়েছে বিপ্লবে আর ভ্রমণে। মানুষের জাগরণে অনুপ্রেরণা হয়ে প্রতিদিনের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন চে গুয়েভারা।
সারা বিশ্বের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের বিপ্লব, বিদ্রোহ ও উত্থানের আরও শক্তিশালী সহযাত্রী হয়ে বারে বারে ফিরে এসেছেন, আসবেন চে গুয়েভারা। শোষণ, বৈষম্য ও পরিবর্তনের প্রতীক হয়ে বিশ্ববাসীর হৃদয় জুড়ে স্থায়ী আসন পেতে বসে আছেন চে গুয়েভারা।
চে গেভারা ১৯২৮ সালের আজকের দিনে (১৪ জুন) আর্জেন্টিনার রোসারিওতে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment