সুজিৎ চট্টোপাধ্যায়: কলকাতা, ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ২০২০ রবিবার দক্ষিণ২৪ পরগনার বারুইপুরের পরিমল কুঞ্জে শিশুদের পোশাক ও পরিচর্চা কারী বস্তুর বিপণী বেবীল্যান্ড এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ১৫ তম বেবী শো। বেবী শো সংস্থার প্রাণপুরুষ বিমান বিহারী দত্ত জানান, গত ১৫বছর ধরে তাঁর সংস্থা এই বেবী শো করছে। মূলত ভবিষ্যতের নাগরিক আজকের শিশুরা যদি না মানসিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থ না থাকে দেশ গঠনে সংকট সৃষ্টি হয়। তাছাড়া শিশুদের মায়েরাও যাতে সুস্থ থাকে সেটাও দেখা জরুরি। বেবী শো এর মাধ্যমে সেই সচেতনতা প্রচার করাই মূল উদ্দেশ্য। বেবীল্যান্ডের কর্তা বিমান বিহারী দত্ত জানান, ছ মাস থেকে চার বছর বয়সী শিশুদের প্রায় আড়াইশো শিশু এই বেবী শো তে অংশ নিয়েছে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃএ হাবিব। সেইসঙ্গে শিশুদের মায়েদের সচেতন করা হয় কিভাবে অপুষ্টির হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করা, প্রতিষেধক দেওয়া এবং শিশুরা ঠিকমত বেড়ে উঠছে কিনা খেয়াল রাখা এইসব বিষয়ে। বেবী শোর বিচারক ছিলেন বিখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃসুবীর পাল, ডাঃ সি এন পাল, ডাঃ শ্যামল দেবশর্মা ও ডাঃমনোনীত হালদার।
অনুষ্ঠান আয়োজকদের পক্ষে সুব্রত সরকার বলেন, আমরা শিশু ভালোবাসি। ভবিষ্যতের নাগরিকদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থ রাখাটা সামাজিক দায়িত্ব। আমরা সেই কাজ করছি।আমরা বেবিশোতে অংশগ্রহণের জন্য সব শিশুদেরই পুরস্কৃত করি। তবে যেহেতু প্রতিযোগিতা তাই প্রথম তিনটি পুরস্কারও নির্দিষ্ট থাকে। আমরা সেরা মাকেও পুরস্কৃত করি।
অনুষ্ঠানে আসেন হিন্দোল আরবান কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের স্বেচ্ছাসেবক প্লাস্টিক সার্জন ও অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ প্রশান্ত ভট্টাচার্য। তিনি বলেন বেবীল্যান্ডের কর্ণধার বিমান বিহারী বাবুর এই বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখে আমি আপ্লুত।
শিশুদের স্বাস্থ্য শিবির সঙ্গে বেবী শোর পাশাপাশি আমি ধন্যবাদ জানাবো মোট পঞ্চাশ জনের যে রম্প শো এর আয়োজন তার মুখ্য আকর্ষণ রেড লাইট এলাকার শিশুদের যোগদান। সমাজের মূল স্রোতে নিষিদ্ধ পল্লীর সমাজসেবী সংগঠন দূর্বারের সহযোগিতায় এই রেম্প শো এক বৈপ্লবিক পদক্ষেপ। অনুষ্ঠানে হাজির সমাজসেবী সংগঠন খড়দহ মনন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি র সম্পাদক লিপিকা জানান, গত বছর থেকে বেবী ল্যান্ডের এই বিশাল সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে সামান্য হলেও যুক্ত থাকছি। এবার প্রান্তিক শিশুদের ৪২ টি কম্বল প্রদান করা হলো আমাদের মননের তরফ থেকে। পেশাগতভাবে শিক্ষিকা লিপিকা নিজের জীবনকে জড়িয়ে নিয়েছেন শিশু কল্যাণের কাজে। সেখানেই তাঁর সবপেয়েছির তৃপ্তিসুখ।
বেবী ল্যান্ডের সুব্রত সরকার এবং ডাঃ প্রশান্ত ভট্ট্যাচার্য মনে করেন না আর্থিক দারিদ্রতার কারণে শিশু ও মায়েরা অপুষ্টিতে ভোগেন। তারা মূলত অজ্ঞতার কারণেই ভোগেন।
কিন্তু সমাজসেবামূলক কাজে শহুরে সমাজসেবীদের কাছে সঠিক তথ্য না থাকাটাও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠার অন্তরায় হয়ে উঠছে। জানা দরকার গ্রামীণ ভারতে অপুষ্ট শৈশবের অন্যতম কারণ দারিদ্র্য। অন্ধ্র প্রদেশে দুই শিশু অনাহারে দলা দলা মাটি খেতে মারা যায়। প্রশাসন মৃত্যুর প্রসঙ্গ কৌশলে ধামাচাপা দেয়। বারাণসীতে নিজের তিন শিশুকে খাদ্য দিতে অপারগ হওয়াতে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে।মধ্যপ্রদেশে অনাহার জনিত শিশু মৃত্যুর ভুরি ভুরি খবর আছে।
সি এন এন এস রিপোর্ট বলছে দু বছরের কম বয়সের শিশুদের অপুষ্টির অন্যতম কারণ দারিদ্র্য। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক স্বীকার করেছে পাঁচ বছরের নিচে ৩৫ শতাংশ শিশুর সঠিক বৃদ্ধি হয় নি। ১৭শতাংশ শিশু দিনে একবার আধপেটা খেতে পারে। পাঁচ বছরের নিচে প্রতি ৫ টি শিশুর মধ্যে একজন বয়স অনুযায়ী উচ্চতায় কম। প্রতি তিনজন শিশুর একজন বয়সের তুলনায় খর্বকায়। দুবছর আগে করা সমীক্ষা বলছে, দেশে পাঁচ বছরের নিচে থাকা প্রায় ৫৮ শতাংশ শিশু রক্তাপ্লতায় ভোগে। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে সাত কোটি শিশু। সঠিক ওজনের অভাব প্রায় সাড়ে চার কোটি শিশুর। অপুষ্টির কারণে এদের মস্তিষ্কের পূর্ণ বিকাশ ঘটে না ।
এবার দেখা যাক মায়েদের সম্পর্কে হু কি বলছে? হু র রিপোর্ট বলছে, বিশ্বে ১৫ থেকে ৪৯ বয়সী ৬১কোটি মহিলা রক্তাপ্লতায় ভোগেন।
২০১৭তে গ্লোবাল নিউট্রিশন রিপোর্ট বলছে,অপুষ্টির তালিকাতে ভারত সবার নিচে। হু বলছে, অস্বচ্ছল আর্থ- সামাজিক কারণ দায়ী।দেশের ২৭ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে থাকায় মা ও শিশু অপুষ্টির শিকার। এই প্রতিবেদক এই সংস্থা ও সমাজসেবী ডাক্তারদের ইতিবাচক ভূমিকার প্রশংসা করে। কিন্তু মা ও শিশুদের অপুষ্টির অন্যতম কারণ যেমন অজ্ঞতা তেমনই দারিদ্রতাও যে এক গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটা অস্বীকার করার কারণ কি বুঝতে উঠতে পারেনি।
Be First to Comment