নিজস্ব প্রতিনিধি : কলকাতা, ২ জুন ২০২৪।দেশীয় শিক্ষার বদলে ১৮৩৫ সালে এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষাপদ্ধতি চালু করেন লর্ড ম্যাকলে। কিন্তু তাতে ভারতীয় দর্শন শিক্ষায় কখনও ভাঁটা পড়েনি।এরপর ১৮৯৩ সালে শিকাগো ধর্মসভায় হিন্দুধর্মের সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ, ব্রাহ্মধর্মের প্রতিনিধি প্রতাপচন্দ্র মজুমদার, জৈনধর্মের প্রতিনিধি বীরচাঁদ গান্ধী ও বৌদ্ধধর্মের প্রতিনিধি অনাগরিক ধর্মপালের (শ্রীলঙ্কা) মাধ্যমে সারা বিশ্ব নতুন করে জানতে পারে ভারতীয় দর্শনের গভীরতা। এরপর বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হতে শুরু করে ভারতীয় দর্শন।
মার্গারেট নোবেল (ভগিনী নিবেদিতা), মিরা আলফাঁসা (শ্রীমা), রোমাঁ রোলাঁ, ম্যাক্সমুলালের মতো বিদেশিরা কেউ এদেশে এসে আবার কেউ নিজের দেশে ভারতীয় দর্শনের শিক্ষাও শুরু করেন। প্রায় পাঁচশো বছর আগে ভক্তির যে ধারা প্রচার করেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, সেই ধারাও এগিয়ে যেতে থাকে ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী প্রভুপাদের হাত ধরে, যাঁর নিজস্ব গ্রন্থাগার এখন ভারতীয় দর্শনের আকর। এদেশের বৈষ্ণব দর্শনকে বিদেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন এসি ভক্তি বেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ, ইসকনের মাধ্যমে।
ভারতীয় দর্শনের ঐতিহ্য ও বিভিন্ন ধারা তুলে ধরার পাশাপাশি সারা বিশ্ব জুড়ে ভারতীয় দর্শনের সেই চর্চাকে এবার নতুন করে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিল কলকাতার ভক্তি বেদান্ত রিসার্চ সেন্টার। একদিকে ভারতের ধ্রুপদী দর্শন আর উল্টোদিক থেকে এসে মেশা পাশ্চাত্য দর্শনের ধারা। পাশাপাশি এদেশের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা ও সেগুলির সংরক্ষণের দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছে এই প্রতিষ্ঠান।
এবার নতুন প্রজন্মকে দর্শনের পাঠ দিতে তারা শুরু করল ধ্রুপদী ভারতীয় দর্শন ও পাশ্চাত্য দর্শনের উপর কর্মশালা ও অডিও ভিস্যুয়াল অনলাইন কোর্স, যেখানে ক্লাস নিচ্ছেন গোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কোশি থ্রাকান, আইআইআইটি নিউ দিল্লির অধ্যাপক নিষাদ পট্টনায়ক,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ টেনেসির অধ্যাপক ইথান মিলস,নরওয়ের ইউনিভার্সিটি অফ বার্গেনের অধ্যাপক নুট এক্সেল জ্যাকবসেন, কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এন তিওয়ারি, লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাকেশ চন্দ ও হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিএ টমির মতো দর্শনশাস্ত্রে বিশেষজ্ঞরা।
কোর্স কো-অর্ডিনেটর তথা বরীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য নির্মাল্য নারায়ণ চক্রবর্তী বলেন, কলকাতায় ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টারের দর্শন ও পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ কেন্দ্রে ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে দুটি কোর্স সম্পন্ন হয়েছে। যেগুলি বর্তমানে ‘বিআরসি গ্লোবাল’ ইউটিউবে বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। খুব শীঘ্রই ভারতীয় এবং পাশ্চাত্য দর্শনের উপর আরও কয়েকটি কোর্স শুরু হবে। তিনি বলেন,দর্শন শাস্ত্র নিয়ে যাঁরা গবেষণা করছেন, দেশবিদেশ থেকে মূলত তাঁরাই সরাসরি ও কেউ অনলাইনের মাধ্যমে এই কর্মশালায় যোগ দিচ্ছেন। তাঁদের লক্ষ্য ভারতীয় ধ্রুপদী দর্শনের ঐতিহ্য ও চর্চাকে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ফিরিয়ে আনার।
ভক্তিবেদান্ত রিসার্চ সেন্টারের ডিন সুমন্ত রুদ্র বলেন, কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা যেমন এখান থেকে ভারতীয় দর্শনের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারছেন, একই সঙ্গে সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে।
Be First to Comment