বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, সরযূবালা সোম ও আশুতোষ সোমের কন্যা ঢাকার রানু সোমই উত্তরকালে বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট কথাশিল্পী প্রতিভা বসু। প্রতিভা বসু ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার, প্রাবন্ধিক ও সংগীত শিল্পী।
পারিবারিক পরিচয়ে তিনি বুদ্ধদেব বসুর স্ত্রী। তাঁর বাবার নাম আশুতোষ সোম ও মায়ের নাম সরযূবালা সোম। বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে বিবাহের আগে তিনি রাণু সোম নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর দুই মেয়ে মীনাক্ষী দত্ত ও দময়ন্তী বসু সিং এবং এক ছেলে শুদ্ধশীল বসু। শুদ্ধশীল বসু মাত্র ৪২ বছর বয়সে মারা যান। প্রতিভা বসুর দৌহিত্রী কঙ্কাবতী দত্তও একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক। প্রতিভা বসু পশুপ্রেমী ছিলেন।
প্রতিভা বসু প্রথম যৌবনে সংগীতশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। তিনি দিলীপকুমার রায়, কাজী নজরুল ইসলাম, হিমাংশু দত্ত ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে গান শেখেন। রাণু সোম নামে তাঁর একাধিক গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। ১২ বছর বয়সে প্রথম তিনি গ্রামাফোন ডিস্কে রেকর্ড করেন। ১৯৪০ সাল পর্যন্ত তিনি সংগীতজগতে ছিলেন। বিবাহের পর তিনি গান ছেড়ে সাহিত্যের জগতে চলে আসেন। বাংলা ভাষায় অনন্য অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভুবনমোহিনী স্বর্ণপদক লাভ করেন। এছাড়াও, সাহিত্যকর্মে সবিশেষ অবদানের জন্য আনন্দ পুরস্কারে ভূষিত হন। প্রতিভা বসুর প্রথম ছোটগল্প ‘মাধবীর জন্য’ প্রকাশিত হয় ১৯৪২ সালে এবং প্রথম উপন্যাস ‘মনোলীনা’ প্রকাশিত হয় ১৯৪৪ সালে। উপন্যাস, ছোটোগল্প, প্রবন্ধ ও শিশুপাঠ্য রচনা সহ তিনি শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।
তিনি ‘ছোটগল্প’ ও ‘বৈশাখী’ নামে দুটি পত্রিকাও সম্পাদনা করতেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল — মনোলীনা, সেতুবন্ধ, সুমিত্রার অপমৃত্যু, মনের ময়ূর, বিবাহিতা স্ত্রী, মেঘের পরে মেঘ, মধ্যরাতের তারা, সমুদ্রহৃদয়, বনে যদি ফুটল কুসুম, সমুদ্র পেরিয়ে ইত্যাদি।ছোটোগল্প– মাধবীর জন্য, বিচিত্র হৃদয়, প্রতিভা বসুর শ্রেষ্ঠ গল্প ইত্যাদি। তাঁর আত্মজীবনী ‘জীবনের জলছবি’৷ জীবনের শেষ পর্বে লিখেছেন অসাধারণ একটি বই ‘মহাভারতের মহারণ্যে’৷ স্বনামধন্য সাহিত্যিক ও প্রতিভাময়ী সংগীত শিল্পী প্রতিভা বসু ২০০৬ সালের ১৩ অক্টোবর পরলোকগমন করেন।
প্রতিভা বসু ১৯১৫ সালের (১৩ মার্চ) বাংলাদেশের বিক্রমপুরের হাসড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment