——–জন্মদিনে স্মরণঃ সংগীতজ্ঞ সুধীন দাশ——
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, উপমহাদেশের বিখ্যাত সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ ও গবেষক ছিলেন সুধীন দাশ। বাংলাদেশে সঙ্গীতে যাদের বিশেষ অবদান রয়েছে সুধীন দাশ তাদের অন্যতম। সঙ্গীতের প্রতিটি শাখায় তিনি সদর্পে বিচরণ করে নিজেকে সঙ্গীতের একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। লালনগীতির ক্ষেত্রে সুধীন দাশের অবদান সর্বজন স্বীকৃত। তিনিই প্রথম লালনগীতির স্বরলিপি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। সুধীন দাশ জীবনের পুরোটাই দিয়েছেন গানের পেছনে। গান গেয়েছেন, সুর করেছেন, কাজ করেছেন সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে, গবেষণা তো বটেই। বাংলা গানের ধ্রুবতারা কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টিকে শ্রোতার কাছে শুদ্ধরূপে পৌঁছে দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজটি তিনিই করেছেন। সুধীন দাশের বাবা নিশিকান্ত দাশ ও মা হেমপ্রভা দাশ। বড় ভাই সুরেন দাশের কাছেই তাঁর সঙ্গীতের হাতেখড়ি। তারই অনুপ্রেরণায় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম। ১৯৪৭ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ার সময় রেডিওতে অডিশন দেন সুধীন দাশ। ১৯৬৫ সাল থেকে যুক্ত হন টেলিভিশনের সঙ্গে।
বাংলা গানকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে তার অবদান অসীম। তার বিশেষত্ব হচ্ছে নজরুল সঙ্গীতের আদি গ্রামোফোন রেকর্ডের বাণী ও সুর অনুসারে স্বরলিপি গ্রন্থ লেখা। এ পর্যন্ত নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে ১৬টি ও নজরুল একাডেমি থেকে ৫টি সহ মোট ২১ খণ্ডের নজরুলের গানের স্বরলিপি গ্রন্থ বের করেছেন তিনি। কিংবদন্তি এই শিল্পী ১৯৮৮ সালে একুশে পদক পেয়েছেন। এছাড়া পেয়েছেন বহু পুরস্কার, সম্মাননা। মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার আজীবন সম্মাননা, রাইটার্স ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সম্মাননা, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পদক, নজরুল পদক পান তিনি। ২০০৮ সালে বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ লাভ করেন তিনি। ‘সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক এওয়ার্ড-এ আজীবন সম্মাননা দেয়া হয় এই কিংবদন্তি সঙ্গীতজ্ঞ সুধীন দাশকে।
বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন সুধীন দাশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স-মাস্টার্স পরীক্ষার পরীক্ষক, বেতার-টেলিভিশনের গ্রেডেশন বোর্ডের প্রধান বিচারক, বাংলা, স্বরলিপি প্রমাণীকরণ পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
এই মহান শিল্পী ২৭ জুন ২০১৭ সালে ৮৭ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
সুধীন দাশ ১৯৩০ সালের আজকের দিনে (৩০ এপ্রিল) কুমিল্লার বাগিচাগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment